পৃথিবীর ওজোনস্তরের ফুটো দিন দিন বড় হচ্ছে
২১ মে ২০১০আকাশের নিলাভ রঙ-ই হচ্ছে ওজোন স্তরের রং৷ ওজোন অক্সিজেনের একটি রূপভেদ৷ যার রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর একত্রিকরণ৷ সূর্যের 'অতিবেগুনি রশ্মি' এই ওজোন স্তর শোষণ করে নেয়, যার জন্য সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে পৃথিবীর প্রাণীসহ উদ্ভিদজগতের বেঁচে থাকা সম্ভব হয়েছে৷
পৃথিবীর পরিবেশ ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে, তাপমাত্রা যাচ্ছে বেড়ে, বাড়ছে পরিবেশগত অসামঞ্জস্য অবস্থা৷ আর এই অসামঞ্জস্যের অন্যতম প্রধান কারণ পৃথিবীকে ঘিরে থাকা ওজোনস্তরের ক্ষয় এবং এর মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি৷ যে ওজোনস্তর অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে৷
আজ থেকে ২৫ বছর আগে এক দল আবহাওয়া বিজ্ঞানী যখন অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণা চালাচ্ছিলেন, তখনই তাদের সুক্ষ্ন আকাশ পর্যবেক্ষক যন্ত্রে ভেসে ওঠে এক ফুটো৷ যার আকার দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে৷ আর এর মাধ্যমেই সূর্যের 'অতিবেগুনি রশ্মি' এসে পৌঁছাচ্ছে পৃথিবীতে৷ বিজ্ঞানীরা যখন তাদের এই আবিস্কারের কথা প্রকাশ করলেন, তখন থেকে সারা বিশ্বে এটি একটি প্রধান আলোচ্য বিষয়৷
২৫ বছর আগে যে বিজ্ঞানীর দল এই ফুটো আবিস্কার করেছিলেন তাদের নেতা ড. জো ফারম্যান৷ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি জানালেন, অবস্থা দিন দিন আরও শোচনীয় হচ্ছে৷ আর এ জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর এবং অতি শিগগিরই কোন ব্যবস্থা নিতে হবে৷
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ২০০৮ সালে ওজোনস্তরের এই ফাটলের পরিমাণ ছিল ২৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার৷ আর ২০০৬ সালে ছিল ২৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার৷ ২০০৯ সালে এই পরিমাণটি একটু কম হলেও তা কোন ভাবেই আশঙ্কার বাইরে নয়৷ ২০০৯ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারে৷
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গিয়ার ব্রাথেন কয়েকদিন আগে সংবাদ সংস্থাগুলোকে বলছেন, 'শীত ও গ্রীষ্মে তাপের তারতম্যের কারণে দুই মেরুর ওজোনস্তরে বছরের পর বছর ধরে বেশ পরিবর্তন লক্ষণীয়৷ সুমেরুর ওজোনস্তর কুমেরুর চেয়ে বেশি পরিবর্তনশীল হলেও পৃথিবীর তাপমাত্রা তথা সামগ্রিক পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য কুমেরুর ওজোনস্তর বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷'
১৯২০ সালের পর থেকে সিএফসিসহ কলকারখানার বিভিন্ন গ্যাসের কারণে পৃথিবীর পরিবেশগত প্রাকৃতিক ধারা বদলে যেতে থাকে৷ বিপর্যস্ত হতে থাকে পরিবেশ৷ যখন আমাদের টনক নড়ে তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল৷ এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা তৈরি হয় এবং ১৯৮৭ সালে সিএফসি ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহার-সংক্রান্ত মন্ট্রিল চুক্তি সম্পাদিত হয়৷ এরই ফলস্বরূপ বিজ্ঞানীরা দেখতে পান কিছুটা উন্নতি৷
কুমেরুর ওজোনস্তরে ক্ষয়ের সাম্প্রতিক কয়েক বছরের তথ্য সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে৷ এ সমস্যা মোকাবিলার জরুরি সমাধান খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা৷ ভয়াবহ এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই৷ ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি দেশের সরকারকে৷ আর কাজটি করা যেহেতু কোনো একটি দেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এ জন্য দরকার সারা বিশ্বের ঐকমত্য৷ সে লক্ষ্যে নানা উপলক্ষে দফায় দফায় বিশ্বনেতারা বসছেন, প্রতিজ্ঞা আর চুক্তি করছেন৷ কিন্তু এর কতটুকু সত্যিকারের উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা, সে ব্যাপারে বিতর্ক আছে ঢের৷ আর এত কিছুর মধ্যেও বিজ্ঞানীরা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন সামনের ভয়াবহ দিনের কথা৷
প্রতিবেদন: সাগর সওয়ার
সসম্পাদনা: দেবারতি গুহ