1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নজরুল হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিভূ ছিলেন!

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৫ এপ্রিল ২০১৭

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের হঠাৎ এত মাতামাতি কেন? সংঘের মতে, জন্মসূত্রে মুসলিম হলেও কবি নাকি মনে প্রাণে ছিলেন সত্যিকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিভূ৷

https://p.dw.com/p/2bssB
Indien Organisation Rashtriya Swayamsevak Sangh
ভারতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের একটি ব়্যালি (ফাইল ছবি)ছবি: picture-alliance/dpa

কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ভারতের জাতীয় জীবনে বিদ্রোহী কবি, তথা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবদানের গুণকীর্তন করতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ হঠাৎ এই ‘সুমতি’ কেন? বিজ্ঞজনদের কানে একটু খটকা তো লাগছেই৷ তাঁরা এরমধ্যে পাচ্ছেন অন্য গন্ধ৷ হ্যাঁ, বলা ভালো রাজনীতি৷

সংঘ পরিবার এবং অভিভাবক বিজেপির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অহি নকুল সম্পর্ক৷ উত্তর প্রদেশের পর রাজনৈতিক পরিসর প্রসারিত করতে বিজেপি এবং সংঘ পরিবার পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক জমি দখল করতে নতুন ছক কষছে৷ শুরু করেছে ব্যাপক গণসংযোগ৷ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এখন রাজ্যের দলিত পরিবারেও পাত পেড়ে বসে খাচ্ছেন৷ মনে হয়, চাইছেন কথিত অসহিষ্ণুতার ছাপ মুছে ফেলতে৷ তা সে রাম নবমির মিছিল হোক বা গেরুয়া পার্টির তাবড় তাবড় নেতাদের রাজ্যে ঘন ঘন আনাগোনা হোক৷

এতে প্রমাদ গুণছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ কখনও বলেন তিনিই আসল হিন্দু৷ বিজেপি নয়৷ সেখানেও প্রশ্ন সংখ্যাগুরু হিন্দু ভোট বাক্স যাতে হাতছাড়া না হয় সেই লক্ষ্যে? ভোটের জমি নিয়ে কাড়াকাড়ি ক্রমশই বাড়ছে৷ চলছে দোষারোপ আর পাল্টা দোষারোপের যুগলবন্দি৷ তৃণমূলের অভিযোগ, আরএসএস-বিজেপিরা রাজ্যে মুসলিমবিরোধী মানসিকতার বীজ ছড়াচ্ছে৷ অন্যদিকে সংঘ পরিবারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি রাজ্যে হিন্দুদের ওপর জেহাদিদের সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক প্রস্তাব পাশ করেছে৷ বলা হয়, জেহাদিদের রুখতে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার ব্যর্থ৷ ফলে জাতীয়তাবিরোধী শক্তিগুলির বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে৷ সংখ্যালঘু তোষণের নামে জেহাদিদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে৷ 

গৈরিক সংঘ পরিবার এবং পদ্ম পার্টি বিজেপি কি সংখ্যালঘু গন্ধ ঝেড়ে ফেলতে এখন কবি নজরুল ইসলামের স্তুতি গাইতে শুরু করেছে? নজরুলের উত্তরাধিকারের ভাগিদার হতে চাইছে? তাদের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে, কবি নজরুল জন্মসূত্রে মুসলিম হলেও মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন প্রকৃত হিন্দু৷ বলা হচ্ছে, নজরুলের রচনার ছত্রে ছত্রে আছে হিন্দু জাতীয়তাবাদেকে হাতিয়ার করে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক৷ বিদ্রোহের ডাক৷ তাই তিনি বিদ্রোহী কবি৷ হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কে তিনি এক সূত্রে বাঁধতে চেয়েছিলেন তাঁর রচনার মধ্য দিয়ে, জীবন-দর্শনের মধ্য দিয়ে, যা তিনি খুঁজে গেছেন আজীবন৷ তাই তিনি ভারতের জাতীয় জীবনে হিন্দু ভাবধারার এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি৷ কবির হিন্দুত্ববাদ ধর্মের নিরিখে নয়৷ তাঁর যাপিত জীবনশৈলীতে৷ ভারতীয় জাতি সত্তার প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই কবি৷ হিন্দু-মুসলিমের মিলিত দর্শনই তাঁর জীবন দর্শন৷

Kazi Nazrul Islam, Dichter, Bangladesch
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

আরএসএস বলছে, প্রচলিত ধর্মমতে নজরুল মুসলিম ছিলেন তো কী হয়েছে? প্রকৃত অর্থে তিনি নাকি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ হিন্দু৷ তাই নাকি তিনি লিখে গেছেন এবং সুর দিয়ে গেছেন শ্যামাসংগীত, আগমনি, ভজন, কীর্তন নিয়ে প্রায় ৫০০ হিন্দু ভক্তিগীতি৷ স্ত্রী হিন্দু৷ প্রমীলা দেবি৷ নিজের ছেলেদের নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী, কাজী অনিরুদ্ধ৷ সংঘ পরিবার আগামী ২৫শে মে কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গোটা পশ্চিমবঙ্গে কবি নজরুলের স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে৷ কবির রচনা সমগ্র বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু হয়েছে৷ তাঁর রচিত ৩৯টি কবিতার হিন্দি অনুবাদ সংকলন প্রকাশিত হবে এ বছরের শেষ নাগাদ৷

এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ আরএসএসের জেনারেল সেক্রেটারি যিষ্ণু বসুর কাছে ডয়চে ভেলের প্রশ্ন ছিল, ‘‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে হঠাৎ এত মাতামাতি কেন? আপনারা তো মুসলিমদের বিশেষ পছন্দ করেন না৷’’ উত্তরে আরএসএস নেতা ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ধারণাটা একেবারে ভুল৷ যাঁদের মনে নেই, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কবি নজরুল যখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন হিন্দু মহাসভার সর্বোচ্চ নেতা শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় কবির চিকিৎসা এবং যত্ন-পরিচর্যায় সব থেকে বেশি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন৷ বারংবার ছুটে ছুটে গেছেন কবিকে দেখতে৷ তাঁর স্বাস্থ্যের খবরাখবর নিতে৷ কবির চিকিৎসার জন্য বিশেষ তহবিল খুলেছিলেন কে? হ্যাঁ, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ কাজেই যাঁরা বলছেন হঠাৎ করে, তাঁদেরকে ইতিহাসটা আরেকবার পড়ে দেখতে বলি৷ সম্ভবত ভুলে গেছেন তাঁরা৷ আর সংখ্যালঘুদের সব থেকে বেশি দুরবস্থা এই রাজ্যে৷ এটা সাচার কমিটির রিপোর্টেই আছে৷ আমার আপনার কথা নয়. সংঘ পরিবার কল্যাণের প্রশ্নে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে কখনও ভেদ রাখেনি৷’’

উল্লেখ্য, এই জাতীয়তাবাদের জন্য ১৯২২ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার কবি নজরুলের বিরুদ্ধে জারি করেছিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা৷ নজরুল তখন বাংলা সাহিত্যের এক উদীয়মান জোতিষ্ক৷ ব্রিটিশ সরকারের অভিযোগ, নজরুলের আনন্দময়ীর আগমন কবিতায় নাকি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুর ছিল৷ কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল এর মাস দুয়েক আগে ধূমকেতু পত্রিকায়, যার সম্পাদক ছিলেন কবি স্বয়ং৷ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকে তিনি তুলনা করেছিলেন কষাইখানার সঙ্গে, যেখানে ঈশ্বরের সন্তানদের চাবুক মারা হয়৷ ফাঁসিতে ঝোলানো হয়৷ এই কথিত অপরাধে ১৯২৩ সালে কবিকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়৷ বিদ্রোহী রণক্লান্ত হয়েও তিনি ক্ষান্ত থাকেননি৷

প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনি কিছু বলতে চাইলে জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...