প্রতীক চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা
২৭ জানুয়ারি ২০১৪ওড়িশার প্রতীক কোনারক মন্দিরের বিখ্যাত রথের চাকা৷ বিহারের প্রতীক বোধগয়ার বোধিবৃক্ষ৷ ভারতের বেশ কিছু সরকারি সংস্থারও নিজস্ব প্রতীক চিহ্ন রয়েছে৷ যেমন সিবিআই বা সুপ্রিম কোর্টের৷ কলকাতা শহরের পুরসভারও আলাদা প্রতীক আছে, যা ব্যবহার করা হয় সমস্ত পুর নথিপত্রে৷ প্রতীক রয়েছে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের৷ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের কোনো সরকারি প্রতীক নেই৷ আগে কোনো সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গেরও নিজস্ব একটা প্রতীক হোক, যেমন অন্যান্য অনেক রাজ্যেরই আছে৷ এমন এক প্রতীক তিনি চান, যে প্রতীকচিহ্ন দিয়ে সারা দেশে এবং বিশ্বের দরবারেও এই রাজ্যকে আলাদাভাবে চিনে নেওয়া যাবে৷
নিয়ম অনুযায়ী, ভারতের কোনো রাজ্য তার নিজস্ব কোনো প্রতীক সরকারি নথিপত্রে ব্যবহার করতে চাইলে আগে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমতি নিতে হয়৷ নিজস্ব প্রতীক ব্যবহারের স্বাধীনতা এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিধিনিষেধও রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেইসব নিয়মকানুনও বলবৎ হবে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে সেই আবেদন ইতোমধ্যেই করা হয়েছে কেন্দ্রের কাছে৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কমিটি গড়েছেন, যার সদস্যরা খতিয়ে দেখছেন এই রাজ্যের কোন বস্তুটি প্রতীক হিসেবে যোগ্যতম হবে৷
সাধারণভাবে কোনো স্থাপত্য বা কোনও প্রাণী প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়৷ কিন্তু ব্রিটিশ আমলের কোনো স্থাপত্য, তা সে যতই বিখ্যাত হোক না কেন, এ রাজ্যের প্রতীক হোক, সেটা অনেকেই চাইছেন না৷ যেমন হাওড়া ব্রিজ বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কিংবা অকটরলোনি মনুমেন্ট৷ প্রতিটি স্থাপত্যই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বহু বছর ধরে সম্পর্কিত৷ কিন্তু এদের কোনোটিকে রাজ্যের সরকারি অভিজ্ঞান হিসেবে মানতে অনেকেরই আপত্তি আছে৷
বরং পাল্লা ভারী সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দিকে৷ আবার অনেকেই বলছেন যে, একদিকে দার্জিলিং-এর পাহাড় আর অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ, সারা ভারতে পশ্চিমবঙ্গের এই যে অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট, সেটাকে মাথায় রেখেই প্রতীকের নকশা হওয়া উচিত৷ আবার কেউ মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরা পড়বে, এমন কোনও নকশা-শৈলী বেছে নেওয়া উচিত প্রতীক তৈরির ক্ষেত্রে৷ এবং পটচিত্র থেকে শুরু করে এত বহু রকমের এবং বিচিত্র শৈলীর নকশা আছে এই বাংলায় যে বরং অসুবিধেই হবে উপযুক্ত নকশাটি তার মধ্যে থেকে বেছে নিতে৷
চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলছেন, সেক্ষেত্রে প্রাচীন ইতিহাস ও তার স্মারকগুলির দিকে ঝুঁকতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ টেনেছেন জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব প্রতীকের৷ সেখানে যেভাবে ঐতিহাসিক কোট অফ আর্মসগুলিকেই সরকারি প্রতীকে বদলে দেওয়া হয়েছে, বাংলার ক্ষেত্রে তা হয়ত সম্ভব হবে না, যেহেতু বাংলায় ওই ধরনের রাজকীয় অভিজ্ঞান কিছু ছিল না৷ কিন্তু প্রাচীন মুদ্রা বা লিপি অথবা প্রত্নসম্পদ পশ্চিমবঙ্গের প্রতীক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতেই পারে৷
অন্যদিকে অনেকেই এই সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন৷ তাঁদের বক্তব্য, প্রতীক নিয়ে অযথা মাথা না ঘামিয়ে রাজ্যের ভাবমূর্তি কীভাবে উজ্জ্বল করা যায়, সেটা বরং ভেবে দেখা উচিত সরকারের৷ তবে এমন লোকের সংখ্যাই বেশি যাঁরা অত্যন্ত উৎসাহিত রাজ্যের নিজস্ব প্রতীক হচ্ছে বলে৷ কার্যত তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন যে, রাজ্যের সমস্যা থাকতেই পারে৷ সেই সব সমস্যার সমাধানও অবশ্যই দরকার৷ কিন্তু রাজ্যের নিজস্ব প্রতীক তৈরির সিদ্ধান্ত তার উপর নির্ভর করবে কেন! অন্যভাবে দেখতে গেলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যবাসীর এই মনোভাবকেই কাজে রূপায়িত করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷