বন শহরের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জেডইএফ
২৭ ডিসেম্বর ২০১০জেডইএফ কাজ করছে জাতিসংঘের বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ ইউনাইটেড নেশন্স ইউনিভার্সিটি এবং বন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে৷ এখানকার গবেষকরা কোন না কোনভাবে এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ যে তিনটি ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেয় জেডইএফ তা হল:
- পলিটিক্যাল এ্যান্ড কালচারাল চেঞ্জ
- ইকোনমিক এ্যান্ড টেকনলজিক্যাল চেঞ্জ এবং
- ইকলজি এ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট
তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নয়মূলক বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য উদ্বুদ্ধ করে জেডইএফ৷ এর মধ্যে দারিদ্র্য-দূরিকরণ, ব্যাবসা এবং বিশ্বায়ন, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং আবহাওয়া ও পরিবেশের মত বিষয় উল্লেখযোগ্য৷
আলম হোসেন মন্ডল জেডইএফ থেকে তাঁর পিএইচ ডি শেষ করছেন৷ শুরু করেছিলেন ২০০৭ সালে৷ এই ডিসেম্বরেই তিনি কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন৷ জেডইএফ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘আমি যখন মাস্টার্স করি তখনই আমি এই ইন্সটিটিউটের খবর পাই৷ তখন জেডইএফের একটি কনফারেন্সে আমি অংশগ্রহণ করি৷ আমি জানতে পারি যে তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের এই সংস্থাটি বৃত্তি দিয়ে নিয়ে আসে পিএইচডি করার জন্য৷ মূলত তিনটি বিভাগ রয়েছে এই সংস্থায়৷ সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং ইকোলজি বিভাগ৷ তবে সবগুলোই উন্নয়মূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত৷ আর এসব বিষয়ে শুধুমাত্র তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকেই প্রার্থী নেওয়া হয়৷ এখানে যারা পিএইচডি করছে এরা বেশিরভাগই তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে আসা এবং এরা সবাই বৃত্তি পেয়েছে ডিএএডি-র কাছ থেকে৷ এখানে পিএইচডির জন্য যে কেউ আবেদন করতে পারে৷ কোন সুপারভাইজারের প্রয়োজন নেই৷ সরাসরি প্রপোজাল পাঠিয়ে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ যদি জেইএফ তা গ্রহণ করে তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেওয়া হয়৷ এরপর ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ থাকে এখানে এসে প্রপোজাল পাল্টানোর৷''
যে সব কাগজপত্র অবশ্যই প্রয়োজন
বছরে মাত্র একবার আবেদন পত্র জমা নেয় জেডইএফ৷ আবেদন পত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ প্রতিবছর ৩০শে অগাস্ট৷ আপনি যদি ২০১২ সালের মধ্যে আপনার পিএইচডি শুরু করতে চান তাহলে ২০১১ সালের ৩০শে অগাস্টের মধ্যে আবাদন পত্র পাঠিয়ে দিন জেডইএফের কাছে৷ তবে এর জন্য প্রয়োজন বেশ কিছু কাগজপত্র, পূরণ করা প্রয়োজন বেশ কিছু শর্ত৷ তা হল:
- আবেদনকারীর বয়ঃসীমা ৩২ বছর
- আবেদনপত্রের সঙ্গে বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি
- জেডইএফের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা ফর্ম পূরণ করা, সঙ্গে এক কপি ছবি
- দু'জন অধ্যাপকের কাছ থেকে দুটি প্রশংসা পত্র
- স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সার্টিফিকেটের ফটোকপি সঙ্গে মার্কশিট
- পিএইচডির রিসার্চ প্রপোজাল - তা হতে হবে হবে ৮ থেকে ১০ পাতার মধ্যে
- মাস্টার্সের থিসিসের একটি সারমর্ম – এক পাতার মধ্যে
- টোফেল বা আইইএলটিএস পরীক্ষার স্কোর
- জিআরই অথবা জিম্যাট স্কোর
- আপনি যদি চাকুরিজীবি হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিষ্ঠান থেকে একটি লিখিত চিঠি দেখাতে হবে – তাতে অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে যে পিএইচডি শেষ করে আপনি আবার একই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবেন
- যদি বৃত্তি পেয়ে থাকেন তার বৃত্তান্ত
- যদি না পেয়ে থাকেন সেটাও জানাতে হবে
বৃত্তির জন্য ডিএএডি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে৷
বাংলাদেশ আর জার্মানির মধ্যে গবেষণায় পার্থক্য কোথায়? অথবা তেমন বিশেষ কোন পার্থক্য আদৌ আছে কি? আলম হোসেন মন্ডল জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা৷ তিনি বললেন,‘‘ অনেক পার্থক্য আছে৷ এখানে আমি যে সুযোগ-সুবিধাগুলো পেয়েছি সেটা বাংলাদেশে নেই৷ প্রথমেই বলবো বিভিন্ন ধরণের আর্টিকেল বা বই যোগাড় করা৷ অর্থাৎ আমি যে বিষয় নিয়ে কাজ করছি সেই বিষয়ে নিয়ে লেখা বা আর্টিকেল খুঁজে পাওয়া৷ তা আমি সহজেই আমার ডেস্কে বসেই পেয়ে যাচ্ছি৷ ইন্টারনেটের সুবিধা কত তা এখানেই টের পাওয়া যায়৷ এর ফলে অত্যন্ত দ্রুত আমার কাজ এগিয়ে গেছে৷ কীভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবো, কীভাবে তা শেষ করবো সব কিছুই দ্রুত করা সম্ভব হয়েছে৷ সবচেয়ে বড় কথা হল বাংলাদেশে আমার কোন বই বা লেখা প্রকাশিত হয়নি অথচ এখানে এসে আমি এই বছরে আমার ছয়টি লেখা আমি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি৷ এবং সবগুলোই প্রকাশিত হয়েছে উচ্চমানের গবেষণা জার্নালে৷ আর এখানে রয়েছে হাজার হাজার বই৷ প্রয়োজনীয় একটি বই যদি নাও পাওয়া যায় তাহলে লাইব্রেরিয়ানকে বললেই হবে, তিনিই যোগাড় করে দেবেন এবং তা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই৷ বাংলাদেশে এই সুবিধাটি একেবারেই নেই৷ ইন্টারনেটের সুবিধা, বই-পত্রের সুবিধা খুবই প্রয়োজনীয় যার অভাব আছে বাংলাদেশে৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক