পা-ফোলা রোগের কারণ মশা
১৯ এপ্রিল ২০১৪ম্যালেরিয়া ছড়ানোর জন্য যে মশা দায়ী, এটা সবাই জানে৷ তবে পা-ফোলা রোগের কারণও যে মশা, সেটা হয়ত অনেকেই জানে না৷
বিশ্বের প্রায় ১২ কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন৷ যার প্রায় ৬৫ শতাংশেরই বাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়৷ এলিফ্যান্টাইটিস বা পা-ফোলা রোগ একজন রোগীর জীবন ধ্বংস করে দেয়৷
ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসক ডা. মুহসীন জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পা-ফোলা রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি রোগীদের জন্য আরও ভালো চিকিৎসার উপায় খুঁজছেন৷ তিনি জানান, ‘‘লম্বা সাদা কৃমির জন্য এই রোগ হয়ে থাকে৷ এই কৃমির তিনটি প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো পা-ফোলা রোগের জন্য দায়ী৷ এই তিন প্রজাতি হলো – উখারিয়া বানক্রফটি, ব্রুগিয়া মালায়ি ও ব্রুগিয়া টিমোরি৷ একমাত্র ইন্দোনেশিয়াতেই এই তিন প্রজাতির কৃমি পাওয়া যায়৷''
মানবদেহে মশা কামড় দেয়ার পর সেটা কীভাবে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তা বের করার চেষ্টা করছেন ডা. মুহসীন৷ তিনি জানতে চান, কৃমির লার্ভা কীভাবে কামড় দেয়ার স্থান থেকে দেহের অন্য এলাকায় যায়৷ এটা জানতে তিনি ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷
কৃমির লার্ভা ত্বকের নীচ দিয়ে গিয়ে ফুসফুসে হাজির হয়, যেখানে সেগুলো ছোট কৃমিতে পরিণত হয়৷
ডা. মুহসীন বলেন, ‘‘প্রাণীর দেহের মতো এই প্রক্রিয়াটা মানুষের শরীরের জন্যও প্রযোজ্য৷ এরপর লার্ভা লসিকানালী ধমনীতে গিয়ে পূর্ণবয়স্ক কৃমিতে পরিণত হয়৷ সেখানে তারা লসিকানালী ধমনী ব্লক করে দেয়৷ ফলে পা, অণ্ডকোষের থলে বা মেয়েদের স্তন বড় হতে থাকে৷ যুগ যুগ ধরে কৃমি সেখানে থেকে যায়৷''
তিন বছর ধরে গবেষণা শেষে ডা. মুহসীন এখন একটা ওষুধের প্রোটোটাইপ উদ্ভাবন করেছেন৷ তাঁর আশা, এটা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং পা-ফোলা রোগের কারণ বিনষ্টে সহায়তা করবে৷ ‘‘আমি মানবদেহে এই ওষুধটা পরীক্ষা করে দেখতে চাই৷ জানতে চাই, এটা মানুষের শরীরে কাজ করে কিনা৷ আমার গবেষণায় যে প্রোটিন ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা মানবদেহেও একইরকমভাবে কাজ করে৷ এই প্রোটিন প্রতিষেধক কোষকে কার্যকর করার মাধ্যমে ত্বকে থাকা লার্ভাকে ধ্বংস করে৷''
জার্মানি যদি মানবদেহের ওপর পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়, তাহলে এই গবেষণা হয়তো একটা ভয়ংকর রোগ সারাতে সহায়তা করবে৷