প্রতিবাদী ছাত্রী গুরমেহর কৌরের পাশে সব শ্রেণির মানুষ
ধর্ষণের হুমকি, ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে সম্মানহানীর পরও ভারতীয় জনতা পার্টির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদকে পরোয়া করেননি শহিদ সৈনিকের কন্যা৷ যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির জন্য লড়েছেন, লড়ছেন তিনি৷ তবে এ লড়াই তাঁর একার নয়৷
ডেরেক ও’ব্রায়েন, রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা
ইনি নিজে মুক্তমনা৷ আলোচনা, সমালোচনা পছন্দ করেন৷ পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের ওপরের সারির নেতা৷ রাজ্যসভায় দলের সাংসদের নেতৃত্ব দেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি শুধু গুরমেহরকে নয়, প্রতিবাদী সমস্ত মানু্ষের কণ্ঠরোধ করতে বদ্ধপরিকর৷ নির্লজ্জভাবে কেন্দ্রের সরকার এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে মদত দিচ্ছে৷ তবে তৃণমূল গুরমেহরের মতো মেয়ের পাশে আছে৷ ওঁকে বলতে চাই, ভয় পেয়ো না৷ লড়াই জারি রাখো৷ দিল্লিতে ফিরে এসো তুমি৷’’
নাদিমূল হক, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ
এই সাংসদ মনে করেন, ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ফলেই দিল্লি ছেড়ে পাঞ্জাবে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন গুরমেহর৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষাঙ্গনে নোংরা রাজনীতি ঢুকিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরির ষড়যন্ত্র করছে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ গুরমেহর তার শিকার হয়েছেন৷ এখন ভারত সরকারের উচিত গুরমেহরের ভয় দূর করে তাঁকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে দিল্লিতে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া৷’’
মধুমিতা চক্রবর্তী, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী
কলকাতায় থাকেন৷ কাজের প্রয়োজনে দু-তিন মাস অন্তর দিল্লিতে আসেন৷ একটি বেসরকারি স্বেচ্চাসেবী সংস্থার সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন৷ দপ্তরের কাজে দিল্লিতে এসে গুরমেহরের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন৷ জানালেন, ‘‘গুরমেহর শুধু প্রতিবাদী একজন ছাত্রী নন, উনি শান্তিপ্রিয়, যুদ্ধবিরোধী সাহসী মেয়ে৷ বর্তমান সমাজে এমন মেয়ের খুব প্রয়োজন৷ হিংসা আর হানাহানির যুগে ঘরে ঘরে গুরমেহর দরকার৷ তাই একবার ওঁর সঙ্গে সক্ষাত করবো৷’’
অর্চণ সেনগুপ্ত, গুজরাটের একটি পাবলিসার্স কোম্পানির দিল্লির দায়িত্ব প্রাপ্ত মার্কেটিং ম্যানেজার
কলকাতার বাসিন্দা অর্চণ দিল্লিতে রয়েছেন ২০ বছর ধরে৷ ছাত্র আন্দোলন ও গণ আন্দোলন থেকে বাঁচার রসদ খুঁজে পান তিনি৷ ওঁর কথায়, ‘‘রামজস কলেজের ঘটনা আর পাঁচজন মানুষকে নাড়া না দিলেও অন্য একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী গুরমেহরের মনে দাগ কেটেছে৷ গুরমেহর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানেন৷ সমাজ ও দেশ বদলের স্বপ্ন দেখেন৷ কিন্তু যখন তাঁকেই ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দেওয়া হয়, তখন আমারো প্রতিবাদে সামিল হতে ইচ্ছে হয়৷’’
শ্রাবণী মান্না, স্কুলছাত্রী
শ্রাবণী বাবা-মা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন৷ টিভিতে, সংবাদপত্রে গুরমেহরকে দেখেছেন৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অন্য কারও হস্তক্ষেপকে অন্যায় মনে করেন৷ জানালেন, ‘‘গুরমেহর যদি আমার দিদি হতো, খুব ভালো হতো৷ অনেক কিছু শিখতে পারতাম৷ তবে তিনি যেখানেই থাকুক আমি তাঁকে নিজের দিদির মতো মনে করবো৷ ওঁর পাশে আছি, থাকবো৷ চাইলে ওঁর লড়াইয়ে অংশ নেবো৷’’
জগদীশ সিং কুমাওয়াত, ডাক্তারির স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্র
মাস ছ’য়েক আগে রাজস্থান থেকে দিল্লি আসা জগদীশ দেখা করতে চান লেডি শ্রীরাম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী গুরমেহরের সঙ্গে৷ ওঁর কথায়, ‘‘অন্যায়ের প্রতিবাদে একটি ছাত্রী নিজের ফেসবুক ও টুইটারে একাধিক ছবি পোস্ট করে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনকে তোয়াক্কা না করার কথা ঘোষণা করছে৷ এটা ভারতের মতো দেশে খুব একটা দেখা যায় না৷ এই সাহস দেখানোয় তাঁকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার খবর শোনা থেকে গুরমেহরের সঙ্গে দেখা করতে চাইছি৷’’
অনুপ রায়, দিল্লিতে কর্মরত পেশাদার বিজ্ঞাপন কর্মী
এক দশকের বেশি সময় ধরে দিল্লিতে থাকেন অনুপ৷ বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনে সরকারি দপ্তরে যাতায়াত আছে৷ তিনি বললেন, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরে এই ছাত্রীটির খবর পড়তে পড়তে ওঁর প্রতি সমবেদনা জন্মেছে৷ যাঁর বাবা দুই দেশের যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি নিজে যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন৷ এখন যাঁরা ক্ষুদ্র রাজনীতির কারণে ওঁকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্য করুণা হচ্ছে৷ গুরমেহরের পাশে আমাদের মতো কোটি কোটি মানুষ আছে৷’’
আশাদুল আলি, বেসরকারি সংস্থার কর্মী
দিল্লির গৌতমনগরে একটি বেসরকারি কোম্পানির ঠিকা কর্মী তিনি৷ কিন্তু সব খবর রাখা চাই৷ তিনি জানান, ‘‘রামজস কলেজে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওমর খালিদের সভার আয়োজন ও এবিভিপি সমর্থকদের তা ভেস্তে দেওয়ার খবর জানি৷ পরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় ফেসবুকে গুরমেহরকে খুন ও ধর্ষণের হুমকির কথা শুনেছি৷ কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসন কী করছে তা জানি না৷ গুরমেহরের ক্ষতি করার চেষ্টা হলে আম জনতা ক্ষেপে যাবে৷’’
গৌতম রায়, সেলসম্যান
বাড়ি বাড়ি ঘুরে জিনিস বিক্রি করে বেড়ান গৌতম৷ প্রতিদিন হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়৷ উনি বললেন, ‘‘রাজনীতিতে যেমন হয়, ভারতে এখন ছাত্র রাজীতিতেও তেমটা শুরু হয়েছে৷ মতের মিল না থাকলে ‘খুন করে দাও’৷ এ সব চলতে পারে না৷ প্রতিবাদীর পাশে দাঁড়িয়ে আরও বড় প্রতিবাদ সংগঠিত করতে হবে আমাদের৷’’
রূপা ঘোষ, পরিচারিকা
সেই ৩০ বছর আগে স্বামীর হাত ধরে দিল্লি আসা রূপা এখন ‘রূপা মাসি’৷ ৪-৫টা বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান তিনি৷ বাড়িতে টিভি না থাকলেও ছেলের কাছে গুরমেহরের কথা শুনেছেন৷ রূপা জানান, ‘‘গুরমেহরের বাবা লড়াইয়ের ময়দানে প্রাণ হারিয়েছেন৷ কিন্তু তাতে আম জনতার কি স্বার্থ রক্ষা হয়? যে মেয়েটা মাত্র দু’বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিল, সেই এখন যুদ্ধের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে৷ এর থেকে ভালো আর কিই-বা হতে পারে?’’
আলাগীর সর্দার, গাড়ি চালক
আলাগীর স্কুলে যাননি৷ স্কুল দেখেছেন দূর থেকে৷ গুরমেহরের নামও শোনেননি৷ তবে প্রতিবেদকের কাছে গুরমেহরের কথা শুনে বেশ ক্ষু্ব্ধ হন তিনি৷ বলেন, ‘‘ও তো আমার বোনের মতো তাহলে৷ বাড়িতে আমার বোন যে কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করে৷ গুরমেহরকে আমার বোনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবো৷’’