1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নীল তিমি’ বানালো দুই বাঙালি তরুণ

২১ জুলাই ২০১০

নীল তিমি শুনে ভেবে বসবেন না, বাংলাদেশের দুই তরুণ বোধহয় সমুদ্রের তিমি-টিমি টাইপের কিছু বানিয়ে ফেলেছে৷ না, বিষয়টি সেরকম নয়৷ তারা যেটা নিয়ে গবেষণা করছে সেটির ইংরেজি নাম ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম৷

https://p.dw.com/p/OQSd
মিশিগানে সেন্ট জোসেফ মারসি হাসপাতালে সক্রিয় রোবোট (ফাইল ছবি)ছবি: AP

এই সিস্টেমের কাজ হচ্ছে ঘরবাড়ির মধ্যে থাকা বিভিন্ন বস্তু বা মানুষের সঠিক অবস্থান নির্ণয় এবং সেগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ৷

ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম কেন

আরেকটু সহজ করে বলা যাক, ধরুন একটি হাসপাতালে কয়েকজন রোগী আছেন৷ এদের সবারই হাসপাতালের মধ্যেই ঘুরে ফিরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে৷ এখন ঘুরতে গিয়ে কোন এক জায়গায় হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেলেন একজন রোগী৷ প্রচলিত পদ্ধতিতে তখন সেই রোগীকে খুঁজতে যাবেন জনাকয়েক মানুষ৷ নাম ধরে ডাকবেন কিংবা বাথরুম থেকে শুরু করে সিঁড়িঘর, লিফট - সব জায়গায় চষে বেড়াবেন তার খোঁজে৷ কত ঝক্কি!

ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম কিন্তু এই কাজটি অনেকটাই সহজ করে দিতে পারে৷ শুধু প্রয়োজন রোগীর কাপড়ে একটি ট্যাগ৷ এরপর এই সিস্টেমই খুঁজে দেবে কাঙ্খিত রোগীটি হাসপাতালের কোথায় আছে৷

এভাবে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম কাজে লাগতে পারে কলকারখানায়৷ এমনকি ঘরবাড়িতে৷ তাছাড়া রোবট গবেষণায়ও প্রয়োজন এই প্রযুক্তি৷ কেননা, রোবটের চলাচল কিংবা গতিবিধি পর্যবেক্ষণে কাজ করে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম৷

জটিল গবেষণা

এতক্ষণ যা বললাম, তা শুনে খুব সহজ মনে হতে পারে৷ কিন্তু কাজটি আসলে বেশ জটিল৷ তাই বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম নিয়ে৷ এই গবেষণায় বেশ খানিকটা এগিয়েছে বাংলাদেশের দুই তরুণ৷ এরা হচ্ছেন তাসবিরূন নাহিয়ান উপল ও আহসান হাবীব সজল৷ দু'জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ, তড়িৎ কৌশল ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী৷ তাদের তৈরি ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম এর নাম ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি৷

যেভাবে কাজ করে নীল তিমি

নীল তিমি কাজ করে শব্দোত্তর বা আলট্রাসনিক সিগন্যালের তৈরি স্থির তরঙ্গ বা স্ট্যান্ডিং ওয়েভ ব্যবহার করে৷ এতে করে লক্ষ্যবস্তু এবং যন্ত্রটির বেইজ পয়েন্টের মধ্যে বিশেষ আল্ট্রাসনিক সিগন্যালের একটি ধারা তৈরি হয়৷ উপল জানালেন, তাদের নীল তিমি একই ধরণের বিশ্বের অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে আরো নিখুঁত ফলাফল দিতে সক্ষম৷ একইসঙ্গে খরচের দিকে থেকে এটি সাশ্রয়ী৷ তাই, তাদের এই গবেষণা এগিয়ে নিতে পারলে ভবিষ্যত বেশ উজ্জ্বল৷ কিন্তু এজন্য প্রয়োজন সময় এবং আর্থিক সহায়তা৷ তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা বা আশ্বাসও কোথাও থেকে পাইনি৷ তবে এখন মোটামুটি অনেকেই ব্যাপারটা সম্পর্কে জেনেছেন৷ আমরা আশা করছি যারা বিজ্ঞানমনষ্ক এবং বিজ্ঞানের চর্চাকে এগিয়ে নিতে চান, তারা আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন৷

জুরিখে বিজ্ঞানসভা

সেপ্টেম্বরে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম নিয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানসভা৷ সেখানে অংশ নেবার আমন্ত্রণ পেয়েছেন এই দুই বাংলাদেশি তরুণ৷ কিন্তু সমস্যা একটাই৷ জুরিখে যাবার প্রয়োজনীয় বিমান খরচ এখনো পায়নি তারা৷ তবে আশাবাদী আহসান হাবীব সজল, সুইজারল্যান্ডে যাবার জন্য ফান্ড বের করার চেষ্টা করছি৷ সেটা এখনো আমরা পাইনি৷ আশা করি পেয়ে যাব, আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি৷

উল্লেখ্য উপল এবং সজলের তৈরি নীল তিমি ছাড়াও রয়েছে আরো কয়েকটি ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম৷ যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি-র আবিষ্কৃত সিস্টেমের নাম ক্রিকেট৷ রয়েছে ডলফিন, অ্যাকটিভ ব্যাট নামক আরো কয়েকটি এধরণের প্রযুক্তি৷ কিন্তু এসবের চেয়ে নীল তিমি ভালো ফলাফল দেবে, এমনটাই মত দুই তরুণের৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই