পাকিস্তানে বিমান দুর্ঘটনায় আরোহীদের কেউ জীবিত নেই
২৮ জুলাই ২০১০বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ দুর্ঘটনায় হতাহতের এই ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার৷
‘এয়ার ব্লু' নামে বেসরকারি বিমান সংস্থার উড়োজাহাজটি বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে করাচি থেকে রওনা হয়৷ গন্তব্যস্থল ইসলামাবাদ দুই ঘণ্টার পথ৷ এটি করাচি এসেছিলো তুরস্ক থেকে৷ ইসলামাবাদ পৌঁছানোর কিছু সময় আগে পৌনে ১০টার দিকে কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ কর্মকর্তারা বলছেন, তারপরই আসে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর৷
ইসলামাবাদের বেনজির ভুট্টো বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে মারগালা পাহাড়ে এটি বিধ্বস্ত হয়৷ শাহবাজ আহমেদ নামে প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখলাম, বিমানটি দ্রুত নিচে নেমে আসছে৷ এক পর্যায়ে এটি পাহাড়ি জঙ্গলে ঢুকে পড়লো৷ তারপরই বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ শুনি৷'' বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ আর বৃষ্টি হচ্ছিলো, তাই উদ্ধার কার্যক্রম চালাতেও বেশ বেগ পেতে হয়৷
১০ বছর পুরনো ওই এয়ারবাসটিতে মোট আরোহী ছিলেন ১৫২ জন৷ এদের মধ্যে ১৪৬ জন যাত্রী৷ অন্যরা ক্রু৷ এটা বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের হিসাব৷ তবে পুলিশের দাবি, এই সংখ্যা ১৪৯৷ পাকিস্তানের বেসরকারী টেলিভিশন সংস্থা ‘জিও টিভি'র খবরে বলা হয়েছে, যাত্রীদের মধ্যে পাঁচটি শিশুও ছিলো৷ ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুজন নাগরিকও ছিলেন ওই বিমানে৷ দুর্ঘটনার পরপরই শুরু হয় উদ্ধার কার্যক্রম৷ প্রথমে কর্মকর্তারা কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধারের দাবি করলেও দুপুরে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক বলেন, ‘‘না, কেউ বেঁচে নেই৷ আরোহীদের সবাই মারা গেছেন৷'' ইসলামাবাদের উপপুলিশ প্রধান বনি আমিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘সব মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে ঠিক কতজনের লাশ পাওয়া গেছে, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷ কারণ দেহগুলো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ অনেকের দেহ পুড়ে গেছে৷'' উপপুলিশপ্রধান জানান, বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়৷
দুর্ঘটনার কারণ কী – জানতে চাওয়া হলে আমিন বলেন, এই বিষয়টির দিকে আমরা আপাতত নজর দিচ্ছি না৷ মূল মনোযোগ এখন উদ্ধার তৎপরতার দিকে৷ তবে কর্মকর্তারা বলছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটির চালক পারভেজ ইকবাল চৌধুরী সুদক্ষ ছিলেন বলেই দাবি করেছেন তাঁর সহকর্মীরা৷ পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের পাইলট রাজা গারদেজি বলেন, ‘‘ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণ এমনিতেই কঠিন৷ কারণ এর কাছেই পাহাড়৷ আর আবহাওয়া প্রতিকূল হলে তা আরো কঠিন হয়ে যায়৷'' এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি দুর্ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন গিলানি৷ বৈঠকে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয় এবং বুধবার শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন