দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ বাড়ল
৫ এপ্রিল ২০১৪বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনটি যে ভালো নয় তা সব আমলের সরকারই জানে৷ ভালো হলে আইনটি স্থায়ী হত, মেয়াদ ভিত্তিক হত না৷
‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন'-এর মেয়াদ আরো ৫ বছর বাড়ানো হয় গত বৃহস্পতিবার৷ আইনটি আরো ৫ বছরের জন্য সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়৷ এর আগে গত ৩০ মার্চ বিলটি সংসদে তোলা হয়৷ তখন বিলটি দুই দিনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়৷ কমিটি মঙ্গলবার সংসদে বিলটির ওপর প্রতিবেদন দেয়৷
ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ত্রাস সৃষ্টির অপরাধগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা, এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ এবং আইনের তদন্তাধীন ও বিচারাধীন ১ হাজার ৭০৩টি মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে৷
কিন্তু মানবাধিকার নেত্রী এ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনটি ২০০২ সালে বিএনপির আমলে করাই হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে৷ আওয়ামী লীগ তখন এই আইনের বিরোধিতা করলেও পরে তারা কয়েক দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়িয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘যেসব অপরাধের কথা এই আইনে বলা হয়েছে প্রচলিত আইনেই সেসব অপরাধের বিচারের বিধান আছে৷ এই আইনটি প্রয়োগ অনেকাংশেই পুলিশের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে৷ তাই সব সময়ই দেখা গেছে যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য এই আইনটি ব্যবহার করেন৷'' এবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে তিনি মনে করেন না৷
এ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘এটিই একমাত্র আইন যা স্থায়ী নয়৷ সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী মেয়াদ বাড়ায়৷ আইনটি সবার জন্য ভাল হলে এটাকে স্থায়ী আইন করা হত৷ এ থেকেই আইনটির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্দেশ্য বোঝা যায়৷'' তিনি বলেন, ‘‘মানবাধিকার বিরোধী এই আইন বাতিল করা উচিত৷''
এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক এবং মানবাধিকার নেতা নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৫ বছর, সরকারের মেয়াদও ৫ বছর৷ এটা আমার কাছে কাকতালীয় মনে হয় না৷'' তিনি বলেন, ‘‘এই আইনটি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা আরো বাড়াবে৷ আর সরকার যেখানে বলছে আইন-শৃঙ্খলা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেখানে নতুন করে এই আইনের মেয়াদ বাড়ানোর ভালো কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে আমার মনে হয় না৷''
বিএনপির শাসনামলে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইনটি সংসদে পাস হয়৷ এরপর প্রত্যেক সরকারই মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে৷ এর আগে ২০১২ সালে ২ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল৷ সেই হিসাবে ৭ এপ্রিল আইনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সংসদে বিল পাস হওয়ায় নতুন করে ৮ এপ্রিল থেকে সেটা কার্যকর হবে৷ ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকবে৷