1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলো ভারতে

৮ আগস্ট ২০১০

ভারতের স্বাধীনতার ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে৷ এত বছর পরেও সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি৷ ২০১০ সালের ১লা এপ্রিল নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে৷ ছয় থেকে ১৪ বছরের প্রতিটি ছেলেমেয়ের জন্য প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/Oes3
Students, Jagriti, centre, school, Magadi, India, ভারত, মাগাদি, স্কুল, শিক্ষার্থী, প্রাথমিক
ভারতের মাগাদিতে একটি আবাসিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা (ফাইল ছবি)ছবি: UNICEF India/Sandip Biswas

শিশু অধিকার নিয়ে যে সব সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে তারা আশংকা প্রকাশ করে বলছে, সব শিশুকে হয়তো স্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে না৷ ভারতে প্রায় ৮০ লক্ষ শিশু স্কুলে যাচ্ছে না৷ স্কুলে না যাওয়া শিশুদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি৷ দারিদ্র, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া, স্কুলের অনুপোযোগী পরিবেশকেই – স্কুলে না যাওয়া এবং স্কুল শিক্ষায় অনীহার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এখন প্রশ্ন উঠেছে, নতুন আইন কি পারবে প্রতিটি শিশুকে স্কুলমুখী করতে ?

মহারাষ্ট্রের মেয়ে মনীষা খান্দাভাল৷ ছোট একটি ঘরে সে তার বাবা-মাকে নিয়ে থাকে৷

মনীষা তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছে, তার বাবা-মা কাজে৷ তারা ইটের ভাটায় ইট তৈরি করে৷ থালা-বাসন ধুয়ে মনীষা ঘর গোছাতে লেগে যায়৷ গত দু'বছর ধরে মনীষা ঘরের কাজ দেখাশোনা করছে৷ প্রতিদিন সকালে বাবা-মায়ের সঙ্গেই ঘুম থেকে উঠতে হয় তাকে৷ সকালের খাবার তৈরি করতে হয়৷ তারপর সে নিজে তৈরি হয় স্কুলে যাওয়ার জন্য৷ বেসরকারি সংস্থা ইন্ডিয়া স্পনসরশিপ কমিটি একটি স্কুল চালাচ্ছে৷ মনীষা সেখানে সেলাই এবং হাতের বিভিন্ন কাজ শিখছে৷ সত্যিকার স্কুল বলতে যা বোঝায় এটা তা নয়৷ দু' বছর আগে মনীষা স্কুলে যেত৷ হঠাৎ করেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়৷ ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে মনীষা৷ মনীষা জানাল, ‘আমি স্কুলে যেতে চাই৷ কিন্তু সেখানে প্রচুর খরচ৷ আমাকে আমার ছোট ভাই-বোনের দেখাশোনা করতে হয়৷ এছাড়া বাড়িতে অনেক কাজ, সেগুলোও আমাকে করতে হয়৷'

এর বাইরেও মনীষা কাজের অন্ত নেই৷ সে তার বাবা-মাকেও ইঁট তৈরিতে সাহায্য করে৷প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘন্টা ইটের ভাটায় সে সময় কাটায়৷ ক্লান্ত মনীষার কন্ঠ,‘ প্রতিদিন সাড়ে চারটা পর্যন্ত আমাকে ইঁটের ভাটায় কাজ করতে হয়৷ বালির মণ্ড প্রস্তুত রাখতে হয় পরদিন ইঁট তৈরি করার জন্য৷'

সূর্যের তাপ বাড়ছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে৷ প্রচন্ড তীব্র এই রোদে কাজ থেমে থাকছে না৷ ইঁট তৈরির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে৷ দুপুর দু'টার মধ্যে সাজানো ইঁট পোড়ানোর জন্য ভাটায় ভরে দিতে হয়৷

মনীষা এবং তার মা এখানে কাজ করে৷ মনীষার মা প্রতিদিন ১৭ রুপি করে পায়৷ ১৭ রুপি জার্মানিতে ৩০ সেন্টের কাছাকাছি৷ মনীষার বাবা-মা খুব ভাল করেই জানে যে শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ৷ মনীষার স্কুলে যাওয়া উচিৎ৷ কিন্তু অভাবের দরুণ তাকে কাজ করতে হচ্ছে৷ তার মা সারিতা খান্দাভাল বললেন, ‘স্কুল অনেক দূরে৷ প্রতিদিন নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা একটি সমস্যা৷ এছাড়া স্কুলের খরচ চালানোর মত যথেষ্ট টাকা-পয়সা আমাদের নেই৷ আমাদের প্রতিদিন খাবার জোটানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে হয়৷ স্কুলের জন্য প্রয়োজন ইউনিফর্ম, বই-খাতা, জুতো, পেন্সিল, কলম আরো কত কী ! এসব আমাদের সামর্থ্যের বাইরে৷'

নতুন আইন অনুযায়ী ১লা এপ্রিল ২০১০ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু মনীষার পরিবার তা জানে না৷ সরকারি স্কুলগুলো মনে করছে, এই আইনের খবর এখনো সবাই জানে না৷ তাই স্কুলগুলো এখনো প্রতিবছর ভর্তির সময় টিউশন ফি নিচ্ছে যা প্রায় ১০ ইউরো অর্থাৎ ৬১০ রুপির সমান৷ এছাড়া প্রতি মাসে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ ইউরো অর্থাৎ প্রায় ১৮১ রুপি নেওয়া হচ্ছে৷

মনীষার পরিবার মাসে যা উপার্জন করে তা ইউরোর হিসেবে ৩২ ইউরো অর্থাৎ ১৯ শ রুপির বেশি হবেনা৷এই অর্থ দিয়ে পুরো মাস পরিবারকে চলতে হয়৷ এই স্বল্প অর্থ দিয়ে স্কুলের বিশাল ব্যয় বহন করা সম্ভব না৷ তাই মনীষার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনীষা কাজ করবে, তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে অন্য তিনটি সন্তান পড়াশোনা করবে – যতদিন সম্ভব৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক