নিভে যাওয়া তারা
সৃষ্টির সব কিছু নশ্বর৷ আকাশের তারাও অনন্তকালের জন্য নয়৷ তারাদের যখন মরণ ঘটে, তখন তারা রেখে যায় মহাকাশে এক আশ্চর্য বর্ণালী৷
আকাশ ভরা সূর্য তারা
সব মানুষই কখনো না কখনো ভেবেছেন, আকাশে কত তারা....জ্বলছে, দপ দপ করছে৷ কিন্তু অনন্তকালের জন্য নয়৷ তারাদেরও মরণ আছে, যদিও তা আসবে লক্ষ কোটি বৎসর পরে...৷
তারারা বাঁচে হাইড্রোজেন থেকে
আমাদের সূর্যও একটি তারা৷ তারারা গ্যাস ও প্লাজমা – অর্থাৎ ঘনীভূত তরল পদার্থ – দিয়ে তৈরি৷ আলো বিকিরণ করে৷ তারার ভেতরে হাইড্রোজেন মেলে হিলিয়ামের সঙ্গে, ফলে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি শক্তি উৎপাদিত হয়৷ কিন্তু কালে হাইড্রোজেন ফুরিয়ে আসে৷ তখন তারার শেষ দশা৷
সাদা বামন
সব তারা একভাবে ‘বুড়ো’ হয় না! হালকা তারাগুলো – যাদের ‘মাস’ বা পদার্থ হয়ত আমাদের সূর্যের এক-তৃতীয়াংশ – সেগুলো হাইড্রোজেন ফুরোলেই নিভে যায়; শুকিয়ে, কুঁকড়ে গিয়ে হয়ে দাঁড়ায় ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ’ বা ‘সাদা বামন’৷ দুঃখের বিষয়, সাদা বামনদের কোনো ছবি নেই – কিন্তু তারার হিসেবে তারা অতি ছোট, অনেকটা আমাদের পৃথিবীর মতো – যদিও ঘনত্ব অনেক বেশি৷ এই সাদা বামনরা এখনও খানিক উত্তাপ ছড়ায়, যদিও তা-ও একদিন অন্তর্হিত হবে৷
লাল দৈত্য
বড়, ভারী তারাগুলোর মরণ ঘটে একটু অন্যভাবে৷ হাইড্রোজেন ফুরোলেই তাদের তাপ বাড়ে অস্বাভাবিকভাবে৷ তাপমাত্রা দশ কোটি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছালে হিলিয়াম পুড়তে শুরু করে! হিলিয়াম পুড়ে সৃষ্টি হয় কার্বন ও অক্সিজেন৷ তারাটা তখন ফুলে উঠে ‘রেড জায়ান্ট’ বা লাল দৈত্যের আকার ধারণ করে৷ এই সব লাল দৈত্য আমাদের সূর্যের ৮০০ গুণ এবং সূর্যের চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ উজ্জ্বল হতে পারে৷
মুমূর্ষু তারার শেষ নিঃশ্বাস
লাল দৈত্যরা বহুকাল ধরে স্থিতিশীল থাকে৷ কিন্তু আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ত্বক টেনে লম্বা হয়ে যায় ও ঘনত্ব হারায়৷ অপরদিকে তারার ভিতরের অংশ আরো ঘন হয় এবং তার তাপমাত্রা বাড়ে৷ তারাটা আর শক্তপোক্ত থাকে না৷ এমনকি তার ত্বক পুরোপুরি খসে যেতে পারে৷ সেই ত্বক তখন গ্রহতারকার নেবুলা হয়ে মহাকাশে ভেসে বেড়ায়৷ ছবিতে যেমন আমাইজেন নেবুলা বা পিঁপড়ের নেবুলা৷ ছবিটা তোলা হয়েছে হাবল টেলিস্কোপ থেকে৷
মুমূর্ষু তারার ভুতুড়ে আলো
ইএসও ৩৭৮-১ নেবুলার এই ছবিটি তোলা হয়েছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার উত্তর চিলিতে স্থাপিত ‘ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ’ দিয়ে৷ নেবুলাটির ডাকনাম হল ‘দক্ষিণের প্যাঁচা’৷ প্যাঁচাটির ব্যাস প্রায় চার আলোকবর্ষ!
সুপারনোভা
খুব ভারী তারা থেকে সৃষ্ট লাল দৈত্যরা সব হিলিয়াম পুড়ে যাওয়ার পরও জ্বলতে থাকে৷ ফিউজন বা গলনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তাপমাত্রা ক্রমেই আরো বাড়তে থাকে৷ শেষমেষ লাল দৈত্যটি একটি চমকপ্রদ সুপারনোভা বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায়৷ ধ্বংসের আগে ঐ একটি তারা একটা গোটা নক্ষত্রপুঞ্জের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷