1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার মানবধিকারের একটি অংশ

১৫ নভেম্বর ২০১০

পানির অপর নাম জীবন৷ অথচ বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ থেকে পৃথিবীর প্রায় ৮৮ কোটি মানুষ বঞ্চিত৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর স্পষ্ট জানিয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার মানবাধিকারেরই অংশ৷

https://p.dw.com/p/Q8ae
বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ আজও দূর অস্তছবি: AP

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে বিশুদ্ধ পানি পান করার, প্রতিদিন ব্যবহার করার৷ তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনীতিকদের সদিচ্ছা৷

‘‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেন বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারে কারণ তা মানবাধিকারেরই একটি অংশ৷ নিশ্চিন্ত মনে তারা পানি পান করবে কোন ধরণের আশংকা বা ভয় ছাড়া৷ সুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাব ব্যবহারের জন্য তারা যেন প্রতিদিন পানি পায় সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ এছাড়া প্রতিটি মানুষ যেন স্বাস্থ্যসম্মত, পরিস্কার টয়লেট ব্যবহার করতে পারে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে৷ শুধু বাড়িতে এই সুযোগ-সুবিধা থাকলে চলবে না৷ অফিস-আদালতসহ স্কুলেও এই ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ প্রতিদিনই যেন প্রতিটি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংস্পর্শে আসে তা নিশ্চিত করা জরুরি৷'' কথাগুলো বলেন জাতিংঘের পানি দপ্তরের মানবধিকার কর্মী কাটারিনা দো আলবুকার্ক৷ তিনি পানি বিশেষজ্ঞ৷ জাতিসংঘের মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি হল প্রতিটি মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া, তা নিশ্চিত করা৷ তবে এই বিশুদ্ধ খাবার পানির থেকে পৃথিবীর ৮৮ কোটিরও বেশি মানুষ বঞ্চিত৷

Catarina de Albuquerque
জাতিংঘের পানি দপ্তরের মানবধিকার কর্মী কাটারিনা দো আলবুকার্কছবি: Inga Winkler

বিশ্বের এক তৃতীয়ংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার থেকে বঞ্চিত

কাটারিনা দো আলবুকার্ক অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন৷ তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল নিজ দেশের মানুষের জন্য কাজ করা৷ তাদের উন্নত জীবন-যাপন নিশ্চিত করা৷ জাতিসংঘের একটি সমীক্ষায় জানানো হয়েছে সারা বিশ্বে ৮৮ কোটিরও বেশি মানুষ খাবার পানি পাচ্ছে না৷ এর তিনগুন মানুষ বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার থেকে বঞ্চিত৷ তারা টয়লেট ব্যবহার করছে না৷ খোলা জায়গা বা ঝোপ-ঝাড় ব্যবহার করছে৷ এর মারাত্মক ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরেন জাতিসংঘে বলিভিয়ার প্রতিনিধি পাবলো সোলন৷ সোলন জানান,‘‘ বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব এবং স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার না করার ফলে অসংখ্য অসুখ-বিসুখের মুখে পড়ছে সাধারণ মানুষ৷ এর অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে৷ একটি যুদ্ধেও এত মানুষ মারা যায়না৷ পাঁচ বছরের নীচে কোন শিশুই ডায়রিয়া সহ্য করতে পারে না৷ কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ওদের কেড়ে নেয় মৃত্যু৷ পানির অভাবে যত শিশু প্রতিদিন মারা যায় – এইডস, ম্যালেরিয়া এবং হামেও এত শিশু মারা যায় না৷''

এছাড়া এসব অসুখ নিয়ে যেসব শিশু বেঁচে থাকে ওরা সারক্ষণই নানা ধরণের সংক্রামিত এবং পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত থাকে৷ বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার না করতে পারা দারিদ্র্যের লক্ষণ৷ জানান কাটারিনা দো আলবুকার্ক৷ তিনি আক্ষেপের সঙ্গে জানান,‘‘ একটি শিশু যখন সারাক্ষণই অসুস্থ থাকে তখন শিশুটিকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয় না৷ একটি অসুস্থ শিশু এভাবে শিক্ষা ছাড়া বড় হলে কীভবে একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে? কর্মসংস্থানের কোন সুযোগও এরা পায়না৷''

এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ

আলবুকার্ক জানান, বাংলাদেশ স্বাস্থসম্মত টয়লেট ব্যবহারে অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে৷ অসংখ্য সমস্যা এবং চরম দারিদ্র্যের মাঝেও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ৷ পাঁচ ডলার খরচ করতে রাজি হয়েছে দেশের অত্যন্ত দরিদ্র সাধারণ মানুষরা৷ এদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে দেশের সরকার৷ আলবুকোয়ের্কের উচ্ছাস, ‘‘ তাঁরা সত্যিকার অর্থেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করছে৷ কয়েক বছর আগেও সারা দেশে প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ যেখানে টয়লেট ব্যবহারের সঙ্গে পরিচিত ছিল না এখন সেখানে মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার থেকে বঞ্চিত৷ এটা সত্যিই আমাদের জন্য বিশাল এক সাফল্য৷ কারণ, রাষ্ট্র নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে মানুষকে সচেতন করার৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি এই বিষেয়র দিকে নজর দেবেন৷''

তবে মরুভূমির দেশগুলোতে পানি সহজলভ্য নয়৷ মিশরের উদাহরণ দিয়ে আলবুকার্ক বললেন, ‘‘ মিশর মরুভূমির দেশ৷ সেখানে পানি নেই৷ কিন্তু তারপরেও সেখানে সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছে সরকার৷ এর অর্থ এই নয় যে সবাই পানি ব্যবহার করছে বরং সবাই ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় এবং যথেষ্ট পানি পাচ্ছে৷ কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ৭০ শতাংশ পানি, বিভিন্ন কলকারখানায় ২০ শতাংশ এবং বাকি ১০ শতাংশ ব্যবহার করছে মানুষ, প্রতিদিনের কাজে৷ এই ১০ শতাংশের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হচ্ছে আর বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে সুইমিংপুল এবং হোটেলের মত জায়গা৷''

আসল কথা হল সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে৷ প্রতিটি সরকারকেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবহারের দিকে দিতে হবে৷ ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছে, এর অর্থ হল আমার দেশ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছে, এখানে পানির অভাব নেই'– এই বোধটি থাকতে হবে৷ মানবাধিকার এভাবেই অর্জিত হবে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক