নান আর টিক্কা, টিকে থাকবে তো লন্ডনে?
১৯ জুলাই ২০১০ক্যাফে নাজ৷ ইস্ট লন্ডনের ব্রিক লেনের একটি রেস্তোরাঁ৷ মালিক বাংলাদেশি, নাম মুকিম আহমেদ৷ ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি আছেন লন্ডনে৷ ব্যবসা ভালোই চলছিলো, তবে এখন তিনি বেশ খেপে আছেন৷ কারণ যুক্তরাজ্য সরকারের অভিবাসন আইনের কড়াকড়ি৷ শুধু ইস্ট লন্ডনেই কারি হাউস আছে শতাধিক৷ এর বেশিরভাগ বাবুর্চিই বাংলাদেশি৷ ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, অভিবাসন আইনের কড়াকড়িতে এই বাবুর্চির স্রোত বন্ধ হয়ে গেলে অনেককেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে৷ তাহলে নান রুটি আর টিক্কা কাবাবের যে ঝাঁঝে ব্রিটিশরাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো, তার কী হবে?
দক্ষিণ এশিয়ার এই খাবার ব্রিটেনে এসেছে আজ থেকে ২০০ বছর আগে৷ ১৮১০ সালে লন্ডনে রেস্তোরাঁ খোলেন ভারতের শেখ দীন মোহাম্মদ৷ তাঁর মসলাদার সব খাবার জিভে জল আনে ব্রিটিশদেরও৷ এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রেস্তোরাঁর সংখ্যা৷ অনেক রাত পর্যন্ত এসব রেস্তোরাঁ খোলা থাকে বলে অনেকেই ঢুঁ মারেন এগুলোতে৷ এখন এই সব ক্যাফে-রেস্তোরাঁর বেশিরভাগই বাংলাদেশিদের৷ তাঁদের আবার সমিতিও আছে৷ বাংলাদেশি কেটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রশীদ জানালেন, গোটা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি মালিকানার রেস্তোরাঁ আছে ১২ হাজার৷ আর এগুলোতে কাজ করে অন্তত এক লাখ লোক৷ যারা আবার এসেছে মূলত বাংলাদেশ থেকেই৷
ইংল্যান্ড অভিবাসন আইনে কড়াকড়ি আনছে মূলত তাঁদের বেকার সমস্যা নিরসনে৷ আগামী ১৯ জুলাই থেকে নতুন আইন সাময়িকভাবে কার্যকর হওয়ার কথা৷ আইনে কড়াকড়ির বিষয়ে অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ডেমিয়েন গ্রিন বলেন, ‘‘কারিহাউসগুলোতে বাবুর্চি ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে ব্রিটিশ এবং ইউরোপের দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে৷ কারণ বিদেশ থেকে কর্মী আনায় এখানকার বেকার এবং কম দক্ষতার লোকদের কর্মসংস্থানে সমস্যা হচ্ছে৷'' তিনি জানালেন, কারি হাউসগুলোর জন্য দক্ষ কর্মী তৈরিতে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এজন্য ভারত, বাংলাদেশ, চীন ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন নামি রেস্তোরাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে৷ যারা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে৷
তবে ব্রিটিশ সরকারের এই পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট রেস্তোরাঁগুলোর মালিকরা৷ তাঁরা বলছেন, এখান থেকে দক্ষ বাবুর্চি পাওয়া মুশকিল৷ এই জন্যই বাংলাদেশ থেকে আনতে হয়৷ আর শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই এই ধরনের বাবুর্চি তৈরি করা যাবে কি না, তা নিয়েও মালিকদের সংশয় রয়েছে৷ তাঁদের মতে, এর সঙ্গে সংস্কৃতিও যুক্ত৷ কেটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর বলেন, ‘‘রান্না শুধু শেখার বিষয় নয়, আনন্দের সঙ্গে তা করতে হয়৷ এটা শিল্পের ব্যাপারও৷ নতুন আইন আমাদের বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷'' বাংলাদেশি বাবুর্চি দেওয়ান তৌহিদ তো বলেই দিলেন, ‘‘কারি রান্না ব্রিটিশদের দিয়ে হবে না৷''
রেস্তোরাঁ ব্যবসা করেই প্রজন্ম পার করে দিচ্ছেন মুকিম আহমেদ৷ তবে তাঁর ছেলে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ছে৷ মুকিম জানালেন, ছেলে কিংবা এই প্রজন্ম আর এই ব্যবসা নিয়ে আগ্রহী নয়৷ তাই বাংলাদেশ থেকেই তাকে লোক আনতে হয়৷ আর অভিবাসন আইন কঠোর থাকলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা উঠিয়ে দেওয়ার আর বিকল্প থাকবে না৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক