পৃথিবীকে জার্মানির ১০টি উপহার
আবিষ্কার বা উদ্ভাবনে জার্মানদের খ্যাতি আছে৷ দৈনন্দিন জীবনে আমরা এমন অনেক কিছুই ব্যবহার করি, যেসব কোনো-না-কোনোভাবে জার্মানদের তৈরি৷ ছবিঘরে থাকছে সেরকম ১০টি জিনিসের কথা৷
‘হোল পাঞ্চ’
অফিসে কাগজ ছিদ্র করে ফাইলবন্দি করার কাজে যে যন্ত্রটি ব্যবহরার করা হয় সেই ‘হোল পাঞ্চ’ মেশিন কিন্তু জার্মানির মাটিয়াস টিল এবং ফ্রিডরিশ স্যোনেকেন-এর মস্তিষ্কপ্রসূত৷ হ্যাঁ, এমন একটি দরকারি জিনিস তৈরির ভাবনা সবার আগে তাঁদের মাথাতেই এসেছিল৷ ১৮৮৬ সালের ১৪ই নভেম্বরে এর পেটেন্ট করিয়েছিলেন তাঁরা৷
এমপি থ্রি
অডিও-র বাজারে বিপ্লব ঘটিয়েছে এমপি থ্রি৷ ১৯৮০-র দশকে এমপিথ্রি বা এমপিইজি-২ অডিও লেয়ার-৩ প্রথমে নিয়ে এসেছিলেন জার্মানিরই কার্লহাইনৎস ব্রান্ডেনবুর্গ৷
ইলেক্ট্রিক ড্রিল
দেয়াল ফুটো বা ছিদ্র করার কাজটি আজকাল ইলেক্ট্রিক ড্রিল মেশিন ছাড়া করার কথা ভাবাই যায় না৷ এ যন্ত্রটি প্রথম তৈরি করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়, ১৮৮৯ সালে৷ তৈরি করেছিলেন এক জার্মান, নাম ভিলহেল্ম এমিল৷ জার্মানির লুডভিগ্সবুর্গের মানুষ হলেও তখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছিলেন তিনি৷
ফান্টা
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে৷ হিটলারের বাহিনীকে ঘায়েল করার সব পন্থা অবলম্বন করার ভাবনা থেকে জার্মানিতে কোকাকোলা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ জার্মানিতে তখন কোকাকোলার প্রধান-এর দায়িত্বে ছিলেন ম্যাক্স কিথ৷ জার্মানির বাজারে নতুন একটি পানীয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি৷ সেই ভাবনা থেকে ১৯৪১ সালে পুরোপুরি জার্মান উপকরণ দিয়ে তৈরি হলো কোমল পানীয় ফান্টা৷
কফি ফিল্টার
জার্মান গৃহবধু মেলিটা বেনৎস-এর কেন যেন নিজের বানানো কফির স্বাদটা ভালো লাগছিল না৷ তাই একদিন তিনি ভাবলেন, কফি তৈরির পর কাগজ দিয়ে ছেঁকে নেয়ার ব্যবস্থা করলে কেমন হয়? ছেঁকে দেখলেন ভালোই লাগে৷ ১৯০৮ সালে এভাবেই ড্রেসডেনের এই গৃহবধু তৈরি করেছিলেন কফি ফিল্টার৷ সে বছরই নিজের উদ্ভাবিত জিনিসটি পেটেন্টও করান মেলিটা৷ মেলিটা গ্রুপ-এর কফি ফিল্টার এখনো খুব চলে৷ প্রায় ৩,৩০০ জন কর্মী কাজ করেন এই কোম্পানিতে৷
স্টিকি টেপ
অস্কার ট্রোপলোভিৎস বেশ কয়েকটি জিনিসের উদ্ভাবক৷ শুধু নিভিয়া আর লাবেলো-র জন্যই হয়ত জার্মানির এই ফার্মাসিস্ট প্রসাধনীর জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন৷ তবে নিভিয়া বা লাবেলো তো বিশ্বের অনেক বাড়িতেই নেই, কিন্তু স্কচ টেপ বা স্টিকি টেপ অধিকাংশ বাড়িতে নিশ্চয়ই আছে৷ কাগজ বা কোনো পাতলা বস্তু জোড়া দিতে গেলেই দরকার পড়ে এই স্টিকি টেপ বা সেলো টেপের৷ ১৯০১ সালে এ জিনিস প্রথম তৈরি করেছিলেন অস্কার ট্রোপলোভিৎস৷
অ্যাকর্ডিয়ন
এই বাদ্যযন্ত্রটির উদ্ভাবকও এক জার্মান৷ নাম ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডরিশ লুডভিগ বুশমান৷ ১৮২২ সালে বার্লিনে এর ডিজাইন করেছিলেন তিনি৷ এখন ইউরোপ-অ্যামেরিকার অলি-গলিতে তো বটেই, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সুরের সুধা ছড়ায় অ্যাকর্ডিয়ন৷
ক্রিস্টমাস গাছ
সান্তা ক্লস (বানানভেদে সান্তা বা স্যান্টা ক্লজ) আর ক্রিস্টমাস ট্রি ছাড়া বড়দিনের উৎসবের কথা ভাবাই যায় না৷ সান্তা ক্লজ-এর ‘জন্ম’ ফিনল্যান্ডে হলেও ক্রিস্টমাস ট্রি-র চল কিন্তু জার্মানিতেই প্রথম শুরু হয়েছিল৷ ঊনিশ শতকে স্রেফ ডেকোরেশন বা উৎসবে ঘর সাজানোর জন্যই প্রথম ক্রিস্টমাস ট্রি-র ব্যবহার করা হয়েছিল৷ এখন অবশ্য তা এ উৎসবের এক অপরিহার্য অঙ্গ!
ফুটবল ক্লিট বা ‘স্পাইক’
ফুটবল বুটে প্রথম ‘ক্লিট’ বা ‘স্পাইক’-এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল ব্রিটেনে৷ তবে এ যুগে বুটের নীচে স্ক্রু লাগানো যে স্পাইক চলছে, এ সব প্রথম বাজারে নিয়ে আসে জার্মানির আডিডাস৷ মূলত খেলাধুলার সামগ্রী উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আডি ডাসলারের উদ্যোগেই ১৯৫৪ সালে প্রথম বুটের সঙ্গে লাগানো হয় এমন স্পাইক৷ জার্মানি সে বছরই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল৷
ট্যাক্সির মিটার
ট্যাক্সিচালকদের খেয়ালখুশিমতো ভাড়া চাওয়ার পথ বন্ধ করার কৃতিত্বও এক জার্মান ভদ্রলোকের৷ বার্লিনের ভিলহেল্ম গুস্তাভ ব্রুন ১৮৯১ সালে তৈরি করেছিলেন গাড়িতে ব্যবহার করার উপযোগী মিটার৷ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য নয়, ব্রুন এমন মিটার তৈরি করেছিলেন শিল্পপতি এবং গাড়ির জগতের পরিচিত নাম গটলিব ডাইমলারের জন্য৷