1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাথরে কী প্রাণ যাবে সখিনার

৭ জুলাই ২০১০

ইরানের কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন সখিনা আসতিয়ানি৷ মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে তাঁর৷ আর তা কার্যকর করা হবে পাথর ছুড়ে৷ মধ্যযুগীয় এই বর্বরতা থেকে সখিনাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানবাধিকারকর্মীরা৷

https://p.dw.com/p/OCMk
এঁদের মতো এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সোচ্চার হয়, কেবল তাহলেই বাঁচানো সম্ভব সখিনাকেছবি: AP

তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপই এখন একমাত্র উপায়৷

৪২ বছর বয়সি সখিনার অপরাধ, তিনি বিয়ে বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক গড়েছেন৷ আর এই অপরাধেই তাঁকে পাথর ছুড়ে মারার আদেশ দিয়েছে কট্টর ইসলামী দেশ ইরানের আদালত৷ যদিও আদালতের রায়ে ফাঁক খুঁজে পেয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের অপরাধ প্রমাণের জন্য অন্তত চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু সখিনার ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিরোধিতাকারী আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধান মিনা আহদি৷ মিনা নিজেও একজন ইরানি৷ তবে ১৯৮০'র দশক থেকে দেশছাড়া তিনি৷

নিম্ন আদালত ২০০৬ সালে সখিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়৷ ২০০৭ সালে উচ্চ আদালতও সে রায় বহাল রাখে৷ অপরাধ স্বীকারের জন্য সখিনাকে ৯৯টি বেত্রাঘাতও করা হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁর আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তাফি৷ তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘‘সখিনা পরে তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করলেও তা আমলে নেয়নি আদালত৷ আর আদালতের এই রায় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হয়নি৷ হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতের জোরে৷'' পাথর ছুড়ে হত্যার এই আইন বর্বরোচিত বলে মনে করেন আইনজীবী মুস্তাফি৷ তিনি জানান, সখিনার দুই সন্তান তাদের মায়ের মৃত্যুদণ্ড রদ করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলো৷ তবে তাতে সাড়া মেলেনি৷ আইনজীবী মুস্তাফি ইরানে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়ও সোচ্চার৷ গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি৷

Deutschland Mina Ahadi Zentralrat der EX-Muslime
পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিরোধিতাকারী আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধান মিনা আহদিছবি: ZdE

৪২ বছর বয়সি সখিনার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় যে কোনো দিন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে আশঙ্কা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর৷ তাহলে সখিনাকে বুক সমান মাটিতে পুঁতে এরপর মারা হবে পাথর৷ মিনা বলেন, ‘‘তা ঠেকাতে হলে হাতে বেশি সময় নেই৷ এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সোচ্চার হয়, তাহলেই কেবল সখিনাকে বাঁচানো সম্ভব৷''

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে সখিনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রও বলছে সখিনাকে বাঁচানোর কথা৷ সখিনাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পি জে ক্রাউলিও৷ নরওয়ে সোমবারই সে দেশে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে৷জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থানের কথা৷ সেই সঙ্গে আহ্বান রেখেছে সখিনাকে অব্যাহতি দেওয়ার৷

তুর্কিভাষী সখিনা আছেন ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের কারাগারে৷ আইনজীবী মুস্তাফি জানান, সর্বশেষ পাঁচমাস আসে তাঁর দেখা পেয়েছিলেন তিনি৷ এরপর আর দেখা পাননি৷ মুস্তাফি বলেছেন, সখিনাকে বাঁচাতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন৷ ওদিকে চেষ্টা করছেন মিনা আহিদও৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকেও দাবি উঠছে৷ এখন দেখার বিষয়, ইরান তাতে মাথা নোয়ায় কি না৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ