1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্যাপ্ত ত্রাণ না পেয়ে বন্যা দুর্গতদের বিক্ষোভ

২ আগস্ট ২০১০

পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে বন্যাদুর্গতরা ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছে৷ বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ পোঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার৷ ত্রাণ নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ৷

https://p.dw.com/p/OaMT
বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ পোঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারছবি: AP

বন্যায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ লাখ লোক ঘর-বাড়ি হারিয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে৷ রেডক্রস বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ২৫ লাখ৷ বন্যা ও ভূমিধসে মারা গেছে ১৫শ জন৷ ডায়রিয়া-কলেরার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ, যার অধিকাংশই শিশু৷

অতিবৃষ্টির কারণেই খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে এই বন্যা দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন৷ পানিতে তলিয়ে গেছে পাশের পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও৷ বলা হচ্ছে, গত ৮০ বছরে দেশে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা৷ এলাকাটি পাহাড়ি, ফলে বন্যার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসও হয়েছে৷

Pakistan Flut Katastrophe 2010 Flash-Galerie
জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুন পাকিস্তানকে দেওয়ার জন্য ১ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছেনছবি: AP

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷ তাঁরা বলছেন, যেটুকু ত্রাণ কার্যক্রম চলে, তা ঠিকমতো চোখেই পড়ে না৷ নওশের জেলায় একটি উঁচু সড়কে আশ্রয় নেওয়া ফয়সাল ইসলাম বললেন, ‘‘গায়ে যে জামাটি দেখছেন, এর বেশি আর কিছু এখন আমার নেই৷ যেটুকু খাবার আসে, তাতে সবার হয় না৷ আমাদের দরকার আরো খাবার, আরো তাঁবু৷'' সোমবার বিকালে প্রায় আড়াইশ লোক নওশের জেলার প্রধান সড়ক অবরোধ করে৷

খাইবার পাখতুনখাওয়ার তথ্যমন্ত্রী মিয়া ইফতিখার হোসাইন বার্তামাধ্যমকে বলেন, ‘‘বন্যায় ১৫শ লোক মারা গেছে৷ ঘর হারিয়েছে পাঁচ লাখ মানুষ৷ দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখ৷'' দেশটির সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা এডি ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র আনোয়ার আজমি জানান, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে সোয়াতে, ৪৭৫ জন৷ প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জহির আলী শাহ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘এই পর্যন্ত ১ লাখ লোক ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে৷ এর অধিকাংশই শিশু৷''

Pakistan Flut Katastrophe 2010 Flash-Galerie
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ লাখ লোক ঘর-বাড়ি হারিয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছেছবি: AP

রেডক্রস সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাকিস্তানে বন্যা কবলিত এলাকায় ২৫ লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে৷ অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছে৷ পাখতুনখাওয়া প্রদেশের অনেক এলাকা যোগোযাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ সেখানে আটকেপড়া অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে৷

সরকার ও দাতব্য সংস্থাগুলো দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে৷ কাজ করছে সেনাবাহিনীও৷ তবে সোয়াতে ২৭ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর৷ স্থানীয়রা অবশ্য বলছেন, এই সংখ্যা আরো বেশি৷ সোয়াতের জনপ্রতিনিধি জাফর শাহ বলেন, ‘‘বেহরাইন থেকে কালাম পর্যন্ত পুরো সড়ক তলিয়ে গেছে৷ সঙ্কটে আছে অনেক মানুষ৷ প্রায় ৪০ হাজার লোক আটকা পড়ে আছে৷ এর মধ্যে দুই থেকে তিন হাজার পর্যটক৷''

Pakistan Flut Katastrophe 2010 Flash-Galerie
ত্রাণ পৌঁছনোর জন্য হেলিকপ্টার ও নৌকাও পাঠাচ্ছে পাকিস্তান সরকার৷ কিন্তু তা সময় মতো পৌঁছাবে কি ?ছবি: AP

সোয়াতের কয়েকটি এলাকায় ত্রাণকর্মী বা সেনা সদস্যরা এখনো পৌঁছতে পারেনি৷ সরকারের হিসেবে, ওই এলাকায় ২৯টি সেতু ভেসে গেছে৷ সেনাবাহিনী বলছে, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে৷ গত কয়েকদিনে উদ্ধার করা হয়েছে ২৮ হাজার পানিবন্দি মানুষকে৷ আনোয়ার আজমি বলেন, ‘‘দুর্গতদের জন্য আহার আর আশ্রয় এখন খুবই জরুরি৷ তবে অবস্থা খুবই খারাপ৷ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে৷''

পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস, আগামী দুই সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে৷ ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ পাঠানোর প্রতিশ্রুতি এরইমধ্যে মিলতে শুরু করেছে৷ জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুন পাকিস্তানকে দেওয়ার জন্য ১ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, তারাও ১ কোটি ডলারের ত্রাণ সহায়তা দেবে৷ সেইসঙ্গে দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছনোর জন্য হেলিকপ্টার ও নৌকাও পাঠাচ্ছে তারা৷ ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কনসাল জেনারেল এলিজাবেথ রুড বলেন, ‘‘গত রাতেই আমরা ৬২ হাজার প্যাকেট খাবার দিয়েছি৷ এগুলো বিলি করবে প্রাদেশিক সরকার৷ আরো খাবার আসছে৷'' চীনও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ১৫ লাখ ডলারের ত্রাণ সহায়তা পাঠাবে৷ জরুরি সাহায্য দিচ্ছে জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক