পশুজগতে ঘুমের অভ্যাস
মানুষ হিসেবে দিনে আমাদের ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন পড়ে৷ হাতি, তিমিসহ নানা প্রাণীর ঘুমের সময় ও কায়দা কিন্তু বেশ বিস্ময়কর৷
হাতি ঘুমায় বড় কম
নতুন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকার দুই মাদী হাতি দিনে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমায়৷ কয়েকদিন তো তাদের একেবারেই ঘুমই হয়নি৷ ফলে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে কম ঘুমানোর ক্ষেত্রে তারাই রেকর্ড করেছে৷ গবেষকদের মতে, পরিবারের সুরক্ষার চিন্তায় হাতিদের ঘুম কম হয়৷
মাটিতে শুয়ে ছোট্ট ঘুম
হাতির মতো জিরাফও দিনেই ঝিমাতে ভালবাসে৷ দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুমায় জিরাফরা৷ তবে মাটিতে শুয়ে মাত্র আধ ঘণ্টা ঘুম হয়৷ গবেষকদের মতে, মানুষের মতো তাদেরও ঘুমের মধ্যে ‘ব়্যাপিড আই মুভমেন্ট’ পর্যায় রয়েছে৷
দাঁড়িয়ে ঘুমাতে ওস্তাদ
ঘোড়াদের দিনে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা ঘুমালেই চলে৷ তারাও দাঁড়িয়ে ঘুমাতে ভালোবাসে৷ তবে তার জন্য বেশি শক্তিক্ষয় হয় না৷ পায়ে শিরা ও ধমনীর এক জটিল কাঠামোর দৌলতে এভাবে ঘুমানোর সময় তাদের পেশি কাজে লাগাতে হয় না৷
অন্য ধরনের আধা-ঘুম
ডলফিন বা শুশুক মস্তিষ্কের একটা অংশ ‘সুইচ অফ’ করে দেয়৷ এটা না করলে তাদের ডুবে মরতে হতো, কারণ, প্রতি ৫ মিনিট অন্তর তাদের তাজা বাতাস নিতে সমুদ্রপৃষ্ঠে যেতে হয়৷ ফুসফুসে জল যাতে না ঢোকে, সেই খেয়ালও রাখতে হয়৷ দু’ঘণ্টা পর মস্তিষ্কের অন্য অংশের ঘুমানোর পালা৷
জলের নীচে আড়াআড়ি ঘুম
স্পার্ম হোয়েল গোত্রের তিমির ঘুমানোর ভঙ্গিকে গবেষকরা ‘ড্রিফট ডাইভিং’ নাম দিয়েছেন৷ ৩০ মিনিট পর্যন্ত তিমির দেহ নিথর হয়ে যায়৷ এখনো পর্যন্ত দিনে ৩ ঘণ্টা ঘুমের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ বাড়তি ঘুমের জন্য এই গোত্রের তিমিরা ডলফিনদের কায়দা কাজে লাগায়৷
ঘুম যখন মৃত্যুর ফাঁদ
ব্লু শার্ক গোত্রের হাঙরকে মৃত্যু এড়াতে সর্বক্ষণ গতিশীল থাকতে হয়৷ কানকোর মধ্য দিয়ে জল না বয়ে গেলে তারা অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না৷ অর্থাৎ জলের মধ্যে স্থির হলেই মৃত্যু অনিবার্য৷ তাই সমুদ্রপৃষ্ঠে সাঁতার কাটতে কাটতে ঘুমের সময় তারা নীচে ডুব দেয়৷ এমনটা চলতেই থাকে৷ সমুদ্র-গবেষকরা এই প্রক্রিয়াকে ‘ইয়ো-ইয়ো ডাইভিং’ বলে থাকেন৷
ঘুমকাতুরে বাদুড়
দিনে মাত্র ৪ ঘণ্টা জেগে থাকে বাদুড় – তাও দিনের বেলা নয়, শুধু রাতে শিকারের সময়৷ শরীরে রক্ত সঞ্চালনের বিশেষ কাঠামোর দৌলতে তারা মাথা নীচু করে ঝুলতে পারে৷
বন্দিদশায় আলস্য
মানুষের জিম্মায় থাকার সময় স্লথ নামের বানরের মতো দেখতে স্তন্যপায়ী প্রাণী দিনে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়৷ পরিবেশভেদে তাদের ঘুমের প্রবণতা বদলে যায়৷ জঙ্গলে থাকলে হামলা প্রতিহত করতে আর খাদ্য সংগ্রহে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়৷ তাই ঘুমের সময় কমে যায়৷
ইউক্যালিপটাস ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়
কোয়ালা ভালুক দিনে প্রায় ৪০০ গ্রাম পাতা খায়৷ সেই পাতায় পুষ্টি বড় কম, সেইসঙ্গে রয়েছে টক্সিন৷ ফলে হজম করতে সময় লাগে৷ সেই সময়ে শক্তিক্ষয় কমাতে তারা দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা ঘুমায়৷