বসফরাসের তীরে তুর্কি-জার্মান বংশোদ্ভূত ছেলেমেয়েদের ভীড়
২৯ জুলাই ২০১০জার্মানিতে অর্থনৈতিক মন্দা, পছন্দমত কাজ না পাওয়ার দরুণ তুর্কি বংশোদ্ভূত ছেলেমেয়েরা আরেক মাতৃভূমির দিকে ফিরে যাচ্ছে৷ জার্মানিতে কোথাও চাকরির আবেদন পত্রে যদি দেখা যায় যে আবেদনকারীর নাম মেমেট অথবা আয়েশা তাহলে সেই কাংখিত চাকরিটি তার পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম৷ এই তথ্যটি দিয়েছে বনের কাছেই কোবলেন্স বিশ্ববিদ্যালয়৷
২০১০ সালে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি৷ অর্থনীতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে শিক্ষানবিশের জন্য আবেদন পত্র পাঠিয়েছে এরকম এক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়৷ এর মধ্যে ২০ শতাংশ ছিল তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান৷ তারা জানিয়েছে, ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তারা ইস্তানবুলেই ফিরে যেতে আগ্রহী৷ সেখানে অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে, চাকরির সুযোগ সুবিধাও আগের চেয়ে অনেক বেশি৷ জার্মানিতে পড়াশোনা করেছে, জার্মান ভাষা জানে – এমন মানুষদের ডাকা হচ্ছে৷ জার্মানদের মত সময় জ্ঞান ও কাজের দক্ষতা আছে এমন পরিশ্রমী মানুষদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে ক্যারিয়ারের দরজা৷
তুর্কি ? তাহলেই সমস্যা
কিন্তু তু্র্কিদের আসলেই কী জার্মানিতে কাজ পাওয়া কঠিন? ব্যবসা প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেছে ওসাক৷ সে বলল, ‘আমাদের কোন সুযোগ নেই তা আমি বলবো না কিন্তু আমি প্রায়ই শুনেছি, ‘‘ও আচ্ছা, তুমি তাহলে তুর্কি বংশোদ্ভূত, সেটা হলে একটু সমস্যাতো আছেই!''
এবং এই সমস্যাটি তুরস্কে নেই৷ তুর্কি-জার্মানদের সবাই সমানচোখে দেখছে৷ জার্মানিতে উচ্চ পদস্থ কোন পদে একজন জার্মানকেই হয়ত নেওয়া হবে - এই মানসিকতার কারণেই তুর্কি বংশোদ্ভূতরা ভীড় জমাচ্ছে তুরস্কে৷
আইটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে আলেভ গুনেস৷ সে বলল, ‘‘ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে যেতে হয়৷ প্রমাণ করতে হয় আমি পারি, আমি পারবো, তাহলে আমাকে গ্রহণ করা হবে, আমার যথার্থ মূল্যায়ন হবে৷''
আলেভ গুনেস হাইডেলব্যার্গে পড়াশোনা করেছে, তার জন্মও সেখানে৷ তার মতে, শুধুমাত্র নামের কারণেই যদি ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আর কী বাকি থাকলো ? তুর্কি মানেই তুর্কি! গুনেস আরো জানাল, ‘‘তুর্কি বংশোদ্ভূত, কালো চুল, তুর্কি নাম – এসব দিয়ে আগে বিচার করা হয়, তারপর অন্য কথা৷''
হাতছানি দিয়ে ডাকছে ইস্তানবুল, ডাকছে বসফরাস
ইস্তানবুলে আই টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি কোম্পানিতে কাজ করছে গুনেস৷ চাকরি এবং বেতন প্রসঙ্গে সে জানাল, ‘‘জার্মানিতে আমি যা পেতাম এখানেও তাই পাই৷ তখন আমি নিজেই একদিন বললাম, জার্মানিতে যদি আমি এই কাজ করতে পারি তাহলে তুরস্কে কেন নয়? হয়তো সেখানে আমাকে কেউ বিদেশী হিসেবে দেখবে না৷ আমার বিয়ে হয়নি, বাচ্চা নেই, যদি দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে এখনই সময়৷ তারপরই আমি চলে আসি এখানে৷ সবকিছু এখানে দারুণভাবেই চলছে৷''
তুরস্কের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে৷ সেই অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই দক্ষ লোক৷ চাই শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের একটি প্রজন্ম৷ জার্মানি তৈরি করে দিচ্ছে তাদের৷ তুরস্ক তাদের নিজের কোলে টেনে নিচ্ছে আপন করে৷
প্রতিবেদন: আনিয়া কেম্পে/মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক