1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌পশ্চিমবঙ্গ, না বাংলা?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৯ এপ্রিল ২০১৭

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির নাম বদল কতটা যুক্তিসঙ্গত? একসময় বামেরা এই প্রস্তাব এনেছিল৷ এখন উদ্যোগী তৃণমূল সরকার৷ প্রতিক্রিয়ায় জোরালো আপত্তি এবং অগ্রাহ্য, দুইই আছে৷

https://p.dw.com/p/2aquc
কলকাতার বিখ্যাত হাতেটানা রিকশা
ছবি: DW/S. Bandopadhayay

পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বঙ্গ', অথবা ‘বাংলা' করার প্রস্তাব আজকের নয়৷বামফ্রন্ট সরকারের সময়থেকেই এই প্রস্তাব মাঝেমধ্যেই সামনে এসেছে৷ তার কারণ হিসেবে বলা হতো, ইংরেজিতে রাজ্যের নামের বানান যেহেতু বর্ণমালার শেষদিকের অক্ষর দিয়ে শুরু, রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের প্রশাসনিক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের ডাক আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়৷ এবং সব ধরনের সভাতেই শেষ দিকের বক্তারা যেহেতু প্রাপ্য মনোযোগ এবং গুরুত্ব পান না, ভাষণ শুরু হওয়ার আগেই যেন সভা শেষ হয়ে যায়৷ বাম সরকারের আনা এই প্রস্তাবে তখন আপত্তি তুলেছিলেন সে আমলের বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ এখন ক্ষমতায় এসে তিনিই রাজ্যের নাম বদলে ‘‌বাংলা'‌ করায় উদ্যোগী৷ এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে পাসও হয়ে গেছে৷ বিষয়টি এখন সংসদে পাস করাতে হবে৷

লকেট চট্টোপাধ্যায়

কিন্তু সমস্যা হলো, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি এখন এই নামবদলের প্রস্তাবের ঘোরতর বিরোধী৷ কারণ, বিজেপির মতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা নামকরণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর খামখেয়ালিপনা ছাড়া আর কিছু নয়৷ ঠিক যেভাবে একদা রেলমন্ত্রী থাকার সময় কলকাতার মেট্রো রেলের সম্প্রসারিত অংশের সব স্টেশনের ইচ্ছেমতো নামকরণ করেছিলেন তিনি৷ সেই নামের সঙ্গে স্টেশনের এলাকার দূরতম কোনও সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও৷ এখনও মেট্রো রেলের যে নতুন অংশের কাজ চলছে, সেই দীর্ঘ যাত্রাপথের বিভিন্ন স্টেশনের নামও আগাম করে রেখেছেন তিনি৷ অবশ্য বাম আমলে যে অসুবিধার কথা উঠেছিল, অর্থাৎ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল' নামের জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে সবার শেষে ডাক পাওয়া, সেই অসুবিধের কথা এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বলছেন৷

কিন্তু রাজ্যে বিজেপির আপত্তি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা হলে, সেটা এই অঞ্চলের ইতিহাসকে মুছে ফেলার সামিল হবে৷ বিজেপির রাজ্য নেত্রী, বর্তমানে দলের মহিলা শাখার প্রধান লকেট চট্টোপাধ্যায় যেমন ডয়চে ভেলেকে পরিষ্কারই বললেন, এই নামবদল মুখ্যমন্ত্রীর খেয়ালখুশিতেই করার চেষ্টা হচ্ছে৷ শুধু পূর্ব বঙ্গ-পশ্চিম বঙ্গের ঐতিহাসিক গুরুত্বই এতে নষ্ট হচ্ছে না, সেসময় হিন্দু-প্রধান পশ্চিমবঙ্গকে আগলে রাখতে তখনকার ভারতীয় জনসংঘের নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাকেও খাটো করার চেষ্টা আছে এর পেছনে৷ আর লকেট জানালেন, বাংলাদেশেও এই নিয়ে ক্ষোভ প্রচুর৷ তাদের জাতীয় সংগীত ‘‌আমার সোনার বাংলা'‌৷ পড়শি দেশের লাগোয়া রাজ্যটির নাম যদি হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা হয়ে যায়, তা হলে বাংলাদেশের জাতীয় অস্তিত্ব ও পরিচয়কেও অসম্মান করা হবে৷

সমরেশ মজুমদার

সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার অবশ্য এই নামবদল নিয়ে আলোচনা করাটাই সময় নষ্ট বলে মনে করেন৷ তিনি বরং গুরুত্বই দিতে চান না একে৷ প্রশ্ন করলেন, কোথায় থাকো জানতে চাইলে লোকে স্থানীয় অঞ্চলের নামই বলে, রাজ্য বা দেশের নাম নয়৷ কাজেই সেটাই চলবে৷ আর লেখালেখির সূত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন গভীরভাবে সম্পর্কিত সমরেশবাবু জানাচ্ছেন, এ নিয়ে যখন তাঁর বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে কথা হয়, তারা রসিকতা করে৷ ঠাট্টা করে কেউ বলেন, তা হলে এবার আপনারা আমাদেরকেই অনুসরণ করছেন!‌ কেউ আবার বলেন, ব্যাঙাচির লেজ খসে যেমন ব্যাঙ হয়, তেমন পশ্চিমবঙ্গ থেকে পশ্চিম খসে গিয়ে আপনারা বঙ্গ হবেন৷ প্রবীণ সাহিত্যিক বিশ্বাস করেন, রাজ্যের নাম বদলে গেলে যেমন এখানকার মানুষজনের জীবনে, যাপনে কোনো ফারাক হবে না, তেমনই বাংলাদেশের মানুষদেরও কিছু যাবে আসবে না৷ সুতরাং এই তর্ক নিরর্থক৷

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা বা বেঙ্গল নামটি নিয়ে আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান