1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নোবেল পুরস্কার

ব্রিগিটে অস্টেরাথ/এসি৭ অক্টোবর ২০১৩

মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ক’জন মনিষী? কোন গবেষকদের নোবেল পুরস্কার গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল? কোন দেশ এ যাবৎ সবচেয়ে বেশি নোবেল পুরস্কার জিতেছে? বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কারের নানা দিকের খতিয়ান এটি৷

https://p.dw.com/p/19u9p
নোবেল প্রাইজ মেডেলছবি: picture-alliance/dpa

আলফ্রেড নোবেল যখন উইল করে তাঁর কষ্টার্জিত সব অর্থ নোবেল ফাউন্ডেশনকে দান করে যান, তখন তাঁর আত্মীয়স্বজনরা স্বভাবতই সন্তুষ্ট হননি, এমনকি আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছিলেন৷ কাজেই নোবেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে, অর্থাৎ ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়৷ সে যাবৎ বিশ্বের এই সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারের ইতিহাসে অনেক কিছুই ঘটেছে৷

মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার

শুধু জীবিতদেরই নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা চলে৷ তা সত্ত্বেও ডাগ হ্যামার্স্কোল্ড ১৯৬১ সালে মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন, যেমন এরিক আক্সেল কারফেল্ড ১৯৩১ সালে সাহিত্যে মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন৷ এগুলো নিয়মের ব্যতিক্রম নয়, কেননা উভয়েই মনোনীত হবার পরে অথচ পুরস্কার গ্রহণ করার আগে ইহলোক থেকে বিদায় নিয়েছিলেন৷ ১৯৭৪ সাল যাবৎ কোনো পরিস্থিতিতেই একজন মৃত ব্যক্তির নোবেল পুরস্কার পাওয়া সম্ভব নয়৷

তা সত্ত্বেও ২০১১ সালে ঠিক সেই ঘটনাই ঘটে৷ ব়্যাল্ফ স্টাইনম্যান চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, নোবেল কমিটি এ কথা যখন ঘোষণা করেন, তখন তারা জানতেন না যে, তার ঠিক তিন দিন আগে স্টাইনম্যান পরলোকগমন করেছেন৷ কাজেই স্টাইনম্যানের ক্ষেত্রে শেষমেষ ব্যতিক্রম করা হয়৷ তাঁর আত্মীয়েরা পরে প্যারিসে স্টাইনম্যানের হয়ে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন৷

Muhammad Yunus Nobelpreis 2007
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জয় করেন মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকছবি: Getty Images/AFP

দু'বার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী

চারজন বিজ্ঞানী দু'বার করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থবিদ জন বার্ডিন পদার্থবিদ্যায় দু'বার নোবেল পুরস্কার পান: একবার ট্রানজিস্টর আবিষ্কার করার জন্য (১৯৫৬); দ্বিতীয়বার সুপারকন্ডাক্টিভিটি থিওরির জন্য (১৯৭২)৷ ব্রিটেনের বায়োকেমিস্ট ফেডেরিক স্যাঙ্গার রসায়েন দু'বার নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন: প্রথমবার ইনসুলিনের কাঠামো ব্যাখ্যার জন্য (১৯৫৮); দ্বিতীয়বার ডিএনএ সংক্রান্ত কাজের জন্য (১৯৮০)৷

মার্কিন রসায়নবিদ লিনাস পলিং-এর বিশেষত্ব হলো, তিনি শুধু রসায়নেই নয়, সেই সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কারও জিতেছেন: ১৯৫৪ সালে প্রথমটি এবং ১৯৬২ সালে দ্বিতীয়টি৷ পরীক্ষামূল আণবিক বিস্ফোরণের তীব্র বিরোধিতার জন্য পলিং-কে শান্তি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়৷

তবে দু'বার নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে যার নাম সবচেয়ে খ্যাত, তিনি অবশ্যই ম্যাডাম কুরি, যিনি ১৯০৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান তাঁর তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য – এবং ১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান পোলোনিয়াম এবং রেডিয়াম, এই দু'টি ধাতু আবিষ্কারের জন্য৷

নয়ত ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মাত্র ৪৪ জন মহিলা৷ বিজ্ঞানের তিনটি মুখ্য বিভাগে মহিলারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র ১৬ বার – অর্থাৎ সাকুল্যে তিন শতাংশ: পদার্থবিদ্যায় দু'জন মহিলা, রসায়নে চারজন এবং চিকিৎসাবিদ্যায় কিছু-না-হলেও দশ জন মহিলা৷

নোবেল প্রত্যাখ্যান

এ যাবৎ একজন শান্তি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী – লে ডুক থো – এবং একজন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী – জাঁ পল সার্ত্র – নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ সার্ত্র যাবতীয় সরকারি সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করতেন৷ লে ডুক থো ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন৷ তবে বিজ্ঞান বিষয়ক নোবেলগুলির ক্ষেত্রে এ যাবৎ এ ধরনের প্রত্যাখ্যান ঘটেনি৷

হিটলারের শাসনের আমলে জার্মান বিজ্ঞানীদের নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ছিল৷ এভাবেই ১৯৩৮ সালে রিশার্ড কুন রসায়নে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি৷ তার পরের বছর রসায়নে আডল্ফ বুটেনান্ড এবং চিকিৎসাবিদ্যায় গেরহার্ড ডোমাক ঠিক ঐ ভাবে তাদের পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই জার্মান বিজ্ঞানীরা তাদের পদক ও সম্মানপত্র পান ঠিকই, কিন্তু পুরস্কারের অর্থটা মাঠে মারা যায়৷

নোবেল জয়ে কোন দেশ সবচেয়ে সফল?

বিজ্ঞান বিষয়ক নোবেলগুলি জয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালিকার শীর্ষে: পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেলজয়ীদের ৪৩ শতাংশ ছিলেন মার্কিন নাগরিক৷ পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি ও ব্রিটেন – চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে ব্রিটেন দ্বিতীয় এবং জার্মানি তৃতীয়৷ উভয় ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স৷

নোবেলজয়ীদের জন্মের তারিখ

নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিভা পৃথিবীর মুখ দেখেছেন ২২ মে এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে৷

নোবেলজয়ীদের বয়স

নোবেল পুরস্কারের ছ'টি বিভাগ একসঙ্গে ধরলে পুরস্কার জয়ের সময় নোবেল বিজয়ীদের বয়স দাঁড়ায় গড়ে ৫৯ বছর৷ বিজ্ঞান বিষয়ক নোবেলগুলির ক্ষেত্রে বিজয়ীদের গড় বয়স ৫৭, চিকিৎসাবিদ্যায় আরো কম: ৫৫ বছর৷

নোবেলের ইতিহাসে তরুণতম বিজয়ী ছিলেন লরান্স ব্র্যাগ, যিনি ১৯১৫ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর৷ অপরদিকে বিজ্ঞান বিষয়ক নোবেলগুলির ইতিহাসে প্রবীণতম বিজয়ী হলেন ৮৮ বছর বয়সি পদার্থবিদ রেমন্ড ডেভিস জুনিয়র৷ তবে তার চাইতেও বেশি বয়সের মানুষ নোবেল জিতেছেন, যেমন দুই অর্থনীতিবিদ লেওনিড হুরউইৎস ও লয়েড শেপলি, যাদের বয়স ছিল ৯০ এবং ৮৯৷