নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে ফরাসি ‘মলাস্ক’ ঝিনুক
৭ নভেম্বর ২০১০সাম্প্রতিক এক ভাইরাসের আক্রমণের কারণেই নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে রসনাতৃপ্তিকর সুস্বাদু ফরাসি এইসব মলাস্ক ঝিনুক৷
ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভেতরে বিষের বালি মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও - বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কবি আবুল হাসান তাঁর একটি কবিতায় এমন লিখেছিলেন৷ কিন্তু ফ্রান্সের মলাস্ক ঝিনুকদের বোধহয় মুখ বুঁজে সহ্য করার ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নিয়েছে সাম্প্রতিক এক ভাইরাস৷ জানা গেছে, এই রাক্ষুসে ভাইরাসের কারণে রীতিমতো মড়কই লেগেছে মলাস্ক ঝিনুকে৷
এমন হতে পারে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফ্রান্সে হয়তো আর কোন ঝিনুক চাষীই আর থাকবেন না৷ গত সপ্তাহে সালোনে ডেল গুস্তো'য় আয়োজিত প্রোটেকশন অফ বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল ফুড প্রোডাকশন শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন কথাই বলেছেন৷
মলাস্ক ঝিনুকের এই মারী ও মৃত্যুর কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে মন্দা যাচ্ছে ফরাসি সব ঝিনুক চাষীদের ব্যবসাতেও৷ ঝিনুক চাষীদের এ'সংকটের মুল কারণটি সেই ভাইরাসই৷ হার্পেস নামের এক ভাইরাস, যার আক্রমণে মৃত্যু ঘটছে ইউরোপ জুড়ে সুস্বাদু হিসেবে খ্যাত কোমল এইসব ঝিনুকের৷ জানা গেছে, শুধু ফ্রান্স নয় ইউরোপের অনেক দেশেই এই ভাইরাসের আক্রমণের কারণে অসংখ্য ঝিনুকের অপমৃত্যু ঘটছে৷
সচরাচর জন্মাবার পর থেকে পরিণত হতে বা পূর্ণাবস্থায় পৌঁছাতে একটি মলাস্ক ঝিনুকের সময় লাগে কমপক্ষে তিন বছর৷ কিন্তু জানা গেছে, হার্পেস ভাইরাসের আক্রমণে অধিকাংশ ফরাসি মলাস্ক ঝিনুকই তাদের শৈশবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করছে৷ এই ভাইরাসটি পূর্ণবয়স্ক ঝিনুকের কোন ক্ষতি করতে পারে না, এমনকি এটি মানুষেও ছড়ায় না৷
১৯২৯ সাল থেকে ঝিনুকের চাষ করে আসছেন মাহেও'র পরিবার৷ তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির নাম লা গাভ্রিনিস৷ মাহেও তাঁর বাবার পর তাঁদের এই পারিবারিক ব্যবসায় এসেছেন৷ তিনি বলেন, কতোজন ঝিনুক চাষীইবা এই যৎসামান্য ঝিনুক উৎপাদন করে তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন? সব সময়ই কিছু না কিছু ঝিনুক মরে যায়, কিন্তু প্রায় আশি শতাংশ ঝিনুকের মৃত্যু! এটি একেবারেই অস্বাভাবিক৷
বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সবিশেষ চিন্তিত৷ বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত কোন সমাধান দিতে পারেননি এর৷ অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের বিদায় করে দিতে বাধ্য হয়েছে, অনেকেই স্রেফ তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁদের ঐতিহ্যবাহী এই ঝিনুক ব্যবসা৷ তবে ঝিনুকে সাম্প্রতিক এই মড়কের কারণটি যে হার্পেস ভাইরাস, সেটি সম্পর্কে কোন কোন ঝিনুক চাষী যারা প্রাকৃতিক পন্থায় ঝিনুকের চাষ করেন তারা বলেছেন- কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ঝিনুকের কারণেই এই ভাইরাসের সৃষ্টি হয়েছে৷
প্রকৃতিতে জন্ম নেয়া ঝিনুকের থাকে দু'জোড়া ক্রোমোজম কিন্তু ল্যাবরেটরি বা গবেষণাগারে কৃত্রিম পদ্ধতিতে তিন জোড়া ক্রোমোজমের ঝিনুক সৃষ্টি করা হয়৷ এর ফলে এরা দ্রুত বাড়ে৷ ধারণা করা হচ্ছে দ্রুতবর্ধনশীল এই ঝিনুক থেকেই হার্পেস ভাইরাস ছড়িয়েছে৷
কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে জন্ম নেওয়া এই ঝিনুকের কল্যাণে একদিকে যেমন মহার্ঘ ঝিনুক কম খরচের খাবারে পরিণত হয়েছিল ঠিক তেমনি সেটি ডেকে এনেছে হার্পেসকে৷ যার ফলে এই ঐতিহ্যবাহী অভিজাত ফরাসী খাবারটি ইউরোপের রেস্তোরাগুলো থেকে প্রায় হারাতেই বসেছে৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক