1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে সৌরজাতির স্বপ্ন

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০

আন্তর্জাতিক জ্বালানি কাউন্সিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪ হাজার কোটি ডলার৷ সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ বছরে বেড়েছে ৬ গুণ, আর বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় পৌনে দুইশ গুণ৷

https://p.dw.com/p/PLVm
সৌর বিদ্যুত উৎপন্ন হচ্ছেছবি: ISFOC

উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে থাকলেও, সৌর বিদ্যুতের জনপ্রিয়তা বেশি বেড়েছে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ বিশেষভাবে চীন, ভারত ও বাংলাদেশে৷ এবার বাংলাদেশ দেখছে সৌর জাতি গড়ার স্বপ্ন৷

রাতে ঘুম ভালো হচ্ছিলো না কেরামত আলীর৷ ঢাকার মগবাজারে একটি ছোট্ট বাসায় থাকেন তিনি৷ একদিকে গুমোট গরম, অন্যদিকে বিদ্যুতের যাওয়া আসার খেলা৷ হাতের তালপাতার পাখাটি জোরে জোরে দুলিয়েও কোন বাতাস পাওয়া যায়নি৷ ফলে কোনোমতে চোখ বুজে ছিলেন৷ সকালে আধোঘুম যখন ভাঙলো, তাকিয়ে দেখলেন ... না ছাদের সঙ্গে ঝোলানো পাখাটি দুলছে না... মন খারাপ হলো কেরামত আলীর৷

Palästina Solar Solaranlage Windkraft Mini-Windrad Flash-galerie
ফিলিস্তিনের একটি গ্রামে সৌর প্যানেলছবি: AP

এবার চলুন সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রামে৷ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি৷ দিপা চাকমা মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছেন৷ অনেকখানি পথ হাঁটতে হাঁটতে তিনি ক্লান্ত৷ ঘরে ঢুকেই সুইচটি টিপে দিলেন৷ চালু হয়ে গেলো ফ্যানটি৷ আহা কি আনন্দ!

আগেই বলেছি কেরামত আলী থাকেন ঢাকায়৷ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে তিনি বিদ্যুৎ পান৷ আর দিপা চাকমার বাড়ির সংযোগ জাতীয় গ্রিড থেকে নয়, আসে সৌর বিদ্যুৎ থেকে৷ একটি এনজিওর মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন এই প্যানেল৷ মাসে মাসে পরিশোধ করছেন এই সৌর প্যানেলের দাম৷

ইউরোপের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সংগঠন ইপিআইএ জানিয়েছে, ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে ৪৪ ভাগ৷ সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াট৷ এর মধ্যে গত বছরেই বেড়েছে ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট৷ এবছরও বিশ্বে সৌরবিদ্যুতে প্রবৃদ্ধি হবে ৪০ শতাংশের বেশি৷ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের তালিকাতেও দেশ হিসেবে শীর্ষে আছে জার্মানি৷

বাংলাদেশের সৌর বিদ্যুৎ আন্দোলনের অন্যতম যে ব্যক্তি তার নাম দিপাল চন্দ্র বড়ুয়া৷ গ্রামীন শক্তির সাবেক প্রধানের এখন নিজের প্রতিষ্ঠান, নাম ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশন৷ তাঁর মতে সৌর বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি দেশ৷ কারণ এখানে বছরে তিনশো দিনেরও বেশি রোদ থাকে৷ তিনি দেখছেন এক সৌর জাতির স্বপ্ন৷ দিপাল চন্দ্র বড়ুয়া বললেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে সৌর বিদ্যুৎ৷ তিনি বলেন, প্রতি মাসে বাংলাদেশে ৩০ হাজার সৌর প্যানেল বিক্রি হচ্ছে৷ সরকার এবং তাদের পরিকল্পনা হল সাড়ে সাত কোটি মানুষকে সৌর বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা৷ আর তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তব হতে হয়তো সময় লাগবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত৷ এই সময়ের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতের বিপ্লবটি বাস্তবায়িত হবে বলেই তাঁর আশা৷ এখন সেই কাজ শুরু হয়ে গেছে, বললেন দিপাল চন্দ্র বড়ুয়া৷

কৃষির বিকাশে সৌর বিদ্যুতে সেচ পাম্প চালানো হচ্ছে বাংলাদেশে৷ নওগাঁর সাপাহারে স্থাপন করা ১১.২ কিলোওয়াটের একটি সেচ পাম্প প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ লিটার পানি সেচ করতে পারে৷ সেচ পাম্প চলছে যশোরের বানিয়ালিতে৷

বিদ্যুৎ উৎপাদনে চাহিদা এবং তার সাথে পাল্লা দিতে না পারায় ক্রমবর্ধমান ঘাটতিতে দেশ যখন ভয়াবহ সংকটে তখন সৌর বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তার দিকটি আলোচিত হচ্ছে জোরেশোরে৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল৷ সম্প্রতি নিজেদের ছাদে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর প্যানেল স্থাপন করে চমক দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ গ্রাম থেকে সৌর বিদ্যুৎ এবার ঢাকায়৷

সৌরশক্তির বিদ্যুত প্লান্ট এর দাম গত কয়েক বছরে কিছুটা কমলেও এখনও তা সাধারণের নাগালের বাইরে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় এটা ব্যবহার করাও ব্যয়সাধ্য৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী