পশুপ্রেমী হচ্ছে চীন
২০ জুন ২০১০বেইজিংয়ের কাছেরই একটি ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক৷ ডজন খানেক সিংহ লড়াই করছিলো৷ লড়াইয়ের কারণ কয়েকটি মুরগির দখল নেওয়া৷ চারপাশে উল্লসিত মানুষের ভিড়৷ এটা তাদের আনন্দ, আর তা কিনতে হয়েছে চার ডলার দিয়ে, প্রত্যেককে৷ আর যদি ৬০ ডলার করে দেওয়া যায়, তখন ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে ছেড়ে দেওয়া হবে ছাগল৷
চীনে এ ঘটনা চলছে অহরহ৷ এটাকে খেলা হিসেবেই দেখে তারা৷ খেলা দেখে এক পর্যটক বললেন, এটা ভয়ঙ্কর৷ তবে এতে মজা আছে, বললেন অন্য একজন৷ অবশ্য মজা পাওয়া এমন লোকের সংখ্যা দিন দিন কমছে, বাড়ছে এর বিরোধীদের সংখ্যা৷ আর এ কারণেই পশুর প্রতি নির্মম আচরণ ঠেকাতে আইনটি করার উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার৷
আইনের একটি খসড়া এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, চিড়িয়াখানায় এক প্রাণীর খাদ্য হিসেবে জীবন্ত অন্য কোনো প্রাণীকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না৷ কোথাও কোনো চিড়িয়াখানায় পশুখাদ্যের জন্য অর্থকড়ির সঙ্কট হলে জানাতে হবে সরকারকে৷ আর না জানালে হবে শাস্তি৷ আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে৷ কবে যে তা চূড়ান্ত হবে, তা বলতে পারছে না কেউ৷
চীনে চিড়িয়াখানা এবং ওয়াইল্ডলাইফ পার্কগুলোতে থাকা প্রাণীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছে পশুপ্রেমীরা৷ তারা বলছে, সেখানে প্রাণীগুলোকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না৷ চালানো হয় বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন৷
প্রাণী অধিকার নিয়ে সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ‘হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল'এর চীনা বিশেষজ্ঞ পিটার লি বলেন, ‘‘এ দেশে চিড়িয়াখানা, পার্ক, অ্যাকোয়েরিয়াম – এ জায়গাগুলোতে যে সব প্রাণী রয়েছে, তাদের অবস্থা খুব শোচনীয়৷ উন্নত বিশ্বের কোথাও এমনটা দেখা যায় না৷''
গত ১১ মাসে লিওয়ানিং প্রদেশের একটি চিড়িয়াখানায় খাদ্যাভাবে মারা যায় ১১টি সাইবেরিয়ান বাঘ৷ এ প্রাণী এখন বিশ্বের বুক থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছে৷ আরেকটি কারখানায় পাওয়া গেছে প্রাণীদের একটি গণকবর৷ যেখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিলো কয়েকটি সিংহ, বাঘকে৷ এসব পশুর দেহের বিভিন্ন অংশ বেশ দামী৷ অভিযোগ রয়েছে, তা গোপনে চলে যাচ্ছে বাজারে৷ আর তার সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে, চিড়িয়াখানার কর্মীদেরই৷
আইন হলে ভালো, তবে প্রাণীদের বিষয়ে মানুষের সচেতনতার ওপরই জোর দিচ্ছেন লি৷ নতুন প্রজন্মের ওপর যে তার ভরসা রয়েছে, সে কথাটিও তার মুখ থেকেও শোনা গেলো৷ লি বললেন, পশু অধিকার, পশুকল্যাণ- এ শব্দগুলো ২০ বছর আগে চীনে শোনাই যেত না৷ এখন তার আর অচেনা নয়৷ যা এ প্রজন্মের সচেতনতার কথাই তুলে ধরে৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন