বিনাবেতনে শিক্ষা কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচনেও সহায়ক
১৯ নভেম্বর ২০১০আঞ্জু আকতারের বয়স দশ বছর৷ থাকে রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেতের এক বস্তিতে৷ ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সে ভর্তি হয় খিলক্ষেতের কুর্মিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ তারপর থেকে আজ অবধি একদিনের জন্যও স্কুলের কোনো ক্লাস বাদ দেয়নি আঞ্জু৷ কিন্তু বাংলাদেশ সরকার যদি বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ না দিতো, তাহলে তার মতো হতদরিদ্র শিশুরা পড়াশুনা করার সুযোগ পেতোনা৷ আর আঞ্জুর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেতো৷
কুর্মিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন পনেরো জন৷ তাঁদের মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষিকা ফিরোজা খানম৷ তিনি বললেন, ‘‘এত বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হচ্ছে যে, আমাদের উপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি হচ্ছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘নব্বই শতাংশের বেশি ছাত্র-ছাত্রী আসছে গরিব পরিবার থেকে, যারা এখন বুঝতে পারছে বিনাবেতনে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করালে ভবিষ্যতে তাদের লাভ হতে পারে৷''
বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে পঁয়তাল্লিশ শতাংশই দরিদ্র৷ আর তারাই দেশটির অবৈতনিক শিক্ষার প্রধান সুবিধাভোগী৷ উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘‘অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অর্জন যেমন, ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া শিশুদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা, ২০২১ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফ্রি কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার মতো বিষয়গুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করছে৷''
বর্তমানে সরকার প্রতিবছর ষাট থেকে সত্তর হাজার মার্কিন ডলার খরচ করছে ছয় থেকে দশ বছর বয়েসি এইসব শিশুর শিক্ষার পেছনে, যাদের সংখ্যা প্রায় এককোটি আশি লাখ৷ সরকারের পাশাপাশি বেশ কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও প্রাইমারি স্কুল চালাচ্ছে৷ ১৯৯০ দশকের গোড়া থেকে এনজিও চালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা চারগুন বেড়ে গেছে৷ দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের অংশ এখন আট দশমিক পাঁচ শতাংশ৷
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক