1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পক্ষাঘাত সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবন!

১৬ এপ্রিল ২০১৮

পক্ষাঘাতের ফলে শরীর অচল হয়ে পড়লে মানুষ অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়ে৷ অনেক অঙ্গ মস্তিষ্কের নির্দেশ মানতে পারে না৷ বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে এমন এক প্রণালী গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, যার ফলে এই সব মানুষও উঠে দাঁড়াতে পারবেন৷

https://p.dw.com/p/2w6P4
ছবি: Picture-Alliance/KEYSTONE

স্কি করতে গিয়ে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনার ফলে ১৯ বছর বয়সি মারিউস সুস্টেয়া-র দুই পা বিকল হয়ে গেছে৷ কোমরের নীচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷ কিন্তু আবার একদিন উঠে দাঁড়ানোর আশা করছে এই তরুণ৷ তিনি বলেন, ‘‘আবার উঠে দাঁড়াতে পেরে আমি খুশি৷ আবার হাঁটতে পারছি, কিছুটা নড়াচড়া করতে পারছি৷ কোনো এক সময়ে দুই পায়ে সাড় ও শক্তি ফিরবে বলে আশা করছি৷’’

মারিউস ও অন্যান্য পক্ষাঘাতের রোগীকে সাহায্য করছে এক এক্সোস্কেলিটন৷ এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় সেটি সৃষ্টি ও পরীক্ষা করা হয়েছে৷ থেরাপিস্ট ও নিউরোলজিস্টরা মনে করেন, এই প্রোটোটাইপের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাঁদেরই একজন ফেডেরিকা টাম্বুরেলা৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রচলিত রিহ্যাবের মাধ্যমে এই রোগীরা বিনা সাহায্যে সমান্তরাল বার ধরে হাঁটতে পারতেন না৷ তাঁদের পক্ষে হাঁটার অনুভূতি ফিরে পাওয়া সম্ভব হতো না৷ এই এক্সোস্কেলেটন তাঁদের স্বাভাবিক ও শারীরিক পথে সেই চেতনা ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ শরীরের নিম্নাংশ স্বাভাবিক ছন্দে দোলানো যে কোনো প্রচলিত রিহ্যাব কৌশলের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷’’

নিউরোলজিস্ট হিসেবে মার্কো মোলিলারি বলেন, ‘‘মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও  হাঁটার ক্ষমতা ফিরে পাওয়া এই রোগীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ হুইলচেয়ার ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য উঠে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উচ্চতায় জগতকে দেখা, অন্যদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারা তাঁদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷’’

গবেষকরা আরও এগিয়ে যেতে চান৷ প্যারাপ্লেজিয়া রোগীরা একদিন নিজেদের মস্তিষ্ক থেকে সংকেত পাঠিয়ে এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণ করবে, এটাই তাঁদের স্বপ্ন৷ এই প্রোটোটাইপ ব্যবস্থার নাম ‘মাইন্ডওয়াকার’৷ এই প্রকল্পে সক্রিয় বিজ্ঞানীরা একদিন রোগীদের অনেক সমস্যা দূর করার আশা রাখেন৷ ‘মাইন্ডওয়াকার' প্রকল্পের মিশেল ইলকোভিৎস বলেন, ‘‘আমরা এমন এক প্রণালী তৈরি করতে চাই, যার আওতায় রোগীর মস্তিষ্কের কর্টেক্সের সংকেত  এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণ করবে৷ কিছু কারণে এখনো সেটা সম্ভব হচ্ছে না৷ প্রথমত, মাথার খুলি মস্তিষ্ক ও পরিমাপ যন্ত্রের মাঝে বাধা সৃষ্টি করে৷ অর্থাৎ সিগনাল যথেষ্ট স্পষ্ট হয় না৷ তাছাড়া এক্সোস্কেলিটনের ভাইব্রেশন আরেকটি সমস্যা৷ তার একটানা শব্দ মস্তিষ্কের সংকেতের মান বিকৃত করে৷ ফলে তার ব্যবহার আরও কঠিন হয়ে যায়৷’’

এমন সব বাধা দূর করতে গবেষকরা মস্তিষ্কের শর্টকার্টের সন্ধান করছেন৷ চোখের মধ্য দিয়ে এমন এক শর্টকার্ট রয়েছে৷ রেটিনার মাধ্যমে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তাঁরা বিভিন্ন নিউরাল সিগনাল চিহ্নিত ও আলাদা করতে চাইছেন৷ এগুলির সাহায্যে এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন তাঁরা৷ নিউরোফজিওলজিস্ট গি শেরোঁ বলেন, ‘‘আমরা রেটিনায় পাঠানো সিগনালের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কী, তা জানি৷ মস্তিষ্ক মানানসই তরঙ্গদৈর্ঘ্য সৃষ্টি করে সেই সিগনালে সাড়া দেয়৷ প্রথমে যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য পাঠানো হয়েছিল, তা জানার ফলে আমরা তার জবাবে পাঠানো মস্তিষ্কের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছেঁকে নিতে পারি৷ সেই মস্তিষ্ক তরঙ্গ ব্যবহার করেই সম্ভবত এক্সোস্কেলিটন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে৷’’

অত্যন্ত জটিল গবেষণা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা অদূর ভবিষ্যতে প্যারাপ্লেজিক্স-এর জন্য সমাধানসূত্র খুঁজে বার করার আশা করছেন৷ মিশেল ইলকোভিৎস বলেন, ‘‘তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা এমন এক সিস্টেম বিপণনের সম্ভাবনা দেখছি৷ কিন্তু তার আগে আমাদের গোটা প্রণালীকে আরও শক্তিশালী, ব্যবহারের জন্য আরও সহজ করে তুলতে হবে৷ সেইসঙ্গে উৎপাদনের ব্যয় কামতে হবে৷’’