প্লাস্টিক ব্যাগ দূষণের এক বড় উৎস
২০ মে ২০১১বাংলাদেশে প্লাস্টিক ব্যাগের প্রচলন শুরু হয়েছে প্রায় তিন দশক হতে চললো৷ যত্রতত্র ব্যবহার হতে থাকে প্লাস্টিকের ব্যাগ৷ তার উপর ব্যবহার শেষে নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলার কারণে একদিকে তা রাস্তাঘাট নোংরা করে ফেলে৷ অন্যদিকে প্লাস্টিকের ব্যাগ জমে আটকে যায় ড্রেনের পথ৷ ফলে পরিবেশের ব্যাপক দূষণ নিয়ে উচ্চকন্ঠ হন পরিবেশবাদীরা৷ ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার ঢাকা শহরে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে৷
এ প্রসঙ্গে ‘পরিবেশ বাঁচাও' আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান বললেন,‘‘দীর্ঘদিনধরে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা আন্দোলন করে আসছি৷ তারই প্রেক্ষিতে পরিবেশ আইন ১৯৯৫ এর আওতায় একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় ২০০৩ সালে৷ কিন্তু তার আগেই কার্যকরভাবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো অনেক জায়গায়৷''
এখন আগের সেই ব্যাগ ব্যবহার হয়না ঠিকই৷ কিন্তু নতুন আকারে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার আরো বেড়ে গেছে৷ আবু নাসের খান বললেন,‘‘এখন পলিথিন ব্যাগের মধ্যে হাতল নেই৷ কিন্তু অন্যভাবে এই ব্যাগগুলো চলে আসছে৷ এর কারণ হিসেবে দু'টো বিষয় কাজ করছে৷ প্রথমত সরকার যখন পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছিল তখন তার মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল৷ পরে এই বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকতার অভাব দেখা যায়৷ দ্বিতীয়ত পলিথিন ব্যাগের বিকল্প পাট বা চটের যেসমস্ত ব্যাগ দেওয়ার কথা ছিল এখন সেই ব্যাগগুলো পাওয়া যায়না বললেই চলে৷ বিকল্প হিসেবে যে ব্যাগগুলো রয়েছে সেগুলো যথেষ্ট ভালো নয়৷ কিছু ব্যাগ ব্যবহার উপযোগীই নয়৷ অন্যদিকে খুবই ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ৷ এই ঘনবসতির দেশে অল্প পলিথিন এবং অন্যান্য আবর্জনাগুলো ব্যাপক আকার ধারণ করে৷''
শুধু বাংলাদেশে নয়৷ ইউরোপের একজন নাগরিক গড়ে প্রতিবছর ৫০০ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করে৷ প্রায় ক্ষেত্রে যে ব্যাগগুলোর শেষ পরিণতি হয় সাগরে৷ ইউরোপে প্রতিবছর টন টন প্লাস্টিক, আবর্জনা হিসেবে ভূ-মধ্যসাগরে ফেলা হয়৷ যা পরিবেশের ক্ষতি করছে৷ যেকারণে ইউরোপীয় কমিশনও প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে৷ পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে এর উপর কর আরোপ করার কথাও ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷
ইউরোপের কিছু দেশে দোকান থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সুপার মার্কেটে বাজার শেষে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিতে হলে ক্রেতাদের তার জন্য দাম দিতে হয়৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন নতুন একটি ব্যাগ কিনতে আগ্রহী হননা ক্রেতারা৷ কেউ কেউ কাপড়ের ব্যাগ ব্যাবহার করছেন৷ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কমানোর সেরা পন্থা কি সেটা জানতে ইউরোপীয় কমিশন জনমত সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে৷
আবু নাসের খান বললেন, ‘‘সরকারের একার পক্ষে আইনটাকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়৷ আমরা যারা ক্রেতা বা সাধারণ মানুষ তাঁদেরও কিন্তু এই পলিথিন ব্যবহারের দিকটা দেখতে হবে৷ খাদ্যদ্রব্যে প্যাকিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে যে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো যে স্বাস্থ্যসম্মত নয় তা আমাদেরকে বুঝতে হবে৷''
ইউরোপীয় পরিবেশ কমিশনার ইয়ানেজ পোটোকনিক বলেছেন, ৫০ বছর আগেও কেবল একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক ব্যাগের কথা বলতে গেলে কেউ শোনেইনি৷ অথচ এখন আমরা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য ঐ ব্যাগ ব্যবহার করি এবং সেগুলো দশকের পর দশক পরিবেশ দূষিত করে চলে৷ কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সামাজিক সচেতনতা অত্যন্ত বড় এক ব্যাপার৷ তাই এই দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষা করার উপায় সম্পর্কে আমরা সবার মতামত চাচ্ছি৷
আবু নাসের খান বললেন, ‘‘অনেকগুলো বিষয় আছে যে জায়গাগুলোতে পলিথিনকে আমরা একেবারেই এড়িয়ে চলতে পারি৷ যেমন, বাজার করতে যাওয়ার সময় আমরা যদি কাপড় বা চটের একটি ব্যাগ সাথে করে নিয়ে যাই তাহলে চাল, ডাল এবং ডিমের মতো খাবার জিনিসগুলো তাতে করেই নিয়ে আসতে পারি৷ আসলে এগুলো আমাদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়৷''
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক