পাকিস্তানের রমজান আইন
পাকিস্তানের রমজান আইন অনুযায়ী রমজান চলাকালীন প্রকাশ্য স্থানে খাওয়াদাওয়া নিষিদ্ধ৷ এই আইন ভাঙার দণ্ড ২০১৭ সালে আরো বাড়ানো হয়েছে৷
কঠোর সাজা
পাকিস্তানে রমজানের সময় প্রকাশ্য স্থানে পানি পান করা, খাওয়াদাওয়া বা ধূমপান– সবই নিষিদ্ধ৷ এই আইন ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড বা বিপুল জরিমানা, এমনকি গুণ্ডাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়াও অসম্ভব নয়৷
‘এটা ইসলাম নয়’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর কন্যা বখতাওয়ার জরদারি রমজান আইনের নতুন সংস্করণকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন৷ ‘পাকিস্তানের সবাই যে রোজা রাখবে, এমন তো নয় – স্কুলের ছেলেমেয়ে, প্রবীণেরা, যারা রুগ্ন – আমরা কি সকলকে পানি খাওয়ার কারণে গ্রেপ্তার করব?’’ টুইট করেছেন ভুট্টো৷ ‘‘এ আইনের কারণে লোকে সর্দিগর্মি হয়ে কিংবা জলশূন্যতা থেকে প্রাণ হারাবে৷’’
রোজা রাখতে বাধ্য
‘ইসলামের বিধান অনুযায়ী যারা রোজা রাখতে বাধ্য, তারা রমজান মাসে রোজা চলাকালীন কোনো প্রকাশ্য স্থানে খাদ্যগ্রহণ, জলপান বা ধূমপান করতে পারবেন না,’ বলছে এহতিরাম-ই-রমাদান বা রমজানের প্রতি শ্রদ্ধা আইন, সামরিক একনায়ক জিয়াউল হক যা ১৯৮১ সালে চালু করেছিলেন৷
কৃচ্ছসাধন ও ধার্মিকতা
ইসলামের তত্ত্ব অনুযায়ী রমজান হলো কৃচ্ছসাধন৷ রমজান মুসলিমদের ধর্মপরায়ণ হতে, পাপ থেকে দূরে থাকতে, দিনের বেলায় রোজা রাখতে ও দরিদ্রদের দান করতে শেখায়৷ আরবি ‘জাকাত’ শব্দটির অর্থ ভিক্ষা প্রদান৷ এর অর্থ, মুসলিমরা তাদের আয়ের একটি অংশ দীনদরিদ্রদের জন্য ব্যয় করবেন, বিশেষ করে রমজানের মাসে৷
অসম্ভব গরম
অধিকাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে রমজামের মাসটি পড়ে চরম গরমে৷ ২০১৫ সালে পাকিস্তানে একটি ভীষণ তাপপ্রবাহে ১,২৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান – তাদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখতে গিয়ে জলশূন্যতায় মারা যান৷ তা সত্ত্বেও সরকার ৩৬ বছরের পুরনো আইনটি শিথিল করেনি৷ কিছু মৌলানা অবশ্য বলেছিলেন যে, স্বাস্থ্যের কারণে রোজা ভাঙা চলে৷
কড়াকড়ি
ফজর (উষা) থেকে মাগরেব (গোধূলি) অবধি প্রায় সমস্ত রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকে, দোকানিরা শুধু কিনে নিয়ে যাওয়ার মতো খাবারদাবার বিক্রি করেন৷ এই সময় খিদে বা তেষ্টা পেলে, স্বগৃহ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই৷ সরকারি বা বেসরকারি, কোনো অফিসেই রমজান মাসে খাওয়াদাওয়া করার অনুমতি নেই৷
ধর্মীয় উগ্রপন্থি বাড়ছে
আফগানিস্তানের যুদ্ধ আর তালেবানের মতো ইসলামপন্থি সংগঠনগুলির প্রসারের কারণে বিগত কয়েক বছরে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ পাকিস্তানে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে সহনশীলতা৷ রমজানের সময় চরমপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলি প্রচুর অনুদান সংগ্রহ করে থাকে৷
গুণ্ডাবাহিনী
উন্মত্ত জনতা বল প্রয়োগ করে শরিয়া আইনের নিজস্ব সংস্করণ বলবৎ করার চেষ্টা করছে, এমন ঘটনা পাকিস্তানে বিগত কয়েক বছরে বেড়েই চলেছে৷ একাধিক মানুষকে ঈশ্বরনিন্দার অপ্রমাণিত অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে৷ বিভিন্ন ধরনের ইসলামি বিধান থাকার কারণে উগ্রপন্থিরা ব্যাপারটাকে তাদের নিজের হাতে নিয়ে (তাদের মতে) ‘অ-ইসলামি’ সব কার্যকলাপের ‘সাজা’ দেওয়ার চেষ্টা করছে৷