বাবা-মা ‘বোঝা’, উপেক্ষিত সন্তানও
৮ আগস্ট ২০১০ব্যস্ত সময় আর টানাটানির সংসার - বুড়ো বাবা-মা'দের কথা ভাবার সময় কোথায়? আর সন্তান, তাঁদের লালন-পালনেও শতেক ঝামেলা৷ এই চিত্র হালের এশিয়ার৷ জরিপ চালিয়ে তা-ই খুঁজে পেয়েছে সিঙ্গাপুরের ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- ইআইইউ৷ জরিপ চালানো হয়েছে সাতটি দেশে৷ এগুলো হচ্ছে- চীন, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া আর তাইওয়ানে৷ ফলাফল দেখা যাচ্ছে, পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার যোগাড়৷ অন্তত এশিয়ার উন্নত জীবনযাত্রার এই সব দেশগুলোতে৷ বাবা-মা আর সন্তানদের উপেক্ষার কারণ কী- এর উত্তর খোঁজার চেষ্টাও হয়েছে৷ সেই পুরনো উত্তরই মিলেছে, অর্থকড়ি৷
মন্দা আর গতিময় এই জীবনে চিড়েচ্যাপ্টা এই প্রজন্ম৷ ইআইইউ তাঁদের বলছে, ‘স্যান্ডুইচড জেনারেশন'৷ বাবা-মা'র খোঁজ রাখা এখন তাঁরা ঝামেলার বলে মনে করে৷ কারণ বয়স্ক বাবা-মাকে সঙ্গে রাখা মানে তাঁদের চিকিৎসার হ্যাপা পোহানো৷ এরপর চিকিৎসা শাস্ত্রের অগ্রগতিতে মানুষের আয়ুও বেড়েছে৷ আর সন্তানের পড়াশোনার খরচ যোগানোও এই সময়ে কঠিন৷ তাই রোজগারের জন্য সময় দিতে হয় বেশি, আর ক্যারিয়ারের প্রতি দৃষ্টি দিতে গিয়ে নারীরা সন্তানও নিচ্ছে দেরিতে৷ সব মিলিয়ে শিশুগুলোও পায় না প্রত্যাশিত আদর-স্নেহ৷ সমস্যার কারণ হিসেবে এগুলোই ধরা দিয়েছে ইআইইউ'র চোখে৷
ধরা যাক, চীনের কথা৷ সেখানে কর্মজীবীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ পাওয়া গেল, যাঁরা বাবা-মা ও সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখেন৷ জাপান আর অস্ট্রেলিয়ার দিকে যদি তাকাই, এই সংখ্যা নেমে আসবে অনেক নিচে, ৬ শতাংশে৷ ইআইইউ বলছে, এই সব দেশের কর্মজীবীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কথা হচ্ছে, পরিবারের খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা৷ অর্ধেক বলছেন, তাঁরা অর্থ জমানো কমিয়ে দিয়েছেন৷ অনুৎপাদনশীল খাতে, তাঁদের ভাষায়, অর্থ ব্যয়ে আগ্রহ নেই অধিকাংশের৷ সবাই উৎকণ্ঠিত নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে৷ এই ভাবনায় হারিয়ে গেছে পুরনো কিংবা নবীনদের দিকে সময় দেওয়া৷
জরিপে অংশ নেওয়া ৭৮ শতাংশ স্বীকার করেছেন, তাঁরা নিজেরাও মনে করেন, বাবা-মা'র প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করা উচিত৷ কিন্তু কী করা, টানাটানির এই সংসারে এতদিকে নজর রাখা মুশকিল৷ অর্থাৎ বাবা-মা'দের উপেক্ষা করলেও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধায় কোনো ঘাটতি অন্তত এখনো দেখা দেয়নি৷ এটুকু হতে পারে এই দেশগুলোর বয়োবৃদ্ধদের সান্ত্বনা৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক