পে স্কেলের জন্য অর্থমন্ত্রী দায়ী?
১২ জানুয়ারি ২০১৬নতুন ‘পে স্কেল' ঘোষণার পর পরই বাংলাদেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার প্রতিবাদ করেন৷ পরবর্তীতে কর্মবিরতিতে যাওয়ার আগে গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পদত্যাগও দাবি করেন তাঁরা৷ তাঁদের কথায়, অর্থমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অপমান করেছেন এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বলে নিজ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দিয়েছেন৷ অর্থাৎ নতুন পে স্কেলে তাদের অবনয়ন করা হয়েছে৷ তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগের বেতন স্কেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের শতকরা ২৫ ভাগ গ্রেড-১'এ ছিলেন৷ এখন অধ্যাপকরা গ্রেড-৩৷ এটা সুস্পষ্টভাবেই অপমান এবং অবনয়ন৷ শুধু তাই নয়, মাত্র ২৫ ভাগ অধ্যাপককে গ্রেড-২ এবং তার ২৫ ভাগকে গ্রেড-১'এ নেয়ার বিধান করা হয়েছে, যেটা করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন৷ এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়ত্বশাসনের ওপর আঘাতও বটে৷''
কিন্তু এর জন্য অর্থমন্ত্রীকে কেন দায়ী করা হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শফিউল আলম বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে যে, নতুন পে স্কেলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিফলিত হয়নি৷ ওদিকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মন্ত্রিসভায় পে স্কেল এবং পরিপত্র অনুমোদন করা হয়েছে৷ আসলে এটা ঠিক নয়৷ মন্ত্রিসভা এটা অনুমোদন করেনি৷ এটা অর্থমন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে হয়েছে৷ আর এ কারণেই আমরা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছি৷''
একই বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমরা এতদিন অহিংস আন্দোলন করেছি৷ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের৷ আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো না৷ আমরা কোনোভাবেই আমাদের অবমাননা মেনে নেব না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের নিয়ে অবমাননাকর কথা বলা হচ্ছে৷ এর জন্য অর্থমন্ত্রী দায়ী৷ তাঁকে এ দায় স্বীকার করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো ঘোষণা করতে হবে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার জেনেছি প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পে স্কেল করতে বলেছেন, সেভাবে করা হয়নি৷ অর্থমন্ত্রী তাঁর হটকারি সিদ্ধান্তে এই পে স্কেল ঘোষণা করেছেন৷ শুধু আমরা নয়, আরো অনেকেই এই পে স্কেলে ক্ষুব্ধ৷''
অধ্যাপক ড. সফিউল আলমের কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই৷ কিন্তু অর্থমন্ত্রী এবং কিছু আমলা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সঠিক তথ্য গোপন করছেন৷''
এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কোনো মন্তব্য অবশ্য জানা যায়নি৷ তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার পর অর্থমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘শিক্ষকরা না বুঝে আন্দোলন করছেন৷ তাঁরা যা চাচ্ছেন, তা আমার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই৷''
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার এক সমাবেশে বলেছেন, ‘‘শিক্ষকরা নতুন পে স্কেলকে তাঁদের জন্য অসম্মান মনে করলে চাকরি ছেড়ে বিসিএস দিয়ে সচিব হলেই পারেন৷''
বন্ধুরা, নতুন পে স্কেলের জন্য আদতে কে দায়ী? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷