1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়ছে ‘সাইবার মবিং’ বা অনলাইনে আক্রমণ

৯ জুন ২০১০

সাইবার মবিং – শুনলেই মনে হতে পারে, অনলাইনে আবার হামলা কিসের? আর হামলা যদি হয়ও তাতে কি এমন ক্ষতি হবে? অনলাইনে তো কেউ কাউকে হাতের কাছে পাচ্ছে না, যে দু ঘা লাগিয়ে দেবে! না, আপনার এই ধারণা ভুল৷

https://p.dw.com/p/Nlpf
ছবি: picture-alliance/ dpa

ইন্টারনেটে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনলাইন আক্রমণ এখন আর হাসি-ঠাট্টায় উড়িয়ে দেয়ার পর্যায়ে নেই৷ বরং ‘সাইবার মবিং' এর কারণে আত্মহত্যার খবর যেমন শোনা যাচ্ছে, তেমনি অনেক বড় বড় লেখককেও দেখা গেছে অসহায়ের মতো নিজেকে গুটিয়ে নিতে৷

প্রশ্ন আসতে পারে ‘সাইবার মবিং' আসলে কী? ‘সাইবার মবিং' হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে একক বা সংঘবদ্ধভাবে কাউকে আক্রমণ করা, কারো নামে একের পর এক বাজে কথা লেখা এবং মন্তব্য করে বেড়ানো এবং সেইসঙ্গে বিভ্রান্তি ছড়ানো৷ এই বিষয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সম্পাদক রেজওয়ান ইসলাম বলেন, আসলে সাইবার মবিং মানে হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে কারো বিরুদ্ধে কটু কথা বলা বা অন্য কিছু৷ এটা দেশে ইদানিংকালে বেশি দেখা যাচ্ছে৷ কারণ, এ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন৷

চলুন নজর দেই ‘সাইবার মবিং'এর শিকার হয়েছেন, এমন কয়েকজনের দিকে৷ যেমন জার্মান লেখিকা ভেরা হোলাইটার৷ দক্ষিণ কোরিয়ার সৌল শহরে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন তিনি৷ সৌল শহরের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলেন একটি বই৷ শিরোনাম ‘সৌলে নির্ঘুম'৷ তাঁর সেই বইয়ের অংশবিশেষ কেউ একজন কোরিয়ান ভাষায় ভাষান্তর করে ইন্টারনেট প্রকাশ করা মাত্রই শুরু হলো হোলাইটারের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট আক্রমণ৷

Symbolbild Computersicherheit
ছবি: picture-alliance/chromorange

আক্রমণকারীদের দাবি, হোলাইটার কোরিয়ানদের গর্বের জায়গায় আঘাত হেনেছেন৷ যদিও বইটিতে তেমন কিছু ছিল না৷ তারপরও এই সাইবার আক্রমণ জার্মান লেখিকাকে একরকম একঘরে করে ফেলে৷

‘সাইবার মবিং' নিয়ে এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের৷ ১৩ বছর বয়সী কিশোরী মেগান মেয়ার৷ তাঁরই এক প্রতিবেশী, ৪৯ বছর বয়সী মহিলা, পুরুষের ছদ্মবেশে ইন্টারনেটে প্রেম শুরু করে মেগান এর সঙ্গে৷ এরপর এক পর্যায়ে পুরুষের বেশে থাকা মহিলাটি মানসিকভাবে আঘাত করতে শুরু করে মেগানকে৷ আর সেই চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় মেগান৷

‘সাইবার মবিং' নিয়ে এরকম খবর পৃথিবীর নানা প্রান্তে শোনা যাচ্ছে৷ বাদ নেই বাংলাদেশও৷ বড় পরিসরে না হলেও ইন্টারনেটে নানাজনকে হেনস্তা করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে৷ এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট এবং ব্লগকে৷ এই প্রসঙ্গে বাংলা ব্লগ সাইট সামহোয়্যার ইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা বলেন, এটা আসলে বাড়ছে বলেই আমি মনে করি৷ এটা খুবই আপত্তিকর একটা ব্যাপার৷ সংঘবদ্ধ একটা দল বা কেউ ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আক্রমণ, কারো নামে মনগড়া কিছু ব্যাপার তুলে দেয়া ব্লগে, এমন বিষয়গুলোর চর্চা রয়েছে৷

সাইবার মবিং বন্ধে আইনকানুনও করতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ৷ দক্ষিণ কোরিয়া ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে হেনস্তা বন্ধে বিশেষ আইন করেছে৷ এই তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির নামও৷ বিভিন্ন দেশে সাইবার মবিং রোধে চালানো হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা৷ এই প্রসঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জাকারিয়া স্বপন বলেন, শুধু আইন দিয়ে আমরা সবকিছু সবসময় রক্ষা করতে পারবনা৷ তারচেয়ে সমাজ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমরা যদি যোগাযোগ তৈরি করতে পারি এবং তাদেরকে বোঝাতে পারি যে, সাইবার মবিং এর পরিণাম কি হতে পারে, তাহলে কিন্তু সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমেও একটি সমাধান বের করা সম্ভব৷

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ব্লগিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার৷ আর তাই, ইন্টারনেটপ্রেমী তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখানোর এখনই সময়৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন