1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্দানশিন নারীদের জন্য সুইমিংপুল

৭ আগস্ট ২০১০

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘিকে সুইমিংপুলে রূপান্তরিত করার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেছে হাইকোর্ট৷ প্রশ্ন উঠেছে কেন? উত্তর যাই হোক, বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং নারীবাদী কর্মীরা কিন্তু ইস্যুটির ইসলামি ব্যাখা খুঁজতে শুরু করেছেন৷

https://p.dw.com/p/OeUH
swimming, pool, Germany, পর্দানশিন, নারী, সুইমিংপুল,
ফাইল ছবিছবি: AP

সেই আলোচনাটা অনেকটা এরকম : পর্দার আড়ালে নারী৷ পর্দাই নারীর মর্যাদার প্রতীক৷ অথবা বেপর্দা নারী এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা৷ ইসলাম ধর্মে বিষয়গুলি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ৷ অনেক ইসলামপন্থীর মতেই পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, দাম্পত্য-কলহ, পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিবাহ-বিচ্ছেদ, নারী-নির্যাতন ইত্যাদির পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো পর্দাহীনতা এবং নর-নারীর অবাধ মেলামেশা৷

কিন্তু, প্রসঙ্গ লালদীঘিতে নয়৷ প্রসঙ্গটি হলো জার্মানির হামবুর্গ শহরের একটা সুইমিংপুলে, যেখানে একটি মাত্র দিনে হলেও তা ব্যবহার করার অধিকার পেয়ে থাকেন পর্দানশিন মুসলিম নারীরা৷ আর পুরুষরা দাঁড়িয়ে থাকেন বাইরে৷

হামবুর্গের ‘সেন্ট পাউলি' সুইমিংপুল৷ দিনটা রবিবার৷ তাই সকাল থেকেই সেখানে ভীড় করেছেন শুধুমাত্র মুখ ঢাকা বা বোরখা পরিহিতা মুসলমান নারীরা৷ ছোট-বড় সকলেই৷ কানান কার্বা একটা শর্ট-প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে মুসলিম নারীদের সাঁতার কাটা শেখাচ্ছেন৷ পুলের পাশেই সাঁতার কাটার জন্য টাকা জমা নিচ্ছেন সাবিনা গোলিটস৷ দুটি বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে আসা একটি মেয়েকে তিনি বলছেন, ‘‘দুটি বাচ্চা৷ তার মানে চার ইউরো আশি সেন্ট৷ হমমম্ আর আলমারিতে জামা-কপড় রাখার জন্য তোমার কাছে এক ইউরোর কয়েন আছে তো?''

তা আছে, জানিয়ে দেয় সেই মহিলা৷ কিন্তু, একটি বাচ্চা সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন করে, ‘‘এখানে কোন ছেলেকে দেখা যাচ্ছে না কেন?'' মা বাচ্চাটিকে বোঝায়, ‘‘ইসলাম ধর্মে পুরুষদের সঙ্গে সাঁতার কাটা বা স্নান করা নিষিদ্ধ৷ অর্থাৎ পোশাক ছাড়া পর-পুরুষের সামনে যাওয়া মানা আমাদের৷''

অবশ্য এবার এরকম একটা সুইমিংপুল খুঁজে পাওয়ায় সে সমস্যা আর নেই৷ তাই রবিবার হামবুর্গের এই সুইমিংপুলটা যেন একটা পিকনিক করার জায়গায় পরিণত হয়৷ মায়েরা, মেয়েরা নির্দ্বিধায় এখানে আসেন, গল্প করেন, সাঁতার কাটা শেখেন, আর সাঁতার তো কাটেনই৷ সপ্তাহে একবার করে সাঁতার কাটার সুযোগ ছাড়তে চান না কেউই৷ আফগান বংশোদ্ভূত এক মায়ের কথায়, ‘‘সাঁতার কাটার ইচ্ছে আমার সেই ছোটবেলা থেকেই৷ কিন্তু, আগে তা সম্ভবই ছিল না৷ আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য সুইমিংপুলের কোনো ব্যবস্থাও নেই৷ তাই এখন আমার দারুণ মজা৷ অবশেষে যে আমি সাঁতার কাটা শিখছি৷''

আর এখানে যে শুধু সাঁতার কাটা শেখানো হয়, তা নয়৷ সাবিনার কথায়, ‘‘প্রত্যেক রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এখানে একটা ‘জিমনাস্টিক'এর ক্লাস হয়৷ নানা রকম ব্যায়াম শেখানো হয় সেখানে৷ সেই ক্লাস করলে সত্যি খুব ঝরঝরে লাগে৷ নিজেকে একেবারে তরতাজা মনে হয়৷''

তবে সপ্তাহে মাত্র একবার এই সুযোগ থাকায় সন্তুষ্ট নয় অনেকেই৷ অনেক চেষ্টা করেও নারীদের জন্য আলাদা করে আর একটা দিন বের করতে রাজি নয় ‘সেন্ট পাউলি' সুইমিংপুলের কর্মকর্তারা৷ এই পুলের অন্যতম নারী সাঁতারু রুবাইয়া জানায়, ‘‘সাঁতার কাটতে আমার দারুণ লাগে৷ আসলে জল ব্যাপারটাই আমার কাছে ভীষণ আকর্ষক মনে হয়৷ এখানে অবশ্য বেশিরভাগ মেয়েই সাঁতার না কেটে শুধুমাত্র জল নিয়ে খেলতে ভালোবাসি৷ যে যার মতো লাফ দেয়, হাসা-হাসি করে৷ এটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না৷''

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক