1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজেট সামলাতে গিয়ে জার্মান সরকার উভয় সঙ্কটে

১০ জুন ২০১০

গ্রিস, স্পেন বা পর্তুগালের মতো অবস্থা না হলেও জার্মানি তার বিশাল রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা সামাল দিতে সম্প্রতি এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে৷ বলাই বাহুল্য, বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্কও দেখা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/Nmjb
এই মুহূর্তে ম্যার্কেল’এর অবস্থা মোটেই ঈর্ষণীয় নয়ছবি: AP

ঋণের বোঝা

একটা ডিজিটাল ঘড়ি – তবে সময় দেখায় না৷ দেশে ঋণের বোঝা কীভাবে বেড়ে চলেছে, তার ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তুলছে এই ঘড়ি৷ সোমবার জার্মান সরকার যখন জনসমক্ষে ব্যয় সঙ্কোচনের নীতি তুলে ধরলো, তখন ঘড়ির পর্দায় রাষ্ট্রীয় ঋণের অঙ্ক ছিল ১৭১,৫৮৮ কোটি ইউরো'র থেকেও বেশি৷ গ্রিস, স্পেন ও পর্তুগালের বিশাল বাজেট ঘাটতির ফলে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো'র অস্তিত্ব যে সঙ্কটের মুখে পড়েছে, সেখানে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে জার্মানিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয় – এমনটা মনে করাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু বাস্তবে জার্মানির ঋণের বোঝাও অদূর ভবিষ্যতে বিশাল সঙ্কটের সৃষ্টি করতে পারে৷ তাই এখনই রাশ টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না৷

Schuldenuhr in Berlin tickt
জার্মানির রাষ্ট্রীয় ঋণের সূচক ঘড়িছবি: picture-alliance / dpa

সরকারের সামনে বিকল্প

যে কোনো দেশেরই সরকারি কোষাগারের অবস্থা সামাল দিতে দু'রকম ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ প্রথম পথ হলো আয় বাড়ানো – যার অর্থ আয়কর বা বিক্রির উপর করের হার সামান্য হলেও বাড়িয়ে দেওয়া৷ বলাই বাহুল্য, এমন সিদ্ধান্ত নিলে জনরোষের আশঙ্কা রয়েছে৷ অনেক সময় সরকারি মালিকানায় থাকা সম্পত্তি বিক্রি করলেও কিছু বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা যায়৷ দ্বিতীয় পথ – সরকারি ব্যয় কমানো৷ জার্মান সরকার মূলত এই দ্বিতীয় পথই বেছে নিয়েছে – যার আওতায় সরকার আগামী ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ৮,১৬০ কোটি ইউরো কম ব্যয় করবে৷ প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের পর আঙ্গেলা ম্যার্কেল'এর মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবিষয়ে একটা ঐক্যমতে পৌঁছতে পেরেছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে গ্রিস ও ইউরো এলাকার পরিস্থিতির আলোকে আমাদের বুঝতে হবে, আর্থিক কাঠামোর ভিত্তি মজবুত রাখা কতটা জরুরি৷ একে আমাদের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত বলা যেতে পারে৷''

Informelle Beschäftigung: Flaschensammler in Deutschland
এমন দৃশ্য তুলনামূলকভাবে বিরল হলেও জার্মানিতেও দারিদ্র্যের দৃষ্টান্ত কম নয়ছবি: picture-alliance / KPA

সিদ্ধান্তের রূপরেখা

সরকারের সামগ্রিক এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা বেশ কঠিন হবে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তারপরেই প্রশ্ন ওঠে, কোন খাতে সরকার ব্যয় সঙ্কোচন করবে? কারা এর ফলে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের মতো জার্মানিতেও ‘লবি'র অভাব নেই৷ সবারই মনে হয়, তার ক্ষেত্রে কোনো কাটছাঁট করা উচিত নয়, অন্য যাদের গুরুত্ব কম – তাদের জন্য বরাদ্দ অর্থ কাটতে পারে সরকার৷

জার্মান সরকার যেহেতু সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আয়কর বা বিক্রয় কর বাবদ বাড়তি অর্থ আদায়ের পথে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি বরাদ্দ ও ভর্তুকি কাটতে হবে৷ জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি করলে তার ক্ষতিপূরণ বাবদ যে কর চালু রয়েছে, এতকাল কিছু ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম করা হতো৷ সেই ভর্তুকির যোগান দিত সরকারই৷ কঠিন এই অবস্থায় সেই ভর্তুকি তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ বিমান সংস্থা ও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে এবার থেকে সরকারি কোষাগারে মোটা টাকা জমা দিতে হবে৷ রেল সংস্থাকেও বাড়তি অর্থ গুনতে হবে৷ শেয়ার বাজারে আর্থিক লেনদেনের উপরেও করের বোঝা চাপানো হচ্ছে৷

Deutschland Bundestag Finanzkrise Griechenland Sigmar Gabriel
সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের সভাপতি সিগমার গাব্রিয়েলছবি: AP

প্রতিক্রিয়া

সাধারণ মানুষকে রেহাই দিয়ে শিল্প-বাণিজ্য জগতের উপর সরকারের এই বাড়তি চাপ সাধারণত সবার কাছেই বেশ গ্রহণযোগ্য মনে হয়৷ কিন্তু বিরোধী পক্ষ সরকারের এই পদক্ষেপে মোটেই সন্তুষ্ট নয়৷ এমনকি সরকারের ব্যয় সঙ্কোচ পরিকল্পনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলি জানার আগেই তারা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘোষণা করে৷ তাদের দাবি, সরকার সমাজের সংখ্যালঘু বিত্তবান শ্রেণীর উপর সামান্য কিছু আর্থিক বোঝা চাপিয়ে এমন সব খাতে আসল কাটছাঁট করছে, যার ফলে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের সভাপতি সিগমার গাব্রিয়েল বলেন, ‘‘এখানে যা তুলে ধরা হচ্ছে, তার পুরোটাই আসলে ফাঁপা৷ এর ফলে শ্রমিক-কর্মী ও পরিবারদের জন্য মারাত্মক চাপের সৃষ্টি হবে৷ এই কর্মসূচির মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতির প্রতিফলন নেই৷ কীভাবে জার্মানিকে সঙ্কট থেকে বার করা যায়, সেই পথ এখানে দেখানো হচ্ছে না৷ ৮ মাস ধরে দেশ শাসন করার পর জার্মান সরকার যা খাড়া করেছে, তা সত্যি অত্যন্ত দুর্বল৷''

শিল্প-বাণিজ্য জগতও সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি নয়৷ তাদের বক্তব্য, বিশ্বায়নের এই যুগে জাতীয় পর্যায়ে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিলে তাতে মোটাই ফল হয় না৷ জার্মানির মতো দেশ এককভাবে আর্থিক লেনদেনের উপর কর বসালে জার্মানিতে ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে পড়বে৷ তখন মূলধন এমন জায়গায় সরে যাবে, যেখানে এমন বাড়তি চাপ নেই৷

বিশেষজ্ঞরা আবার অন্য একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন৷ তাঁদের মতে, সরকারের ব্যয়-সঙ্কোচনের নীতির ফলে প্রায় সব মানুষই কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ যারা হবে না, তাদের মনেও দুশ্চিন্তা দেখা দেবে৷ এমন অবস্থায় তারাও যদি পারিবারিক স্তরে ব্যয় সঙ্কোচন করা শুরু করে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির উপর৷ কেনাকাটা কমে গেলে বাজারে নতুন সমস্যা দেখা দেবে৷ থমকে যাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি৷

অর্থাৎ সরকার পড়েছে উভয় সঙ্কটে৷ বাজেট ঘাটতি সামাল না দিলে দেশের আর্থিক কাঠামো মারাত্মক সঙ্কটে পড়ে যাবে৷ সেই ঘাটতি মেটাতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষতি হবে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ