1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীদের মধ্যে অন্য ধর্ম গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১

‘ফেথ ম্যাটার্স’ একটি ব্রিটিশ সংস্থা৷ এই সংস্থাটি সম্প্রতি একটি জরিপে জানিয়েছে, ব্রিটেনে গত দশ বছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছে৷ তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা এবং তারা মূলত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে৷

https://p.dw.com/p/10KL9
ফাইল ফটোছবি: AP

ইসলাম ধর্মের প্রতি টান

ব্রিটেনে শ্বেতাঙ্গরা, বিশেষ করে মেয়েরা খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে৷ ফলে রক্ষণশীল ব্রিটিশরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে৷ ইসলাম ধর্ম নিয়ে কাজ করছে ‘ফেথ ম্যাটার্স' নামক সংস্থা৷ সেই সংস্থা একটি জরিপে জানিয়েছে, গত ১০ বছরে ব্রিটেনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং এদের প্রায় সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে৷ জরিপে জানানো হয়, যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের কারো বয়সই ২৭-এর বেশি নয়৷ এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা প্রায় ৬২ শতাংশ৷

ফ্রাঞ্চেসকা ডিগম্যান কেন্টের মেয়ে৷ সেখানে বড় হয়েছেন৷ পড়াশোনা করছেন লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখান থেকে সম্প্রতি তিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমি বিশেষ কোন ধর্মের সন্ধান করছিলাম না৷ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেও বিশেষ কোন ধারণা আমার ছিল না৷ আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পরিচিত হই বেশ কিছু মুসলমান ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে৷ তখনই প্রথম আমি জানতে পারি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে, ধর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে৷ সবাই যেভাবে কথা বলে, আরেকজনের সঙ্গে মেশে, তা দেখে আমি অভিভূত হই৷ বিশেষ করে ছেলেরা অত্যন্ত অমায়িক এবং তারা মেয়েদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে৷''

আকর্ষণের কারণ

কীভাবে ফ্রাঞ্চেসকা ইসলাম ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়লেন? তিনি বলেন, এসব দেখে তিনি আগ্রহী হন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আরো কিছু জানতে৷ যত গভীরে তিনি যেতে থাকেন, ততই তিনি মুগ্ধ হতে থাকেন৷ ধর্ম কী বলছে, সৃষ্টিকর্তা কে, তিনি কী বলেছেন, কীভাবে এবং কেন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন – ইসলাম ধর্মের এসব বিশ্বাস প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করে ফ্রাঞ্চেসকাকে৷ ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রাঞ্চেসকা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷

ফেথ ম্যাটার্স-এর জরিপ অনুযায়ী ব্রিটেনে গত বছর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে৷ ইসলাম ধর্ম নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সবসময়ই সমালোচনায় মুখরিত৷ সমালোচকরা চিন্তিত এই ভেবে যে – বর্তমানে যেখানে ইসলাম ধর্মকে ঘিরে এত বিতর্ক চলছে, তার মধ্যে কীভাবে এই ধর্মের প্রতি এত আগ্রহী হওয়া যায়?

তথ্য সংগ্রহের সমস্যা

ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞরা জানান, যে সব সংখ্যা তাদের কাছে হাজির করা হচ্ছে তাতে তারা বিস্মিত৷ তাদের তথ্যের মূল উৎস হল লন্ডনের মসজিদগুলো৷ মসজিদগুলো সবচেয়ে ভাল খবর রাখে এসব বিষয়ে৷ বাতুল আল তোমা আয়ারল্যান্ডের মেয়ে৷ তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে একটি প্রকল্পে কাজ করছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা লেস্টারে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি৷ আমরা জানতে পেরেছি যে মসজিদগুলো সব মুসলমানদের সংখ্যা নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ করে না৷ যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে অথচ মসজিদে যায়নি তাদের কথা কোন মসজিদই জানে না৷ এসব মুসলমানদের ‘শাহদাহ' সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়নি৷ তাই আমাদের কাজের সঙ্গে মসজিদের দেওয়া তথ্যের পার্থক্য অনেক বেশি৷ অনেক কিছুই বাদ গেছে মসজিদের তালিকা থেকে৷''

সমাজের প্রতিক্রিয়া

তবে বাতুল আল তোমা জানান, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে অনেক বেশি মানুষ এবং তাদের বেশির ভাগই মহিলা৷ আগে দেখা যেত, বিবাহিত মহিলারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে কারণ স্বামী মুসলমান৷ অথচ এখন অবিবাহিত মেয়েরাই এগিয়ে আসছে৷ নির্ভরতার কারণে নয় – আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই, সচেতনভাবে তারা গ্রহণ করছে ইসলাম ধর্মকে৷

তবে যে সব মেয়েরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তারা তাদের পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সরে গেছে অনেক অনেক দূরে৷ ফ্রাঞ্চেসকার বাবা-মা এখনও মেনে নেননি নিজের মেয়ের এই পরিবর্তন৷ ফ্রাঞ্চেসকা বললেন, ‘‘আমার পরিবার পুরো বিষয়টি অত্যন্ত খারাপভাবে দেখেছে৷ এখনো তারা স্বাভাবিকভাবে আমার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি৷ তারা এখনো কথায় কথায় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন৷ তবে যে কোন পরিবারের জন্যই তা মেনে নেওয়া কঠিন৷ একটি বিশেষ রীতি-নীতিতে যখন সন্তানদের বড় করা হয়, তখন হঠাৎ করে যদি কোন সন্তান নিজে গুরুত্বপূর্ন কোন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বাবা-মায়েরা অত্যন্ত ভেঙে পড়েন৷ তারা ভীত হয়ে পড়েন, মেনে নিতে পারেন না৷ সবসময়ই নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে তারা কথা বলেন৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন