1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুজরাটে চ্যালেঞ্জের মুখে বিজেপি

রাজীব চক্রবর্তী গুজরাট
৭ ডিসেম্বর ২০১৭

এক কথায় বললে স্বপ্নভঙ্গের পালা শুরু হয়েছে গুজরাটে৷ রাহুল গান্ধীর ‘‌হাত ‌ধরেছেন’ হার্দিক প্যাটেল, অল্পেশ ঠাকোর ও জিগনেশ মেওয়ানি৷ মুসলিম ভোট তো ছিলই, এবার যুক্ত হয়েছে পাতিদার, তপশিলি এবং আদিবাসী ভোট৷ আশঙ্কা বিজেপি-‌তে৷

https://p.dw.com/p/2ov5i
ছবি: Reuters

বাইশ বছর পর বিজেপি'‌র বিদায়-‌ঘন্টা কি সত্যিই বাজবে? শাসক দলের কেউই‌ এমনটা ভাবেননি৷ যদিও গুজরাটে এখন তেমনই পরিস্থিতি৷ সাধারণ মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে৷ শাসকের আসনে থেকে প্যাটেলদের আধিপত্য প্রায় শেষ৷ নরেন্দ্র মোদীর দল আবার মেরুকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে৷ এরই মধ্যে পাতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল, তপশিলি জাতি-‌উপজাতি নেতা অল্পেশ ঠাকোর এবং আদাবাসী নেতা জিগ্নেশ মেওয়ানিরা কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিজেপিকে হঠানোর যুদ্ধে নেমেছেন৷ গোটা রাজ্য চষে বেড়িয়ে যা বোঝা গেল, একমাত্র মধ্য ও দক্ষিন গুজরাট ছাড়া আর কোথাও বিজেপি‌র আধিপত্য তেমন নেই৷ কিন্তু, উত্তর ও পশ্চিম গুজরাটে বহু বছর পর আবারও ফিরে আসছে কংগ্রেসের সমর্থন৷ একদিকে মোদী যখন ‘‌বিকাশ’ (‌উন্নয়ন)‌‌ ছেড়ে মেরুকরণের ওপর জোর দিচ্ছেন, তখন উল্টোদিকে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীও নরম হিন্দুত্বের রাস্তা ধরেছেন৷ ফলে আদিবাসী ভোট কংগ্রেসমুখী হচ্ছে৷

‘রাজ্যে নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে ভারতীয় জনতা পার্টি’

আগামী ৯ ও ১৪ ডিসেম্বর দু-‌দফায় ভোটগ্রহণ হতে চলেছে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৮ তারিখ৷ তার আগে দু-‌পক্ষের সেয়ানে-‌সেয়ানে লড়াই বেশ জমে উঠেছে৷

প্রবীন সাংবাদিক দেবারুণ রায়ের মতে, ‘‌‘‌পরপর তিনটি নির্বাচন এবং তার আগের কয়েক বছর মিলিয়ে মোট ২২ বছর গুজরাট শাসন করছে বিজেপি৷ স্বভাবতই সরকার-‌বিরোধী ভোটের প্রভাব থাকবে৷ কিন্তু, আসল সমস্যাটা হলো মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লি চলে যাওয়া৷ তারপরেই রাজ্যে নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ এবার যা পরিস্থিতি তাতে মোদীর সব হিসেব ওলটপালট করে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ মোদী, অমিত শাহদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধী৷’’

মোদীকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া রাহুল গান্ধীর ‘‌থ্রি অ্যাঙরি ইয়ংম্যান’-‌এর মধ্যে হার্দিক প্যাটেলের ওপর বেশি ভরসা করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, যদিও তিনি এই নির্বাচনে প্রার্থী হননি৷ বয়স মাত্র ২৪৷ ভারতীয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নূন্যতম বয়স ২৫৷ তবে, ছোকরা হলেও গোটা রাজ্যের হিসেব বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে ছেলেটি৷ আমেদাবাদ থেকে ৬১ কিলোমিটার দূরে বীরামগামে ‘‌ঝালাওয়াড়ি কড়বা প্যাটেল সমাজ’-‌এ দু-‌কামরার ঘরে বাস৷ বাবা ভারত প্যাটেলের জলপাম্পের ব্যবসা ছিল৷ বরাবর বিজেপির সমর্থক৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল বহুবার বাড়িতে এসেছেন৷ কিন্তু, ছোট থেকেই সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখা হার্দিক এবার সরকার বদলের প্রতিজ্ঞা করেছেন৷ একইভাবে আরেক যুবক জিগনেশ এবার লড়ছেন বড়গাম কেন্দ্র থেকে৷ কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন তিনি৷ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত৷

আজ থেকে ছয় বছর আগে বড় কোনো নেতা‌র সুপারিশ না থাকায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এআইসিসি-‌র নেতারা৷ দেখা করেননি রাহুল গান্ধী৷ কষ্ট পেয়েছিলেন সামাজিক আন্দোলনের যুক্ত যুবকটি৷ তবে, কংগ্রেস নেতাদের বলে এসেছিলেন, ‘‘‌একদিন নিজের ক্ষমতায় রাহুলের সঙ্গে দেখা করব৷’’ যুবকটির নাম অল্পেশ ঠাকোর৷ বছর বিয়াল্লিশের ছিপছিপে চেহারার অল্পেশ এখন কংগ্রেস সহ-‌সভাপতি রাহুলের নয়নের মণি৷ সেইসঙ্গে বিজেপি‌র ভয়ের কারণও বটে৷ তাঁর ওপর অগাধ আস্থা কংগ্রেসের হবু সভাপতির৷ সদ্য কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন অল্পেশ৷

রাজ্যের ১১টি আসনে টিকিট আদায় করেছেন ‌অল্পেশ৷ প্রচারে নিজের সংগঠনকেই এগিয়ে রাখছেন রাধনপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী৷ গুজরাটে সমাজ আন্দোলনের ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া এই নেতা একসঙ্গে দুটি সংগঠনের জনক৷ একটি ‘‌গুজরাট ক্ষত্রিয় ঠাকোর সেনা’ এবং অন্যটি ‘‌ওবিসি-‌এসসি-‌এসটি একতা মঞ্চ’৷ এক কথায়, গোটা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন তিনি৷ সামাজিক আন্দোলন থেকে উঠে আসা অল্পেশের কথায়, ‌‘‘‌কয়েকবছর আগে গুজরাটে শুধুমাত্র মদ খেয়ে প্রতিবছর ১০-‌১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছিল৷ আইন থাকলেও সরকার ও পুলিশি যোগসাজশের জেরে মৃত্যুমিছিল থামছিল না৷ আমার আন্দোলনের জেরে এখন তা প্রয় বন্ধ হয়েছে৷’’ আরও বললেন, ‘‌‘‌ক্ষমতার লোভে নয়, সমাজ বদলানোর স্বপ্নে রাজননীতিতে আসার আগ্রহ ছিল৷ ২০১১ সালে দিল্লি গিয়েছিলাম৷ রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম৷ পারিনি৷ আমাকে বলা হয়েছিল, ‘‌আগে বড় কোনও নেতার সুপারিশ নিয়ে এসো'‌৷ আজ রাহুল গান্ধী আমার ওপর সবচেয়ে বেশি ভরসা করছেন৷ এটাই তো আমার জয়৷’’

প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা খোডাভাই ঠাকোরের ছেলে অল্পেশ৷ দেখা হলো অল্পেশের বাবা খোডাভাইয়ের সঙ্গে৷ ১৯৮০ থেকে আমেদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য তিনি৷ ২০০০ সালে জেলাপরিষদের চেয়ারম্যান এবং পিডব্লুডি-‌র চেয়ারম্যান ছিলেন৷ তাঁর বাবা মেরুজি ঠাকোর ছিলেন গ্রামের সরপঞ্চ৷

সামাজিক কর্মী হিসেবে উত্তর ও মধ্য গুজরাটে বেআইনি মদের রমরমার বিরুদ্ধে আন্দোলন দিয়ে যাত্রা শুরু করে খুব অল্প সময়েই জননেতায় পরিণত হয়েছেন অল্পেশ৷ প্রতিবেশীরা জানালেন, ‘‌২০১০ সালে দুই নিকট আত্মীয় মদের নেশায় ডুবে মারা যান৷ তারপর থেকেই মদের বিরুদ্ধে আন্দেলন শুরু করেন অল্পেশ৷ মদের নেশায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতো ঠাকোর সমাজ৷ তাই গড়ে তোলেন ঠাকোর সেনা৷

এদিকে, দু-‌দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা কংগ্রেস এবার অল্পেশের বিষয়ে অনেক বেশি আশাবাদী৷ গুজরাটে অনগ্রসর শ্রেণির ভোটারের হার প্রায় ৫০ শতাংশ৷ এরমধ্যে ২০-‌২২ শতাংশ ভোটার ঠাকোর৷ অল্পেশের দাবি, তিনি কংগ্রেসকে ১১২ থেকে ১২৫টি আসন পাইয়ে দিতে সক্ষম৷ কিন্তু, এই দাবি কতটা সত্যি হবে তা জানা যাবে ১৮ ডিসেম্বর৷

যদিও আমেদাবাদের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা ইয়ামল ব্যাস বেশ জোর গলায় বললেন, ‘‘‌অল্পেশ ঠাকোরের কথায় অনগ্রসর শ্রেণির ভোটাররা কংগ্রেসকে মোটেও ভোট দেবে না৷ তাছাড়া অল্পেশের শুধুমাত্র উত্তর ও মধ্য গুজরাটে দাপট আছে৷ বাকি এলাকায় ওঁর কথা কে শুনবে!‌’’