1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিস্টেল রোগে আক্রান্ত আফ্রিকায় মায়েরা

১ জুলাই ২০১০

আফ্রিকা মহাদেশে অনভিজ্ঞ চিকিৎসক বা ধাত্রীর হাতে সন্তান হতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মহিলা শারিরীকভাবে নানা ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হন৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা তারা জানতেও পারেন না৷

https://p.dw.com/p/O7xm
কে সুস্থ ?ছবি: picture-alliance/ dpa

রোগের নাম ফিস্টেল৷ অর্থাৎ মল বা মূত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসমর্থ হওয়া৷

সারাহ ওমেগা কিদানগাসির বয়স ৩৩৷ মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি শিকার হন ধর্ষণের এবং এর ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি৷ সন্তান জন্মদানের সময় দেখা দেয় হাজারো সমস্যা৷ বাচ্চার মাথা ছিল শরীরের তুলনায় বেশ বড়৷ প্রথমে বাড়িতে বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়৷ অনেকক্ষণ ধরে চলে টানা-হেঁচড়া৷ পরে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে নেওয়া হয় সারা ওমেগাকে৷ ততক্ষণে বাচ্চাটি মারা যায় এবং সিজারিয়ান করে বাচ্চাটি বের করা হয়৷ যন্ত্রণার শেষ কিন্তু এখনো হয়নি৷ অপারেশনের তিনদিন পর সারাহ লক্ষ্য করেন যে তাঁর যোনিপথ ছিঁড়ে গেছে৷ যোনি পথ এবং পায়ুপথ এক হয়ে গেছে৷ এর মূল কারণ ছিল বাচ্চার মাথার অস্বাভাবিক মাপ৷

Junge Mutter in Sierra Leone
অল্প বয়সে বাচ্চা হলে সমস্যা বাড়তেই থাকেছবি: picture-alliance/ ZB

সারা বিশ্বে প্রায় দু'লক্ষ মহিলা এই সমস্যায় ভুগছেন৷ তবে লজ্জায় অনেকেই এই রোগের কথা স্বীকার করতে চান না বা পারেন না তাই সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন৷ অনেক অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশে মায়েদের এই সমস্যাকে কোন সমস্যা বলে ধরে নেওয়া হয় না যার ফলে সঠিক কোন পরিসংখ্যানও সে দেশগুলো থেকে পাওয়া যায় না৷ সাহায্যও করা সম্ভব হয় না ভুক্তভোগীদের৷ সারাহ ওমেগা তাদের মধ্যেই একজন৷

সারাহ জানালেন, ‘‘যখনই কোন পুরুষ আমার সঙ্গে কোন ধরণের সখ্যতা বা বন্ধুত্ব করতে আগ্রহ দেখায় প্রথমে আমি খুব উৎসাহিত হই৷ আশার আলো দেখি৷ কিন্তু যত দিন যায় ততই আমার চোখে পড়ে অনীহা, অবহেলা এবং অযত্ন৷ তখন সময় কাটে একা৷ তখনই আমার সব সময় মনে হয় আমি যদি মরে যেতে পারতাম৷''

Bilder aus dem Township Katatura Namibia Windhuk
একটি সুস্থ মা-ই পারেন একটি সুস্থ জাতি উপহার দিতেছবি: DW / Koch

গত ১২ বছরে অনেক চেষ্টা করেও সারাহ কোন কাজ খুঁজে পাননি৷ এই দীর্ঘ সময়ে তিনি ছিলেন একটি মানসিক ক্লিনিকের রোগী৷

সারাহ একা নন

যে সমস্যায় সারাহ ভুগছে এ ধরণের সমস্যা মূলত সেসব মেয়েরই হয় যারা খুব অল্প বয়সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে৷ অবস্থা আরো করুণ হয় যদি অনভিজ্ঞ চিকিৎসক বা ধাত্রীর হাতে তারা পড়ে যায়৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে নাইজারে মাত্র ২৬ শতাংশ মহিলা সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যায়৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক লক্ষ প্রসূতি মায়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয়শ' মহিলাই মৃত্যুবরণ করেন৷ এর সঙ্গে যদি ফ্রান্সের তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে সেখানে মারা যাচ্ছে মাত্র দশ জন মহিলা৷ প্রসবকালে মারা যাওয়া ছাড়াও রয়েছে প্রসবকালীন নানা সমস্যা, যার সংখ্যাও কম নয়৷ ২০০৩ সালে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় প্রসবকালীন জটিলতা এড়াতে তৈরি করেছেন বেশ কিছু নেটওয়ার্ক৷ মূল লক্ষ্য হল দেশি-বিদেশি সব ধরণের সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং পরামর্শ যোগাড় করা, একসঙ্গে বসে আলোচনা করা, সচেতনতা দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে দেওয়া৷ এর মধ্যে একটি হল যে সব মেয়ে ইতিমধ্যেই এই সমস্যায় ভুগছে পুনরায় তাদের সমাজে ফিরিয়ে আনা, স্বাভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করা৷

Illustration Kinder und Müttersterblichkeit
এদের সুস্থ রাখার দায়িত্ব শুধু কি সরকারের?ছবি: picture-alliance/ dpa

এরপর কোন্ ধরণের পরিবর্তন এসেছে নাইজারে ? সে বিষয়ে জানালেন মারিয়ামা মুসা৷ তিনি ধাত্রী হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন৷ তিনি নিজেও এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত৷

মুসা জানান, ‘‘ আমরা প্রায় তিন হাজার মহিলাকে সনাক্ত করেছি যারা এ ধরণের সমস্যায় ভুগছে৷ এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার মহিলার ওপর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, সার্জারি করেছেন ২১ জন বিশেষজ্ঞ৷ এর মধ্যে ১৪ জন বিশেষজ্ঞ সারা দেশে ঘুরে ঘুরে অপারেশন করে যাচ্ছেন৷ যে সব মহিলার ওপর অপারেশন করা হয়েছে তাদের মধ্যে থেকে প্রায় এগারশ' আমাদের এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত৷ এবার এরাই এগিয়ে আসছে অন্যান্যদের সাহায্যে করতে, সমাজের ফিরিয়ে নিতে, একটি কাজের সন্ধান দিতে৷ ''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদন: আবদুল্লাহ আল-ফারূক