ফিলিপাইন্স হাইয়ানের আঘাত সামলাতে লড়ছে
দু’সপ্তাহ পরও টাইফুন হাইয়ানের আঘাত সামলাতে লড়ছে ফিলিপাইন্স৷ ৪০ লাখ গৃহহীন মানুষের মধ্যে অনেকেই এখনো মাথার ওপরে ফিরে পাননি ছাদ৷ অনাহার, রোগযন্ত্রণা আছে৷ দ্রুত পুনর্বাসনের পথেও বাধা-বিপত্তি অনেক৷
মন্থর গতির পুনর্বাসন
অসংখ্য গ্রাম, বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো ধ্বংসস্তূপ৷ জনজীবন স্বাভাবিক করতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে৷ বড় শহরগুলোর ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে নিজেদের ঘর এবং দোকান-পাট ঠিক করার কাজ শুরু করেছেন৷ তবে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে৷ কোথাও কোথাও এতদিনে শুধু একটু-আধটু ত্রান সামগ্রী পৌঁছাতে শুরু করেছে৷
আশ্রয় তাঁদের প্লাস্টিকের তাঁবু
টাইফুন হাইয়ানের আঘাতে ফিলিপাইন্সের অন্তত ৪০ লাখ মানুষ গৃহহারা৷ সর্বস্ব হারিয়ে অনেকে এখনো দিশেহারা৷ মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই, খাবার চাই, পরিধানের বস্ত্র চাই৷ প্রয়োজনের তুলনায় খুব কমই জুটছে তাঁদের৷ অনেকে প্লাস্টিকের তাঁবুর অস্থায়ী আশ্রয় পেয়েই ফেলছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস৷
বিমান দেখলে স্বস্তি
দুর্গতরা দেশ-বিদেশের ত্রান সহায়তার ওপর নির্ভরশীল৷ সরকার দুর্গতদের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছে৷ তবে একটু একটু করে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে৷ প্রত্যন্ত এলাকার দুর্গতদের জন্য আকাশ থেকে নেমে আসছে ত্রানসামগ্রী৷
আবর্জনার স্তূপে খাদ্যের সন্ধান
অনেক এলাকার মানুষ এখনো খাবার পাননি৷ তাই শিশু-কিশোরদের দেখা যাচ্ছে অনেক আগে কারো ফেলে দেয়া খাবারের সন্ধানে আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে অস্থির হতে৷ কেউ কেউ আবার পরিবারের সবার মুখে আহার তুলে দিতে নেমে পড়েছেন ভিক্ষার থলি হাতে৷
মা ও শিশুদের বিপর্যস্ত অবস্থা
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান ভ্যালেরি আমোসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হাইয়ানের আঘাতে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোয় অন্তত ১৫ লাখ শিশু এখন পুষ্টিহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে৷ না খেয়ে খেয়ে প্রায় ৮ লাখ মা এবং অন্তঃসত্তা নারীর জীবন বিপন্ন৷ বিশ্বব্যাংক অবশ্য আর্থিক সহায়তা দ্বিগুন করেছে৷ সে অনুযায়ী হাইয়ানের আঘাতের ক্ষতি ঝেড়ে ফেলতে ফিলিপাইন্স বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৪৮ কোটি ডলার পাবে৷
রাস্তাঘাটের উন্নতি
অনেক এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল৷ ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে৷ রাস্তা পরিষ্কার করে যান চলাচলের ব্যবস্থা করার কাজ প্রায় শেষ৷ এর ফলে, দুর্গতদের কাছে ত্রান সহায়তা পৌঁছানো সহজে সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ‘জার্মান ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিক্যাল রিলিফ’ ট্রাক এবং ট্রাক্টর সরবরাহ করে সড়ক যোগাযোগ পূর্বাবস্থায় ফেরানোয় সহায়তা করেছে৷
সর্বনাশের খণ্ডচিত্র
ফিলিপাইন্সের অনেক মানুষেরই আয়ের প্রধান উৎস ছিল গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি৷ হাইয়ান তাঁদেরও পথে বসিয়েছে৷ বানাতায়ান দ্বীপের কথাই ধরুন৷ টাইফুনের ধ্বংসযজ্ঞের আগে সেখানে ৮০ হাজার মুরগি ছিল৷ এখন তিন ভাগের একভাগও নেই৷ খামার মালিকরা মুরগিগুলোকে বাঁচাতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছেন না৷ ফিলিপাইন্সে এখন তীব্র গরম৷ প্লাস্টিক বা এটা-ওটা দিয়ে খাঁচা ঢেকে চলছে গরম থেকে মুরগিগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা৷
খাবার পানিও দুষ্প্রাপ্য
খাদ্য তো অনেক পরের কথা, দুর্গতদের অনেকে খাবার পানিও পাচ্ছেন না৷ বিশুদ্ধ পানি পান না করলে রোগভোগে মৃত্যু অনিবার্য৷ ডাইরিয়া, কলেরার মতো রোগ একবার শুরু হলে তা মহামারির আকার ধারণ করতে পারে৷ সে আশঙ্কা দূরে রাখতে শুরু হয়েছে পানি সরবরাহের কাজ৷ সরবরাহ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করার কাজে সহায়তা করতেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে জার্মানি৷
বিদ্যুৎ সংকট
টাইফুনের আঘাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত৷ তবে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জোরদার চেষ্টা চলছে৷ শত শত থাম ঝড়ে ভেঙে পড়ে আছে৷ নতুন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করাও তাই ফিলিপাইন্স সরকারের জন্য বিশাল এক চ্যালেঞ্জ৷
রোদে বই শুকানো
অনেক এলাকার স্কুলঘরও ভেঙে পড়েছে ঝড়ে৷ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ৷ শুরু করতে নেয়া হচ্ছে ছোট ছোট উদ্যোগ৷ বইপত্রও নেই৷ যা আছে সেগুলো ভিজে একাকার৷ দানবানতায়ানের এই স্কুলে তাই বই শুকানো হচ্ছে সূর্যের তাপে৷