পাকিস্তান তালেবান'কে প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছে: এলএসই
১৩ জুন ২০১০তালেবান বিদ্রোহীদের দমন করতে বা তাদের রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে এখনো পর্যন্ত কোনো সাফল্য পাচ্ছে না আফগানিস্তান সরকার বা আন্তর্জাতিক বাহিনী৷ আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবিষয়ে কোনো মহলে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু এবার এক রিপোর্টে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই'এর বিতর্কিত ভূমিকার কড়া সমালোচনা করা হয়েছে৷
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স রবিবার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে দাবি করা হয়েছে যে আইএসআই শুধু সরাসরি তালেবান যোদ্ধাদের অর্থ যোগান দিচ্ছে না, তালেবান নেতৃত্বের শীর্ষেও তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে৷ ফলে তালেবান কর্মকাণ্ডের উপরেও আইএসআই'এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে৷ এটা এক শ্রেণীর অফিসারের গোপন কোনো অভিযান নয় – আইএসআই'এর মূল নীতির অংশ হিসেবেই এমনটা করা হচ্ছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে৷
রিপোর্টে আরও কিছু বিস্ফোরক দাবি করা হয়েছে৷ যেমন চলতি বছরের শুরুতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি প্রায় ৫০ জন তালেবান বন্দির সঙ্গে দেখা করেন৷ তিনি তাদের মুক্তি ও জঙ্গি অভিযানে সরকারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ অর্থাৎ শুধু গোয়েন্দা সংস্থা নয় – রাজনৈতিক নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়েও তালেবান বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ম্যাট ওয়াল্ডম্যান রচিত রিপোর্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দু-মুখো পরস্পর-বিরোধী নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে৷ একদিকে তালেবান দমন অভিযান চালিয়ে অন্যদিকে সব স্তরে সরাসরি তাদের মদত দিয়ে অত্যন্ত বিপজ্জনক পথে এগোচ্ছে সেদেশ৷ এর ফলে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন৷ উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় তালেবান কমান্ডারদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের বয়ানও ঐ রিপোর্টে ব্যবহার করা হয়েছে৷ তালেবান প্রশাসনের প্রাক্তন মন্ত্রী, এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কাবুলে জাতিসংঘের এক সমন্বয়কও তালেবান নেতাদের বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন৷
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স'এর রিপোর্টে যে সব দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ নতুন নয়৷ ২০০৯ সালের মার্চ মাসে মার্কিন সামরিক শীর্ষ নেতৃত্বের দুই ব্যক্তি – অ্যাডমিরাল জন মালেন এবং জেনারেল ডেভিড পেট্রেয়াস আইএসআই'এর অংশবিশেষের বিরুদ্ধে তালেবান ও আল কায়দার প্রতি সমর্থনের অভিযোগ করেন এবং পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে তা বন্ধ করার ডাক দেন৷ তবে সহযোগিতা হারানোর ভয়ে পশ্চিমা দেশগুলি প্রকাশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তেমন কড়া সুরে কথা বলছে না৷ আফগানিস্তানের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে৷ সেদেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন প্রধান আমরুল্লাহ সালেহ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, যে আফগানিস্তান ধ্বংস করতে যে উদ্যোগ চলছে, আইএসআই অবশ্যই তার অংশ৷ তাই আলাদা করে আইএসআই'এর বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার মানে হয় না৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম