নারী অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে ‘গুলাবি গ্যাং’
২৪ জুলাই ২০১০ভারতের অনেক জনগোষ্ঠী নিজেদের অধিকার অর্জনে লড়াই করছে৷ এগিয়ে আসছে ভারতের গ্রামীণ নারীরা৷ কণ্ঠে তাদের স্লোগান৷ গোলাপী গ্যাং-এর কাছে সাহায্যপ্রার্থীদের একজন কাইজার৷ তিনি বললেন, ‘‘আমার শাশুড়ি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, তিনি আমাকে আমার পারিবারিক অধিকার দিতে চান না৷ এরপরেই আমি ‘গোলাপী গ্যাং' এবং এই দলের নেতা সম্পত পালের দেখা পাই৷ এবং তিনি এখন আমাকে সাহায্য করছেন৷''
কুড়ি বছর বয়সী কাইজারকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন সম্পত পাল৷ ৪০ বছর বয়সের এই ছোটখাটো ভদ্রমহিলা যথেষ্ট ধৈর্যশীল৷ এই বয়সেই তিনি ‘গুলাবি গ্যাং'-এর নেতা৷ হিন্দিতে গুলাবি মানে গোলাপী৷ আর সংগঠনটির এই রকম নাম দেয়া হয়েছে সংগঠনের সবার গোলাপী শাড়ী ব্যবহারের কারণেই৷ কাইজারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের বাড়ির দরজার কড়া নাড়েন সম্পত পাল৷ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আরও পাঁচ জন নারী৷ সম্পত পাল সহ তাদের সবার পরনেই গোলাপী শাড়ি৷ সম্পত পাল বাইরে থেকেই চিৎকার করে বলতে থাকেন, বাড়ির ছেলের বউ কাইজার এবং তার সন্তানদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে৷ সম্পত পাল বললেন,‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমনই ঘটে৷ যখন তারা আমার কথা জানে, আমার কাছে আসে এবং আমিও চেষ্টা করি তাদেরকে সাহায্য করতে৷ তবে আমি দু'পক্ষের কথা না শুনে কাজ শুরু করি না৷'' ''
সম্পত পাল সেদিন উত্তর প্রদেশের বাওয়েরু গ্রামে এসেইছিলেন কাইজারের শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলার জন্যে৷ ভারতের গ্রামগুলোর বেশিরভাগ পরিবারেই এই রকম ঘটনা ঘটে৷ কাইজার এবং তার সন্তানেরা তার স্বামীর পরিবারেই বসবাস করত৷ কিন্তু কাইজারের স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার শ্বশুর-শাশুড়ি হতাশ হয়ে পড়ে এবং কাইজারকে নিয়মিত পেটাতে শুরু করে৷ তারপরে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়৷ কেন? কাইজারের স্বামী কি মারা গেছেন? নাকি তার পাশে দাঁড়ানোর মত শক্তিও তার স্বামীর নেই? কাইজারের নিজের কোন আয় নেই৷ কয়েক সপ্তাহ সে মানুষের কাছে চেয়ে ভিক্ষে করে খেয়েছে এবং তার তিন সন্তানকে খাইয়েছে৷
দরজায় কড়া নাড়ার কিছুক্ষণ পর, ঐ পরিবারেরই আরেকটি ছেলের বউ – নাম তার আনোয়ারি, সামান্য একটু ফাঁক করলো দরজাটি৷ আনোয়ারি বললেন, ‘‘এই মেয়েটির সঙ্গে কী সমস্যা, সত্যিই আমি তা জানিনা৷ আমার শাশুড়ি এবং তার ছেলেরা যদি তাকে বাড়িতে ফিরতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে আমি কী করতে পারি? যদি তিনি মনে করেন, এই পরিবারে তার কোন অধিকার নেই তাহলে তার কোন অধিকার নেই৷''
এই কথা শুনে চিৎকার করে ওঠেন সম্পত পাল৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর নারীদের বিরুদ্ধে প্রায় ২ লাখ অপরাধ সংগঠিত হয়৷ তবে হিসেবের বাইরে এর চেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়৷ ধর্ষণ, হত্যা সহ এমন অনেক অপরাধ এমনকি লিপিবদ্ধও করা হয় না৷
‘গোলাপী গ্যাং' তাদের কাজ শুরু করে, যখন ২০০৬ সালে কর্তৃপক্ষ একটি সড়ক মেরামত করার প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে রক্ষা করেনি৷ সেই সময় সম্পত পাল দেবী অন্য আরো কয়েকজন নারীর সঙ্গে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে অভিযোগ করেন৷ এই সময় তারা সবাই গোলাপী শাড়ী পরেছিলেন৷ কিন্তু জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহিলাদের কথার তেমন একটা গুরুত্ব দেননি – বরং তাদের অপমান করেন৷
সম্পত পাল দেবী জানালেন, ''আমি তার কলার চেপে ধরি এবং টেনে তাকে রাস্তায় নিয়ে আসি৷ তাকে বলি, তুমি জনগণের চাকর এবং জনগণ তোমার প্রভু৷ শুধুমাত্র জনগণই সরকার তৈরি করতে পারে, এবং সরকার জনগণ তৈরি করতে পারে না৷ এই সময় রাস্তার লোকজন আমাদের দেখে যে আমি তার কলার ধরে ঝাঁকাচ্ছি৷ ঠিক তখনই সবাই আমাদের গুলাবি গ্যাং বলে সম্বোধন করে এবং তখন থেকেই আমাদের ডাকা হয় গুলাবি গ্যাং বলে৷''
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন