বিমান চলাচল শুরু, অপেক্ষমান যাত্রীদের ভীড়
২১ এপ্রিল ২০১০আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে গত কয়েকদিন ধরে বিমান বন্দরগুলো অচল হয়ে পড়েছিল৷ গত ছয়দিনে কমপক্ষে ২৮ হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান সংস্থাগুলো৷ অবশেষে মঙ্গলবার থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে৷ জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে মঙ্গলবার অল্প কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে দেশটির সরকারি বিমান সংস্থা লুফৎহান্সাকে৷ এছাড়া দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান সংস্থা এয়ার বার্লিনও ফ্লাইট চালু করেছে বলে তারা জানিয়েছে৷ তবে এসব ফ্লাইটগুলোই ছিল ভিস্যুয়াল ফ্লাইট৷ অর্থাৎ মাটি থেকে তিন হাজার মিটারের উচ্চতায় বিমান চালাতে হয়েছে পাইলটদের৷ এর বাইরে বুধবার পর্যন্ত জার্মানি সবধরণের বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে৷
অন্যদিকে, ব্রিটেনের সবগুলো বিমান বন্দর মঙ্গলবার রাত থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে৷ ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমান বন্দর হিথ্রো আবারও সচল হয়ে উঠেছে বিমান ওঠা নামার মধ্য দিয়ে৷ যাত্রীদের আসা-যাওয়াও শুরু হয়েছে৷ ফ্রান্সের বিমান সংস্থা এয়ার ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা বুধবারের মধ্যেই সব ফ্লাইট পুরোপুরি চালু করবে৷ এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দেশ তাদের বিমান বন্দর চালুর কথা জানিয়েছে৷ তবে এখন পর্যন্ত ডেনমার্ক, সুইডেন এবং আয়ারল্যান্ড সতর্কতার জন্য বিমান বন্দর চালু করেনি৷
টিকেট পেতে মরীয়া যাত্রীরা
তবে বিমান চলাচল শুরু হলেও ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে বেশ এলোমেলো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ বাতিল হওয়া হাজার হাজার ফ্লাইটের সময় নির্ধারণ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিমান সংস্থাগুলোকে৷ রানওয়েগুলোতেও সৃষ্টি হয়েছে জটের৷ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইলি ওয়ালশ জানিয়েছেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পুরোপুরি ফিরে যেতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে৷ আরেক বিমান সংস্থা ইজি জেট জানিয়েছে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে দিন কয়েক লাগবে এবং নির্ধারতি ফ্লাইট দেরি হওয়াটা স্বাভাবিক৷ এদিকে বিমান চলাচল চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রীদের মধ্যেও তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বিমানের আসন পাওয়ার জন্য৷ গত কয়েকদিন বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ইউরোপের অনেক যাত্রীই সড়ক পথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দিয়েছেন৷ কিন্তু এই সুযোগে বাস ও ট্যাক্সির ভাড়াও হয়ে গেছে আকাশচুম্বি৷ তাই অনেকেই বিমানের টিকেট পেতে মরীয়া হয়ে উঠেছেন৷
ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন
এদিকে, আগ্নেয়গিরির ফলে সৃষ্ট ছাইমেঘ পুরোপুরি দূর হওয়ার আগেই বিমান চলাচল কতটা নিরাপদ সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ এই ব্যাপারে জার্মানির কর্তৃপক্ষ সোমবার যে পরীক্ষা চালিয়েছে তার ফলাফল এখনও জানা যায়নি৷ বড় বড় বিমান সংস্থাগুলো যদিও দাবি করছে যে তারা বিমান চালানোর সময় তেমন কোন সমস্যার মধ্যে পড়েনি৷ তবে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ছাইমেঘের কারণে ন্যাটোর এফ-১৬ জঙ্গি বিমানের ইঞ্জিনে তারা সমস্যা দেখতে পেয়েছেন৷ কিন্তু এরপরও বিমান সংস্থাগুলো তাদের আর্থিক ক্ষতি সামলে উঠতে মরিয়া৷ তাই পাইলটরা না চাইলেও তাদের ঝুকি নিয়েই ফ্লাইট চালাতে হবে৷ জার্মানির পাইলটদের সংস্থা ককপিট এর মুখপাত্র ইউয়ের্গ হান্ডবের্গ বলেন, ‘এখন বিষয়টি পুরো পাইলটদের কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে- যেটা আমি সঠিক বলে মনে করছি না৷ আইনগতভাবে যে কেউ বলতে পারে যে আমি বিমান চালাবো না৷ কিন্তু আপনার মালিক যদি বলে বিমান চালাতে আর আপনি না চালান তাহলে হয়তো পরবর্তিতে চাকরিটা হারাতে হবে৷'
উল্লেখ্য, বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলোর মতে গত কয়েকদিনে বিমান সংস্থাগুলোর দৈনিক আড়াইশ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতি হয়েছে৷ বিমান বন্দর চালু করতে দেরি করায় অনেকে দেশের সমালোচনাও করেছে বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলো৷ তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার সময়ও এতটা খারাপ পরিস্থিতিতে তাদের পড়তে হয়নি৷
প্রতিবেদক: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার