1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিচারপতির বিচার করবে কারা?

৪ আগস্ট ২০১৭

বেশ কিছু দিন করেই বাংলাদেশে ‘টক অফ দ্য কান্ট্রি' আইন, বিচার ও আদালত৷ কখনও ৫৭ ধারা, কখনও বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আবার কখনও আদালতের রায় – কোনো না কোনোভাবে আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা৷

https://p.dw.com/p/2heDB
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

৫৭ ধারা নিয়ে তোলপাড় চলছে অনেকদিন ধরেই৷ এই ধারার অপব্যবহার নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে অনেক৷ নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই ধারা থাকবে না, বলছেন আইনমন্ত্রী৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, নতুন আইনেও সংখ্যাটি ৫৭ না হলেও কাছাকাছি ধরনেরই কোনো একটি ধারা থাকবে৷

কিন্তু এই ধারাটির মধ্যেই যে ‘অপব্যবহার' করার সুযোগ লুকিয়ে আছে, সে দায় কার? সংসদ এই আইন বাতিল করছে না, ভালো কথা৷ পুলিশ বুঝেশুনে, তদন্ত করে মামলা নিলেই হলো৷ কিন্তু পুলিশও যদি ‘বিশেষ' কারও ‘ক্ষমতায়' প্রভাবিত হয়ে মামলা নেয়, সেক্ষেত্রে বিচারকরা তো আছেনই৷

কিন্তু অবাক হয়ে দেখতে হচ্ছে, জনগণের ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল বিচারালয়ও কেমন জানি ধারার মারপ্যাঁচে পড়ে আছে৷ যে মামলা সাধারণের মধ্যেই হাসির উদ্রেক করে, সে মামলা কিভাবে আদালত গ্রহণ করে, আর কেনই বা সে মামলায় কারও হাজতবাস হয়, তা বোধগম্য হওয়াটা নিতান্তই কষ্টকর৷

অন্য উদাহরণ থাক৷ ধরা যাক অতিসাম্প্রতিক উদাহরণটাই৷ খুলনার ডুমুরিয়ায় প্রতিমন্ত্রীর বিতরণ করা ছাগলের মৃত্যুর খবর ফেসবুকে শেয়ার করায় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন আরেক সাংবাদিক৷ এতে নাকি প্রতিমন্ত্রীর মানহানি হয়েছে!

একজন প্রতিমন্ত্রী এবং এক সাংবাদিকের এত ঠুনকো মান থাকাটা যেমন আশ্চর্যের ব্যাপার, তার চেয়েও আশ্চর্যের ব্যাপার মামলার আসামিকে এ কারণে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোটা৷ পরদিন আসামি জামিন পেলেও ততক্ষণে হেনস্তা করার যে উদ্দেশ্য বাদির ছিল, তা নিশ্চয়ই পূরণ হয়েছে৷

প্রশ্ন হচ্ছে, ৫৭ ধারা জামিন অযোগ্য হলেও কিভাবে বাদি জামিন পেলেন? আর যদি পেলেনই, কেনই বা তাকে এই তুচ্ছ কারণে একদিন হাজতে থাকতে হলো? এতে যারা বরাবরই জেল-জুলুমের ভয় দেখিয়ে আসেন, তারা আরো উৎসাহিতই কি হচ্ছেন না?

এমন হাস্যকর বিষয় শুধু ৫৭ ধারাতেই থেমে থাকলেও হতো৷ ধরা যাক, বরগুনার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনের কথাই৷ তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল জামিনযোগ্য ধারাতেই৷ কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে, কিভাবে শিশুর পরম মমতায় আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রচারের অপরাধে কারাগারে পাঠালেন বিচারক?

পরবর্তীতে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করার কথা অস্বীকার করলেও, ইউএনও বা তার আইনজীবীর বক্তব্যের সাথে অবশ্য বিচারকের বক্তব্যের ব্যাপক গরমিল রয়েছে৷ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এমন ঘটনায় আশ্চর্য হয়েছেন৷ তারিক সালমনের পদায়ন হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে, দল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন মামলার বাদি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাও৷ কিন্তু কেমন আছেন সেই বিচারক?

এমন হাতেগোনা কিছু ঘটনা গণমাধ্যমের কল্যাণে সবার নজরে আসে৷ কিন্তু বড় একটা অংশে বিচারের বাণী কি নিভৃতেই কাঁদে?

ষোড়শ সংশোধনী, অধস্তন বিচারকদের নিয়োগ, বদলি এবং বিচারপতিদের অপসারণ জুডিশিয়াল কাউন্সিলে নাকি সংসদে, এ নিয়েও চলছে চরম দ্বন্দ্ব৷ মুখোমুখি অবস্থানে দেশের আইন ও বিচার বিভাগ৷ এমন দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক গঠনমূলক হলে তা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভালোই হওয়ার কথা৷

Anupam Deb Kanunjna DW-Bengali Service
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: Privat

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ব্রিটিশ বিচারক লর্ড ডেনিংয়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘‘যদি কাউকে বিশ্বাসই করতে হয়, তবে বিচারকদের করো৷'' কিন্তু একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, আমাদের আদালত যেমন যুগান্তকারী কিছু রায় দিয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত ঘটনারও জন্ম দিয়ে যাচ্ছে৷

সংবিধানের ৭-এর ১ অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷'

প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণ কি সত্যিকার অর্থে সেই ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারছে? চাইলেই কি নিজের মতপ্রকাশ করতে পারছে জনগণ? সরকার, সংসদ, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারছে?

বিচার অন্ধ, কিন্তু বিচারক অন্ধ হলে চলবে কী করে!

এ বিষয়ে আপনি কী ভাবছেন? মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য