1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ শরণার্থীদের শেষ ঠিকানা রাজধানী ঢাকা

২৬ অক্টোবর ২০০৯

ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে স্থানচ্যুত মানুষের ভিড় বেড়ে চলেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়৷ সাথে রয়েছে অপরিকল্পতি এবং দ্রুত নগরায়ণ প্রক্রিয়া৷ ফলে পরিবেশের অবক্ষয়সহ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে রাজধানী - মন্তব্য বিশ্লেষকদের৷

https://p.dw.com/p/KFTA
ছবি: AP

২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল৷ প্রাণ হারায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ৷ পরিবেশ শরণার্থীতে পরিণত হয় শাহানার মতো হাজারো অসহায় নারী-পুরুষ৷ নিরুপায় হয়ে শাহানা ঢাকায় এসে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী বস্তিতে আশ্রয় নেয়৷ ২৫ বছর বয়সি শাহানা বার্তা সংস্থা এএফপি'কে জানান, ‘‘দুই বছর আগে ঘর-বাড়ি সব হারিয়ে ঢাকায় আশ্রয় নিই৷ এখানে আসার পর আমার স্বামী জেলে হিসেবে কাজ করে সামান্য উপার্জন করে৷ কোন রকমে দিন চলে যায়৷ আমাদের মেয়ে দু'টোকে গ্রামে ফেরত পাঠাতে চাই৷ কিন্তু সেখানে কোন ঠিকানা নেই, ঘর-বাড়ি নেই৷ কোথায় পাঠাবো?'' হতাশা শাহানার চোখে-মুখে৷ এর মধ্যেই এ বছরের মে মাসে আবারও ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় তিন শতাধিক৷ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে সাড়ে তিন লাখ মানুষ৷ যাদের অধিকাংশই আশ্রয় নেয় ঢাকার অলিতে-গলিতে৷

Arbeitslose in Dhaka
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০২০ সাল নাগাদ ঢাকার বাসিন্দা হবে দুই কোটিরও বেশি (ফাইল ফটো)ছবি: DW

ঢাকার বর্তমান চেহারা

১৯৭৪ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল এক লাখ ৭৭ হাজার৷ কিন্তু বর্তমানে সেখানে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২০ লাখে৷ ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি৷ শুধু তাই নয় এর জনসংখ্যা আরো ফুলে ফেঁপে উঠছে প্রতিনিয়ত৷ বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০২০ সাল নাগাদ ঢাকার বাসিন্দা হবে দুই কোটিরও বেশি৷ ২০০৬ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার ৩০ লাখ মানুষ অর্থাৎ প্রত্যেক চার জনে একজন বস্তিতে বাস করে৷ সেসময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল এক কোটি ৬০ লাখ৷ এদিকে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে বাস করে মাত্র ৩০ লাখ মানুষ৷

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ

ঢাকায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ব্রিট হাগস্ট্রোম বলেন, ‘‘নতুন শহর গড়ে তোলা অতীব জরুরি৷ কেননা সবকিছু ঢাকায় রাখা যায় না৷ ঢাকা শহর ইতিমধ্যেই বিশাল আকার নিয়ে ফেলেছে৷'' আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা - আইএমও'র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘‘নদী ভাঙন, সাইক্লোন এবং বন্যার কারণে দেশে এখন বিপুল সংখ্যক স্থানচ্যুত মানুষ৷ সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার আরো বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে যা কখনো শেষ হওয়ার নয়, বলেন ফাতিমা৷

জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তার অভিমত

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্ত-সরকার পরিষদ - আইপিসিসি'র সাবেক কর্মকর্তা আতিক রহমান বলেন, ‘‘আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পরপর বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতো৷ কিন্তু বর্তমানে ২-৩ বছর পরপরই বড় দুর্যোগ হানা দিচ্ছে৷'' আইপিসিসি'র আশংকা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বে৷ আতিক রহমানের মন্তব্য, ‘‘এসব বাস্তুহারা মানুষের অধিকাংশই চরম দরিদ্র হয়ে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত ঢাকার বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নিবে৷'' যেকারণেই তিনি বরাবরই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্থানচ্যুত মানুষদের জন্য ধনী দেশগুলোর দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার