বিপাকে সুমি আবেদীন
২১ জুন ২০১৩মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ‘চার্জ টু্ উইন অ্যান্ড মেকিং চেঞ্জ অ্যাট ওয়ালমার্ট' এপ্রিলের ৬ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ে ক্যাম্পেইন চালায় নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর এবং প্রতিষ্ঠানে৷ তাদের এই ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাজরীন ফ্যাশানস-এ আহত এবং নিহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়৷ এই ক্ষতিপূরণ তারা চেয়েছে প্রধানত ওয়ালমার্টের কাছ থেকে৷
ক্যাম্পেইনে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের ঘটনায় আহত সুমি আবেদীনকে (১৭) সামনে দিয়ে আসা হয়৷ সুমির সঙ্গে সেখানে আরো ছিলেন শ্রমিকনেত্রী ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটি'-র প্রধান নির্বাহী কল্পনা আক্তার৷
সুমি আবেদীন জানান যে, ক্যাম্পেইন চালিয়ে দেশে ফিরে আসার পর দেড় মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে৷ কিন্তু এখনও তিনি বা তাঁর কোনো সহকর্মী কোনো ধরণের সহায়তা পাননি৷ সুমি জানান, ২৪শে নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের ঘটনার সময় তিনি চার তলায় কাজ করছিলেন৷ আগুন লাগার পর তিনি তিন তলায় নেমে পিছনের জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণে বাঁচেন৷ লাফিয়ে পড়ায় তাঁর ডান পা ও দু'হাত ভেঙে যায়৷ এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি৷ হাঁটা-চলা করতে কষ্ট হয়৷ এরপরেও এই অসুস্থ অবস্থায়তেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ক্যাম্পেইনে অংশ নেন৷ সেখানে তাঁকে মন্ত্রীসহ পদস্থ লোকজনের সামনে কথা বলতে হয়৷ কথা বলেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও৷ সকলের কাছেই তিনি ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন৷ তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়গুলি৷
কিন্তু আজও কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি তাজরীন ফ্যাশানস-এর আহত ও নিহতের প্ররিবারের সদস্যরা৷ সুমি আবেদীন জানান, তিনি এখনও আশুলিয়ায় তাঁর বাবা-মা ও ভাই-বোনের সঙ্গে আগের বাসাতেই থাকেন৷ সরকারের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা সহায়তা ছাড়া কোনো সহয়তা পাননি তিনি৷ সেই টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন তাঁর পক্ষে চিকিত্সা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷ তার ওপর এখন শুরু হয়েছে উল্টো ঝামেলা৷ তাঁর সহকর্মীরা ভাবছেন যে সুমি অ্যামেরিকা থেকে অনেক টাকা নিয়ে এসেছে৷ কিন্তু বাস্তবে সেখান থেকে তিনি একটি টাকাও সহায়তা পাননি৷
প্রতিদিন সুমির সহকর্মীরা তাঁর বসায় আসেন৷ জানতে চান তারা কোনো সহযোগিতা পাবে কিনা৷ তাদের জন্য কোনো টাকা-পয়সা আসবে কিনা৷ এ সবের কোনো জবাব দিতে পারেন না সুমি৷ তিনি শুধু জানান যে, সহযোগিতা পেলে সবাই পাবেন৷ তবে তিনি জানেন না আদৌ অ্যামেরিকা থেকে তাদের জন্য কোনো সহযোগিতা আসবে কিনা৷
সুমি জানান, গার্মেন্টস আবার চালু হবে কিনা তাও জানেন না তিনি৷ এছাড়া, তিনি কোথায় কাজ পাবেন তারও নিশ্চয়তা নেই৷ আর তিনি কবে পুরোপুরি সুস্থ হবেন, তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি৷
‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটি'-র প্রধান নির্বাহী শ্রমিকনেত্রী কল্পনা আক্তার ডয়চে ভেলেকে জানান, সুমিকে নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাম্পেইন চালালেও ওয়ালমার্ট ক্ষতিপূরণের কোনো আশ্বাস এখনও দেয়নি৷ তবে লিয়াং ফা আহত ও নিহত শ্রমিকদের মাথা পিছু ১ লাখ টাকা করে অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ আর ফিয়ান ডে তিন মাসের বেতনের সমপরিমাণ আর্থিক সহায়তা এবং চিকিত্সা সহায়তার কথা বলেছে৷ তবে বাস্তবে এখনও কোনো সহায়তাই পাওয়া যায়নি৷
গত বছরের ২৪শে নভেম্বর সাভারের অশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুন লেগে ১১৭ জন শ্রমিক নিহত হন৷ আহত হন আরো দুই শতাধিক৷