1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফাতিমা ভুট্টোর ‘রক্ত এবং তরবারির গান’

৭ এপ্রিল ২০১০

জুলফিকার আলি ভুট্টোর নাতনি, বেনজির ভুট্টোর ভাতিঝি এবং মুর্তজা ভুট্টোর কন্যা তিনি৷ নাম ফাতিমা৷ যেই তিন ভুট্টো’র নামে তাঁর পরিচয় দেওয়া হল তাঁরা তিনজনই এখন মৃত৷

https://p.dw.com/p/Mokp
ফাতিমা ভুট্টো (মাঝে)ছবি: Abdul Sabooh

রাজনীতি ও ক্ষমতা নামক যে খুনরাঙা তরবারির সংঘাতে ফাতিমার এই পরিজনদের প্রাণ গিয়েছে তারই এক ব্যক্তিগত বয়ান তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর বই ‘রক্ত এবং তরবারির গান - এক কন্যার স্মৃতিকথা'তে৷ মাত্র ২৭ বছর বয়সি ফাতিমার আবেগাপ্লুত লেখনীতে ফুটে উঠেছে পাকিস্তানের সবচাইতে বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারটির অন্তর্গত দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েন এবং সেইসঙ্গে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই দেশটির গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক উত্থান পতনও৷

‘রক্ত এবং তরবারির গান'-এ ফাতিমা অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাবা মুর্তজা ভুট্টোর হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ায় হাত রয়েছে ফুপু বেনজির ভুট্টোর, জড়িত বেনজিরের স্বামী পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিও৷

বইটি প্রকাশের পর সিএনএন-আইবিএন এক ‘ডেভিলস অ্যাডভোকেট' অনুষ্ঠানে সঞ্চালক করণ থাপার ফাতিমার কাছে জানতে চান, ১৯৯৬ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর মুর্তজা ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডে জারদারি জড়িত ছিলেন কিনা৷ জবাবে ফাতিমা স্পষ্টভাষায় বলেন, ‘‘হ্যাঁ''৷ অবশ্য জারদারির বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি৷

Bildgalerie Pakistan Benazir Bhutto mit Familie 1978
ফাতিমা ভুট্টোর বাবা মুর্তজা ভুট্টো (নীচে বামে বসা)ছবি: AP

ফাতিমার বাবার হত্যাকাণ্ডের সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর এতে কোনো ভূমিকা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও হ্যাঁ৷'' কেন তিনি বেনজিরকে দায়ি মনে করেন তা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে ফাতিমা বলেন, ‘‘তিনি একটা আইনশৃঙ্খলাহীন রাষ্ট্র শাসন করছিলেন৷ আমার বাবা তাঁর দ্বিতীয় শাসনামলে নিহত হাজারো মানুষের একজন৷ তাই অবশ্যই তাঁর একটা নৈতিক দায়ভার আছে এবং হত্যাকাণ্ডের পর তা ধামাচাপা দেওয়ায় তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন৷ এমনকি আমাদেরকে মামলা দাখিল করতেও দেওয়া হয়নি৷''

বাবা মুর্তজা ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সেসময়ের অনেক ঘটনারই বিবরণ দিয়েছেন ফাতিমা৷ তিনি লিখেছেন, হত্যাকাণ্ডের প্রায় সব সাক্ষীকেই আটক করা হয়েছিল এবং বেনজির সরকার পতনের পরই কেবল তাদের মুক্তি দেওয়া হয়৷ ফাতিমা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা ব্যুরোর তৎকালীন প্রধান মেসুদ শরীফ তাঁর বাবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন৷ পরবর্তীতে বেনজিরের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হয় মেসুদ শরীফকে৷ ফাতিমা বলেন, ‘‘ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রকাশ্যে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে দলে নেওয়া অবশ্যই নির্দিষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ৷''

Benazir Bhutto
বেনজির ভুট্টোছবি: AP

নবীন এই লেখক আরও দাবি করেছেন, তাঁর বাবার হত্যাকাণ্ডের সময়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারি নাকি পরবর্তীতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘‘জারদারির হাতে মুর্তজা ভুট্টোর রক্ত লেগে আছে এবং আল্লাহই জানেন আরও কতো মানুষের রক্ত আছে তাঁর হাতে৷''

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পিতা জুলফিকার আলি ভূট্টো ১৯৭৭ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউল হক-এর নেতৃত্বাধীন সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে কারাগারে এবং পরে ফাঁসিতে নিহত হলে, নির্বাসিত জীবনযাপন শুরু করেন মুর্তজা৷ ১৯৭৯ সাল থেকে আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু করেন তিনি৷

১৯৮২ সালে আফগানিস্তানে জন্ম হয় ফাতিমার৷ তাঁর মা ফৌজিয়া ছিলেন আফগান৷ কিন্তু ওই বছরই কাবুল ছেড়ে দামাস্কাসে পাড়ি জমান মুর্তজা৷ পরবর্তী ১২ বছর বাবার সঙ্গে সিরিয়াতেই কেটেছে ফাতিমার শৈশব৷ কিন্তু ১৯৮৮ সালে জেনারেল জিয়ার নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে বেনজির পাকিস্তানের ক্ষমতায় এলেও দেশে ফিরে আসতে দেওয়া হয়নি মুর্তজাকে৷

১৯৯৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরেছিলেন মুর্তজা৷ এর মাত্র দু'বছর পরই করাচির রাস্তায় পুলিশের গুলিতে দেহরক্ষীসহ নিহত হন মূর্তজা ভুট্টো৷ ফাতিমা অভিযোগ করেছেন, বেনজিরের সঙ্গে মুর্তজার দ্বন্দ্ব এতোটাই প্রবল ছিল যে, অনেক অনুরোধ স্বত্ত্বেও পাকিস্তান পিপলস পার্টি থেকে ভাইকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেননি বেনজির৷

প্রতিবেদক : মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা : দেবারতি গুহ