1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থিরা এখন কোথায়?‌

১৪ অক্টোবর ২০১৬

‌বাংলার রাজ্য রাজনীতিতে বামপন্থিরা ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে যাবেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণী গত বিধানসভা ভোটের আগে কেউ কেউ করেছিলেন৷ কার্যত কি সেটাই হলো?‌ কোথায় গেলেন বাঙালি বামপন্থিরা? জানাচ্ছেন শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়...

https://p.dw.com/p/2RDGA
সিপিআইএম এর একটি ব়্যালি
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত বামফ্রন্টের প্রধান শরিক দল সিপিআইএম-এর একটি ব়্যালিছবি: DW
সিপিআইএম এর একটি ব়্যালি
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত বামফ্রন্টের প্রধান শরিক দল সিপিআইএম-এর একটি ব়্যালিছবি: DW

গত বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সদর্পে বলেছিল, রাজ্য থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বামপন্থিরা৷ পড়ে থাকবে শুধু পার্টির সাইনবোর্ড৷ ভোটের ফলে কার্যত তাইই হয়েছিল৷ মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন প্রায় ধুয়েমুছে দিয়েছিল বাম বিরোধীদের৷ এবং বাম সমর্থনে ধস তার পরেও অব্যাহত৷ অনেক জায়গায় নির্বাচিত বাম পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলররা শিবির ছেড়ে শাসক দলের দিকে গিয়ে ভিড়ছেন৷ রাজ্যে যা ঘটনা ঘটছে, তাতে কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নেই বামদের৷

দুর্গাপুজোর সময় জনসংযোগ বাড়াতে বিভিন্ন পুজামণ্ডপের সামনে মার্ক্সবাদী সাহিত্য, পত্র–পত্রিকার স্টল করেন বামপন্থিরা৷ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্টলের সঙ্গেই থাকত সেসব স্টল৷ বামফ্রন্ট শাসনের জমানায় বেশ চোখে পড়ার মতো জায়গাতেই থাকত সেই স্টল৷ এবার সেসব স্টলও অনেক জায়গায় দেখা যায়নি৷ তার কারণ হিসেবে যেটা শোনা গেল, বোঝা গেল, প্রায় সব বড় পুজোর সঙ্গেই এখন যুক্ত আছেন শাসকদলের নেতা–মন্ত্রীরা। তাঁরা চাননি, বা পছন্দ করেননি, তাই ওই স্টল এবার অনেক এলাকাতেই হয়নি৷ তাই প্রশ্ন উঠছে, কোথায় উধাও হলেন বামপন্থিরা?‌

যা জানা যাচ্ছে, বিধানসভা ভোটের বিপর্যয়ের পর থেকেই বাংলার বাম শিবিরে এক ব্যাপক শুদ্ধিকরণ শুরু হয়েছে৷ এবং সেটা ঢাক–ঢোল পিটিয়ে, লোক জানিয়ে হচ্ছে না৷ হচ্ছে নীরবে, কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে৷ সম্ভবত দ্বিতীয়বারের ভোটেও মমতা ব্যানার্জির বিপুল জয় এবং তারপর থেকেই বাম নেতা–কর্মীদের এক বড় অংশের দলবদল চোখ খুলে দিয়েছে বাম নেতাদের৷ তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, এখনও রাজ্যে প্রায় ৪০%‌ ভোটের অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও বাজার গরম করা ভাষণ আর রাজনৈতিক শক্তি এবং জনসমর্থন ফিরে পাওয়ার উদ্ভট দাবিতে আর কাজ হচ্ছে না৷ নিজেদের মান খুইয়ে চিরবিরোধী কংগ্রেসের সঙ্গে এ রাজ্যে নির্বাচনী জোট গড়েছিল বামফ্রন্ট৷ সেই জোটের নেতা এবং জিতে ক্ষমতায় এলে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল যাকে, সেই সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেই ভোটে জিততে পারলেন না৷ উল্টে ভোটের পর থেকে সংগঠনে ধস নামার অচেনা ছবি৷ হঠাৎ সবারই বোধোদয় হয়েছে এবং সবাই নাকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নযজ্ঞে সামিল হতে ব্যাকুল!‌

বামপন্থিরা, বা বলা ভালো ফ্রন্টের প্রধান শরিক দল সিপিআইএম এখন সেই উন্নয়নমুখী দলীয় কর্মীদের চলে যেতে দেওয়ারই নীতি নিয়েছেন৷ কাউকে ধরে রাখার চেষ্টা নয়, কোনো হা–হুতাশ নয়, যারা আসলে ক্ষমতার লোভে, আর্থিক সুবিধার লোভে বাম শিবিরে ছিল এবং এখন উন্নয়নের ভাগ নিতে না পেরে হাঁফিয়ে মরছে, বাম নেতৃত্ব চাইছে তারা চলে যাক৷ সংগঠনের শরীর থেকে বদরক্ত বেরিয়ে যাক৷

এমনকি যারা দীর্ঘদিন ধরে নানা সাংগঠনিক স্তরে বহাল, অথচ সংগঠনের প্রকৃত কাজে যাদের পাওয়া যায় না, সেই ছোট এবং মাঝারি নেতাদেরও গুরুত্ব না দেওয়া শুরু হয়েছে৷ অবলুপ্তি ঘটছে ‘‌জোনাল কমিটি'‌র, বরং জেলা কমিটির সঙ্গে লোকাল কমিটির সরাসরি সংযোগ গড়ার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এবং অবশেষে একটা খুব জরুরি স্বীকৃতি দেওয়া চালু হয়েছে৷ পদাধিকারীরা নয়, সংগঠনে গুরুত্ব পাচ্ছেন সেইসব অনামী কর্মী–সমর্থকরা, যাঁরা হয়তো খাতায়–কলমে দলের সদস্যই নন, কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের সময় যাঁরা মার খেয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন, তবু দাঁতে দাঁত চেপে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন৷

সোজা কথায়, যে সাগংঠনিক শুদ্ধিকরণ গত ২০ বছরে হওয়া জরুরি ছিল, কিন্তু হয়নি, তা এবার হচ্ছে৷ অকারণ রাজনৈতিক বিরোধিতায় শক্তিক্ষয় না করে বরং নিজেদের শক্তি সংহত করার চেষ্টায় রত বামপন্থিরা৷ সবাই চিনে নিতে চাইছেন, কে প্রকৃত বাম আদর্শে বিশ্বাসী, আর কে নয়৷ কারা দলে এসেছিল ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে সুবিধে পাওয়ার লোভে, আর কারা এই চরম দুঃসময়েও লড়াই চালিয়ে যেতে চান৷

উপনিষদে আছে— ‘‌আত্মানং বিদ্ধি'‌৷ নিজেকে জানো৷ সেই জানার প্রক্রিয়াই শুরু করেছেন বাংলার বামপন্থীরা৷

প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

প্রিয় পাঠক, আপনার কী কিছু বলার আছে? জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য