‘‘পুলিশ কার নির্দেশে চলে? নাশকতায় হেডমাস্টার তো আওয়ামী লীগই৷ বিএনপি ও ২০ দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় করছে!''
উপরের মন্তব্যটি ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু এয়ার মুহাম্মদের৷ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘আমরাও চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক৷ বিএনপিকে নাশকতা বন্ধ করতে হবে৷ নাশকতা করলে পুলিশ ধরবে, মামলা হবে এটাইতো স্বাভাবিক৷'' ফেসবুকে পাঠকবন্ধুদের কাছে এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিলো৷
এর উত্তরে লবঙ্গ থেরাপি নামের একজন লিখেছেন, ‘‘মাহবুব উল আলম হানিফ সঠিক কথাই বলেছেন, এতে প্রতিক্রিয়ার তো কিছু দেখছি না৷''
আহমেদ সেজাদের পাল্টা প্রশ্ন লবঙ্গ থেরাপির কাছে, ‘‘মাহবুব উল আলম হানিফ কী ভাবে সঠিক কথা বললেন, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন৷''
মাসুদ শরীফের মন্তব্য, ‘‘বিএনপি বলেছে তারা নির্বাচনে অবশ্যই আসবে যদি নিরপেক্ষ ভাবে হয় এবং কোনো সরকারের অধীনে নয়, তত্ত্বাবধায়কের অধীনে, এমনকি হাসিনাকে প্রধান রেখে জাতিসংঘের অধীনে যেতেও রাজি হয়েছে৷ ওদের কোন দাবিই অযৌক্তিক নয়, সংলাপ চেয়েছে, তাতেও রাজি না সরকার৷ আবার বিনা ভোটে ১৫৪ জন জনপ্রতিনিধি সেজেছে৷ তাহলে নির্বাচন হলো কোথায়? জনগণ খুব ভালোই বুঝেছে কোনটা যৌক্তিক৷ আশা করি সেকথা কাউকে বুঝিয়ে দিতে হবে না''
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন
পুরনো ঢাকার বাবু বাজারে কাগজ বোঝাই একটি ট্রাকে জ্বলছে দুষ্কৃতিকারীদের দেয়া পেট্রোল বোমার আগুন৷ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ৷ ডাকা হচ্ছে হরতালও৷ অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে আলোচিত পেট্রোল বোমা৷ শুধু পেট্রোল বোমার আগুনেই পুড়ে মরেছে কমপক্ষে ৬৫ জন সাধারণ মানুষ৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
পুলিশ প্রহরায় চলছে পরীক্ষা
ঢাকার মতিঝিল আইডিয়িাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পুলিশ প্রহরা৷ চলমান এ অবরোধ-হরতালে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা অন্যতম৷ বর্তমানে সারা দেশে চলা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন তাই অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে৷ টানা অবরোধের মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে চলছে পরীক্ষা৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
দূরপাল্লার বাস নেই বললেই চলে
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলির ডাকা অবরোধে বাংলাদেশের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্ত৷ দুপুর বেলায় তোলা এ ছবিতে মহাসড়কটি প্রায় যানবাহন শূন্য৷ কিন্তু সাধারণ সময়ে এ সড়কটি থাকে যানবাহনে ভরা৷ বাংলাদেশে চলমান অবরোধে দূর পাল্লার গাড়ি চলাচল কমে গেছে বহুলাংশে৷ একের পর এক পেট্রোল বোমার ঘটনায় ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাচ্ছেন না অনেক মালিকই৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
বিজিবি-র টহল পর্যাপ্ত নয়
অবরোধের মধ্যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয়, মানে ঢাকার বাইরে বিজিবি-র টহল থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য৷ এছাড়া সম্প্রতি রাত ন’টার পরে বাস চলাচলে সকলকে নিরুৎসাহ করার কারণে বাস মালিকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
ঢাকায় অস্বাভাবিক নয় যানজট
বাংলাদেশে চলমান এই অবরোধে ঢাকার ভেতরের সড়কের দৃশ্য অবশ্য আলাদা৷ যান চলাচল অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও, অনেক জায়গাতেই যানজট দেখা যাচ্ছে৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসযাত্রীরা
ঢাকার ফার্মগেটে অফিস শেষে গাড়ির অপেক্ষায় বাড়িমুখী মানুষের ভিড়৷ টানা অবরোধে গণ পরিবহন ব্যবস্থা বেহাল হলেও, অর্থাৎ গাড়িঘোড়ার চলাচল কম থাকাতে দুর্ভোগ বেড়েছে অফিসমুখী ও অফিস ফেরত মানুষের৷ অফিসে যেতে বা অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সাধারণ মানুষ তাই পড়ছেন দুর্ভোগে৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
অবরোধে নদীপথের ভিন্ন চিত্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদীবন্দর ঢাকার সদরঘাটের চিত্র এটি৷ গত একমাসেরও বেশি সময়ের এই অবরোধে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি নদীপথে৷ তাই নদীপথে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিকই আছে৷ ঢাকা থেকে প্রধানত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
যাচ্ছে না দূরপাল্লার বাসগুলো
বিএনপি ও সমমনা দলের জোটসমূহের ডাকা হরতাল-অবরোধে ঢাকার অন্যতম প্রধান বাস স্টেশন গাবতলীর দৃশ্য এটি৷ বেশিরভাগ দূর পাল্লার রুটের বাসই এ স্টেশনে পার্ক করে রাখা৷ হরতাল-অবরোধে দূর পাল্লার বাস চলাচল অনেকাংশেই বন্ধ আছে বাংলাদেশে৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
খদ্দেরহীন এক রেস্তোরাঁ
ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশনের খদ্দেরশূন্য মোহাম্মাদীয়া রেস্তোরাঁ৷ অবরোধের কারণে এ রেস্তোরাঁর লোকবল ১৬ জন থেকে ৮ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ বাকি যে আটজন আছেন তাঁদেরও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিক৷ গাবতলী স্টেশন থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় এ রেস্তোরাঁটি দিনের বেশিরভাগ সময় খালি থাকছে৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ
অবরোধ আর হরতালকারীদের প্রধান লক্ষ্য সড়কে চলাচলকারী বাস আর ট্রাক৷ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগেই যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রাকে৷ এতে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পোড়ায় ক্ষত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছেন আরো শতাধিক সাধারণ মানুষ৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
কমলাপুর রেল স্টেশনে অপেক্ষায় যাত্রীরা
অবরোধে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করলেও, সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ৷ বিভিন্ন সময়ে অবরোধকারীদের রেল লাইনের ‘ফিশপ্লেট’ খুলে ফেলার কারণে কয়েকটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায় ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে৷ তাই বেশিরভাগ ট্রেনই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা
টানা অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা৷ স্বল্প পুঁজির এ সব ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকেরই৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
পুঁজি ভেঙে চলছে যাঁর সংসার
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকার ফুটপাথে কম্বলের ব্যবসা করেন গাজীরুল ইসলাম৷ দুপুরবেলা পর্যন্ত এ দিন তাঁর বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৭’শ টাকার একটি কম্বল৷ তাও তার কেনা দামের থেকে ৩০০ টাকা কম৷ লাভ তো দূরের কথা সংসার চালাতে এখন পুঁজি টুকুনিই ভরসা৷
-
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই যখন ভরসা
ঢাকার নবাবপুর থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ফিরছেন এক গাড়ি চালক ও তাঁর সহকারী৷ টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে নিজেদের গাড়িতে এখন থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখবেন তাঁরা৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন/ডিজি
ফেসবুক পাঠক অমি মুসাফির জানিয়েছেন ফেসবুকে, ‘‘যারা নাশকতার উপর জিকির করে তারাই নাশকতা করে৷ বিএনপিকে সিটি নির্বাচনে সুযোগ দিলে আর কারো ভোট পাওয়ার সম্ভাবনাই নাই৷''
নাসির উদ্দিন সাধারণ জনগণের কথাই বলেছেন৷ তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সবাই চাই দুইদল মিলেমিশে দেশের উন্নয়ন করুক৷''
শাওন কাউসারের ভাষায়, কেন বিএনপি এই কাজটা করে সেটাও দেখতে হবে৷
এসএম সাজু একমত প্রকাশ করেছেন৷
সাদিকুন শাকিলের মতে, বিএনপির আর নির্বাচনে আসা উচিত না৷
রাজু আহমেদের মতে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই৷
আবু হুমায়রা বলছেন, ‘‘সরকারের বিরুদ্ধে মতামত দেওয়া যাবেনা৷''
এ ব্যাপারে পাঠক সোহেল তানভিরও তাঁর সাথে একমত পোষণ করেন৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ যে বলেছেন ‘‘আমরাও চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক৷ বিএনপিকে নাশকতা বন্ধ করতে হবে৷ নাশকতা করলে পুলিশ ধরবে, মামলা হবে এটাইতো স্বাভাবিক৷'' মো.জিয়া এবং নিশিতা জুলি এই মন্তব্যের সাথে একমত নন৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন