1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধরিত্রী বাঁচাতে এগিয়ে এলেন বিশিষ্টজনেরা

২৭ মে ২০১১

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্ববাসীকে, বিশেষ করে বিশ্ব নেতাদের শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করতে গত কয়েক বছর থেকে জোরেশোরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে স্টকহোম৷ তারই প্রেক্ষাপটে এমাসের ১৭ এবং ১৮ তারিখে সুইডেনে অনুষ্ঠিত হলো একটি বৈঠক৷

https://p.dw.com/p/11Ox2
মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশ ব্যবস্থা রক্ষা করতেছবি: picture alliance/Photoshot/BCI

১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম ধরিত্রী সম্মেলন৷ তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ সম্মেলন৷ জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক সেই সম্মেলন থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ও ঐকমত্যের জন্য এরইমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ তারই অংশ হিসেবে রয়াল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এবং জার্মানির পটসডাম ইন্সটিটিউট অফ ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ যৌথভাবে আয়োজন করল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বৈঠক৷ যে বৈঠকের সুপারিশমালা জাতিসংঘের ধরিত্রী সম্মেলনে তুলে ধরা হবে৷

স্টকহোমে ‘বিশ্বের স্থায়িত্বের জন্য হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্য' শীর্ষক ঐ বৈঠকে একটি স্মারকলিপিতে সই করলেন ২০ জন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীসহ ৫০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব৷ স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে যেমন আচেন রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মারিও মোলিনা এবং পল ক্রাৎসেন, তেমনি সাহিত্যে নোবেল পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান লেখিকা নাদিন গর্ডিমার৷ তারা সহমত প্রকাশ করলেন এই বলে যে বৈশ্বিক পরিবর্তনের অন্যতম চালক হল মানুষ৷ তাই মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশ ব্যবস্থা রক্ষা করতে৷

বাংলাদেশের সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর পরিচালক জি এম মুর্তুজা বললেন, ‘‘উন্নত দেশগুলো অতিরিক্ত কার্বন নি:সরণ ও বায়ু দূষন করার ফলে আজকের এই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলো বরাবরই বলে আসছে উন্নত দেশগুলোর কারণে এটা হয়েছে৷ এবং এর ক্ষতিপূরণ উন্নত দেশগুলোকেই দিতে হবে৷''

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুইডেনের প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়াও৷ তিনি আহ্বান জানালেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির মুখে থাকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘৯১১ কোড নম্বরে' সাড়া দিতে৷ সবচেয়ে জরুরি সেবার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে ৯১১'র এই কোড৷ এখন পরিবেশবিদরা ধরিত্রী বাঁচাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জরুরি ডাককে সেই ৯১১ কোড দিয়ে আখ্যায়িত করছেন৷

Unwetter auf Mallorca
বৈশ্বিক পরিবর্তনের অন্যতম চালক হল মানুষছবি: AP

১৭ মে'র বৈঠকে আয়োজন করা হয় ছদ্ম এক আদালত৷ সেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত বিচারক প্যানেলের সামনে মানবজাতিকে আসামি এবং ধরিত্রীকে বাদী হিসেবে হাজির করা হয়৷ ধরিত্রী এবং মানবজাতি নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে৷ এই আদালতের শুনানি এবং বিজ্ঞানীদের আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রকাশ করা হয় ‘স্টকহোম স্মারকলিপি'৷ যেখানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসেয়াসে নামিয়ে আনা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের সর্বোচ্চ মাত্রা ২০১৫ সালের মধ্যে কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷

জি এম মুর্তুজা বললেন, ‘‘বিশ্বের তাপমাত্রাকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার ব্যাপারটিতে তাঁরা যে গুরুত্ব আরোপ করেছে তা বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা৷ এই বিষয়টিতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ কাজ করে যাচ্ছে৷ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো আসলে চাচ্ছে যে, দুই ডিগ্রি নয়, কিয়োটো প্রটোকলের আলোকে কিভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ থেকে দেড় ডিগ্রি নামিয়ে আনা যায়৷ বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতে যাচ্ছে তারা এটি চাইছে৷ আমরা দেখেছি কোপেনহেগেন এবং কানকুনের সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এ বিষয়ে একমত হতে পারেননা৷ স্টকহোমের এ আলোচনার আলোকে বিশ্বনেতাদের মতামতকে মেনে নিয়ে যদি তাপমাতা ২ ডিগ্রি নামিয়ে আনতে পারি তা সবার জন্যই মঙ্গল হবে৷''

১৮ মে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয় জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের কাছে৷ ২০১২ সালের ধরিত্রী সম্মেলনের আলোচ্যসূচি তৈরি করছে জাতিসংঘ৷ সেখানে স্টকহোম বৈঠকের সুপারিশমালা কতটুকু প্রতিফলিত হয় এখন তাই দেখার বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

জি এম মুর্তুজা বললেন, ‘‘কোপেনহেগেন ও কানকুনসহ বেশ কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনে আমার উপস্থিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে৷ প্রথম থেকে যে জিনিসটি দেখা যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর বিশাল একটি মতপার্থক্য৷ উন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ এ ব্যাপারে এক জায়গায় হতে না পারার কারণে এইসব সম্মেলন ততটা সফল হচ্ছেনা এছাড়া দেখা যায়, আমরা এ বিষয়টিকে নিয়ে শুধু আলোচনা করি৷ কিন্তু সেসব আলোচনা থেকে এখনও আমরা সফলতার মুখ দেখতে পাইনি৷ এটা আমাদের জন্য খুবই আশাহত হবার মত একটি বিষয়৷''

প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক