1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাঙালীর কাছে দেবী দুর্গা মাতৃসম

১৪ অক্টোবর ২০১০

বাঙালি হিন্দুদের কাছে বারো মাসে তেরো পার্বণ৷ তারপরেও, দুর্গাপূজার স্বাদটা কিন্তু একেবারে আলাদা৷ বাঙালির কাছে দেবী দুর্গা কখনও দুর্গতিনাশিনী, কখনও আবার নিছকই মাতৃপ্রতিভূ৷

https://p.dw.com/p/PdvA
মা দুর্গাছবি: DW

সেই ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ৷ অবিভক্ত বাংলায় শুরু হয়েছিল দুর্গাপূজা৷ শোনা যায়, সে সময় রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার তাহিরপুর অঞ্চলের রাজা কংস নারায়ণ শারদীয় দুর্গাপূজা প্রচলন করেন৷ আর তাঁর দেখাদেখি ভাদুরিয়ার রাজা জগৎনারায়ণও শুরু করেন মাতৃপূজা৷ এরপর থেকেই দুর্গাপূজা ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করে বাংলায়, বাঙালির মানসে৷ গল্পে শুনেছি, সেকালে দুর্গাপূজার আয়োজন হতো রাজা, জমিদার অথবা সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উদ্যোগে৷ অবশ্য বর্তমানে সেই রাজসিক দুর্গা জাত-পাত ভুলে বৈষম্যের চির অবসান করতে তৎপর৷ তাই একালের দুর্গাপূজা এক আনন্দঘন উৎসবও৷

Hindu Festival Durga Puja
কলকাতায় দুর্গাপূজাছবি: AP

আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষকে বলা হয় দেবী পক্ষ৷ কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথি থেকে শুরু করে শুক্লপক্ষের প্রতিপদ ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং সব শেষে বিজয়া দশমী - এই কটা দিন বাঙালি হিন্দুর হৃদয়ে সবচেয়ে কাছের উৎসব৷

পৌরাণিক মতে, মহিষাসুরের অত্যাচারে বিপর্যস্ত দেবতাদের রক্ষা করতে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী দুর্গা৷ মহিষাসুরকে বধ করে তিনি দেবগণকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ অর্থাৎ, অসুর বা অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে সুর বা শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি৷ সেজন্যই তো তিনি দুর্গতিনাশিনী৷ অথচ, একাধারে তিনি অসুরকে মারছেন, আবার একই সময় চার-চারটি সন্তানের জননীও তিনি৷ একদিকে তাঁর সংহার মূর্তি, অন্যদিকে তিনিই করুণাময়ী – বললেন কলকাতার অন্যতম নারী বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা চ্যাটার্জি৷ তাঁর কথায়, ‘‘আধুনিক যুগের ইতিহাসে দুর্গা এমন এক চরিত্র, যাঁকে মা হিসেবে মেনে নিতেই হয়৷ কারণ, সেই মায়ের সঙ্গে সন্তান ভীষণভাবে জুড়ে থাকে৷ একরকমভাবে মা তাঁর সন্তানকে বকাবকি করবেন, মারামারি করবেন - অর্থাৎ একদিকে এই মায়ের যেমন চন্ডীমূর্তি, তেমনই অন্যদিকে তিনি করুণাময়ীও বটে৷’’

Indien Künstlerin Chayna Paul
পারিবারিক আমেজে দুর্গা অচিরেই দেবী থেকে মায়ে পরিণত হনছবি: DW

বাঙালির কাছে দেবী দুর্গা শুভ-অশুভ বোধ জাগ্রত করে, মানুষের চেতনাকে প্রভাবিত করে এবং জন্ম দেয় আধ্যাত্মিকতার৷ তবে এ পূজা শুধু যে ধর্মীয় চেতনার জন্ম দেয়, তা নয়৷ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা প্রতিমার নির্মাণ কৌশলের শিল্পগত দিক ও সাজসজ্জার প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে থাকে, বরাবর৷ তাঁদের কাছে কোন ঠাকুর কতো সুন্দর হয়েছে – সেটাই হয়ে ওঠে প্রধান আলোচ্য বিষয়৷ তাহলে যুদ্ধং দেহি দুর্গার পরিচয় আমরা কোথায়, কিভাবে পাই ? সুস্মিতা চ্যাটার্জি জানান, ‘‘অসুর বধ করছেন যে দুর্গা, সেই চরিত্রটা উঠে আসছে বহু শতাব্দীর পুরোনো এক ইতিহাস থেকে৷ সেখানে আরো অনেক দেবীরা ছিলেন, যাঁরা অসুর বধ করছেন এবং দুর্গা তাঁদের মধ্যেই একজন৷ সম্ভবত ষষ্ঠ বা সপ্তম শতাব্দীর আগে, বাংলায় এমন একটা সংস্কৃতি ছিল যেখানে মেয়েরা যুদ্ধ করছেন - সেটাই ছিল স্বাভাবিক৷’’

তারপরও পূজার সময় নতুন কাপড়-চোপড়, উপহার আর হরেক রকম মেলা নিয়েই যেন আনন্দে মেতে থাকে ছোট-বড়, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, ধনি-দরিদ্র, হিন্দু-অহিন্দু – এক কথায় সকলেই৷ বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় নানা রকম খাবার-দাবার - তিল, নারকেলের নাড়ু, লুচি, পায়েস আরো কতো কিছু৷ তাই পারিবারিক আমেজে দুর্গা অচিরেই দেবী থেকে মায়ে পরিণত হন৷ হয়ে ওঠেন কারো স্ত্রী, কারো কন্যা৷ এক্কেবারে যেন ঘরের মেয়ে, যিনি মাত্র পাঁচ দিনের জন্য বাপের বাড়ি আসেন৷ এভাবেই দেবী পরিণত হন আমাদের ‘মা দুর্গায়’৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক