নাইজিরিয়ার ঝকঝকে শহর কালাবার
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ক্রস নদীর তীরবর্তী কালাবারের বাসিন্দারা যথার্থই সগৌরবে নিজেদের শহরের নাম দিয়েছে ‘মানুষের স্বর্গ'৷ এখানকার মুক্ত বায়ুতে ভেসে আসে নানা ধরনের খাবারের সুবাস, ভাজা মাছের লোভনীয় গন্ধ৷ রাস্তাঘাট, ফুটপাথ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন৷ কোথাও গর্ত বা খাদ নজরে পড়েনা৷ ৩৯ বছর বয়স্ক এটোপ ওবোট বড় হয়েছেন কালাবারে৷ তাঁর মতে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাটা নির্ভর করে মানুষের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কের ওপর৷ তিনি বলেন, ‘‘এই শহরের সংস্কৃতির মধ্যেই জড়িয়ে রয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা৷ এক্ষেত্রে অর্থ নয়, মানুষের বোধশক্তিটাই আসল৷ রাস্তায় বা যেখানে সেখানে কেউ ময়লা ফেলবেনা এখানে৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যেন অনেকটা ঈশ্বরকে কাছে পাওয়ার মত৷ তাই শুধু সরকার নয় সবাই এব্যাপারে সচেতন৷''
কালাবারের মানুষরা এফিক সম্প্রদায়ভুক্ত৷ এই গোত্রের লোকজন পরিষ্কার থাকতে ভালবাসে এবং এজন্য যে কোনো ধরনের কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেনা তারা৷ গর্বের সঙ্গে গাড়ির নেমপ্লেট দেখান তারা৷ যেখানে লেখা রয়েছে: ‘মানুষের স্বর্গ'৷ তবে এই উপাধিটা টিকিয়ে রাখতে হলে বসে থাকলে চলবেনা৷ নগর উন্নয়ন দপ্তরের মুখপাত্র এলিগেন্স এডিম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শহরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বটা আমাদের৷ আমরা আবর্জনা পরিষ্কার করি, রাস্তাঘাট ঝাড় দেই, গাছপালার পরিচর্যা করি৷ আমার অধীনে এখন ২০০০ লোক কাজ করছে৷ তারা নিজ হাতে রাস্তা ঝাড় দেয়, আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে৷ শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘাস কেটে ছোট করে৷''
শহরটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে প্রায় ৯০ হাজার ইউরোর মত খরচ হয় মাসে৷ তবে অন্যান্য বড় শহরের মত কালাবারেও বর্জ্য ফেলার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থার অভাব রয়েছে৷ এলিগেন্স বলেন, ‘‘শহরের কেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আবর্জনার ফেলার একটি ভাগার রয়েছে আমাদের৷ নিত্যদিনের আবর্জনা জমিয়ে ফেলা হয় সেখানে৷ সরকার এখন বর্জ্য ফেলার জন্য আধুনিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে৷''
আগে কালাবারের কিন্তু এতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিলনা৷ এটোপ ওবোট জানান, ‘‘১৯৯৯ সালে নতুন সরকার আসার পর থেকেই কালাবারের চেহারাটা বদলেছে৷ তার আগে শহরটা আজকের মত পরিষ্কার ছিলনা৷''
১৯৯৯ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর চালু হয় বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা৷ নতুন সরকার দুর্নীতিদমন থেকে শুরু করে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়৷ কালাবার শহরেও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আইন কানুন তৈরি হয়৷ এলিগেন্স এডিন বলেন, ‘‘আমাদের রয়েছে কঠোর পরিবেশ আইন৷ কেউ যদি ইচ্ছা করে রাস্তায় ময়লা ফেলে, তা হলে তার কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে৷ আমাদের আবর্জনা আইনটা বলা যায় খুবই পরিবেশবান্ধব৷''
তা সত্ত্বেও কালাবারকে পুলিশের নগরী বলা যায়না৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে এখানকার বাসিন্দারাই পরস্পরকে সচেতন করে দেয়৷ কেউ যদি রাস্তায় আবর্জনা নিক্ষেপ করে তাহলে তাকে ভদ্রভাবে তা সরিয়ে ফেলতে বলা হয়৷ ফলে এই শহরটা শুধু যে দেখতেই পরিষ্কার তা নয়, এখানকার লোকজনের অসুখ বিসুখও হয় কম৷ নাইজিরিয়ার অন্যান্য শহরে যেখানে মাঝে মাঝেই কলেরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে কালাবারের মানুষ এ রোগটির কবল থেকে মুক্ত৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন