প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি: হামিংবার্ড
মাত্র তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এই পাখিগুলির চেহারা, খাবার-দাবার, আচার-আচরণ, সবই অসাধারণ৷ ফুলের মধু খায় মৌমাছিদের মতো; পিছন দিকে উড়তে পারে পোকামাকড়ের মতো; আবার হাজার হাজার মাইল পরিভ্রমণ করে...
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পাখি
ট্রকিলিডে পরিবারের ক্ষুদ্রতম সদস্য এই ‘বি হামিংবার্ড’ বা মৌমাছি হামিংবার্ড, ঠোঁট সুদ্ধু মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, ওজনে আড়াই গ্রাম বা দু’টি ডাক টিকিটের সমান৷ হামিংবার্ডরা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা হয়৷ এদের বাস প্রধানত দক্ষিণ ও উত্তর অ্যামেরিকায়৷ পক্ষীবিজ্ঞানীরা ৩০০ থেকে ৩৫০ ধরনের হামিংবার্ড শনাক্ত করেছেন৷
তলোয়ারঠুঁটো
হামিংবার্ডরা প্রধানত ফুলের মধু খেয়ে বেঁচে থাকে৷ ফুলের মধ্যে ঠোঁট ঢুকিয়ে খায় বলে নানা ফুলের আকার অনুযায়ী হামিংবার্ডদের ঠোঁটের আকারেরও বিবর্তন ঘটেছে৷ ছবিতে যে তলোয়ারঠুঁটো হামিংবার্ডকে দেখা যাচ্ছে, শরীর (এবং লেজের) তুলনায় তার ঠোঁটের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর অন্য যে কোনো পাখির চেয়ে বেশি৷
পাখা ঝাপটায় বিদ্যুৎগতিতে
হামিংবার্ড নামটা এসেছে ‘হামিং’ বা অতি দ্রুত পাখা ঝাপটানোর একটানা শব্দ থেকে, যেন ভোমরার গুঞ্জন৷ সাধারণভাবে হামিংবার্ডরা সেকেন্ডে ৫০ বার পাখা ঝাপটায় – ওরা আবার পাখা ঝাপটায় ইংরেজি আটের মতো করে, সামনে ও পিছনে, ফলে ওরাই একমাত্র পাখি, যারা সামনের দিকে আবার পিছনের দিকেও উড়তে পারে৷ আর হেলিকপ্টারের মতো বাতাসে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পাখা নাড়া তো আছেই, যাকে ইংরেজিতে বলে ‘হোভারিং’, যেমন ‘হোভারক্রাফ্ট’৷
উচ্চগতিতে বেঁচে থাকা
হামিংবার্ডদের হৃৎস্পন্দন মিনিটে ১,২৬০ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যেখানে মানুষের হৃৎস্পন্দন থাকে মিনিটে ৬০ থেকে ৮০-র মধ্যে৷ হামিংবার্ডরা মিনিটে ২৫০ বার অবধি নিঃশ্বাস নিতে পারে৷ হামিংবার্ডদের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা ৪০ কি ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাতে তা কমে দাঁড়ায় ১৮ ডিগ্রিতে, হৃৎস্পন্দন কমে হয় মিনিটে ৫০ থেকে ১৮০৷ হামিংবার্ডরা এই সময় যে অর্ধচেতন অবস্থায় থাকে, তাকে ইংরেজিতে বলে ‘টর্পর’৷
মেটাবলিজম
পরিভাষায় যাকে বলে বিপাক, অথবা সহজ কথায়, শরীর যেভাবে খাদ্যকে শক্তিতে পরিণত করে ও সেই শক্তি ব্যয় করে৷ হামিংবার্ডদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি জীবজগতে দ্রুততম৷ তাই বেচারাদের প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর মধু আহরণ করতে হয় – চিনির হিসেবে তারা প্রতিদিন নিজের ওজনের অর্ধেক পরিমাণ চিনি খায়৷ ফুলের মধু শরীরে গিয়ে শক্তিতে পরিণত হতে ৪৫ মিনিটের বেশি লাগে না৷
দূরের পথ
ছবিতে যে রুবি-থ্রোটেড হামিংবার্ড পাখিটিকে দেখা যাচ্ছে, তারা মেক্সিকো উপসাগরের উপর দিয়ে ৮০০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে অপর পাড়ে পৌঁছায় – একবারও না থেমে৷ অপরদিকে মাত্র তিন ইঞ্চি লম্বা রুফাস হামিংবার্ড গ্রীষ্মের শেষে অ্যালাস্কা থেকে মেক্সিকোয় যায় ৩,৯০০ মাইল পার হয়ে – যা কিনা তার আকারের হিসেবে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে দীর্ঘতম যাত্রা৷
নীড়
বহু প্রজাতির হামিংবার্ড মাকড়শার জাল আর শ্যাওলা দিয়ে তাদের ছোট্ট বাসাগুলোকে বেঁধে রাখে৷ এর ফলে বাসার কাঠামোটা ভালো হয়, আবার মাকড়শার জাল টানলে বাড়ে বলে, বাচ্চা হামিংবার্ডরা যত বড় হতে থাকে, বাসাটাও তত বড় হতে থাকে৷ হামিংবার্ডরা দু’টি ছোট সাদা ডিম পাড়ে – স্বভাবতই সেগুলো পক্ষিজগতের সবচেয়ে ছোট ডিম৷ তবে তা থেকে দুই কি তিন সপ্তাহ পরে বের হয় দু’টি কচি হামিংবার্ড...