1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেহে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে হামবুর্গে

৫ এপ্রিল ২০১১

বেশ কিছু জার্মান নাগরিক ফুকুশিমার বিপর্যয়ের সময় জাপানে ছিলেন৷ তারা জার্মানিতে ফিরে আসার পরপরই তাদের দেহ পরীক্ষা শুরু করে হামবুর্গের দুটি হাসপাতাল৷

https://p.dw.com/p/10nXz
ছবি: AP

জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু চুল্লিতে বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয়তা কতদূর ছড়িয়ে পড়েছে তার পুরো মাত্রা এখনো জানা যায়নি৷ তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু দেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷

চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জামে একটি কক্ষে সাজানো এবং বিভিন্ন কম্পিউটার রিডিং ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে৷ হামবুর্গ মেডিক্যাল সেন্টারের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের বেসমেন্টে সবকিছু গুছিয়ে রাখা৷ সাধারণত এই কক্ষে হাসপাতালে কর্মরতদের চিকিৎসা করা হয়, দেহ বা মস্তিষ্ক স্ক্রিনিং করা হয়৷ তবে জাপানের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর যে সব জার্মান নাগরিক জাপান থেকে ফিরে এসেছেন তাদের চেক-আপ বা চিকিৎসার জন্য কক্ষটি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ উভে কির্শনার ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারে কাজ করছেন৷ তিনি জানালেন তারা কীভাবে পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷

কির্শনার বললেন,‘‘এই বাক্সে বেশ কিছু সরঞ্জাম রয়েছে৷ একটি সীসার টিউবও আছে৷ কারো দেহে অস্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তার অস্তিত্ব আছে কিনা, না তা জানতে এই টিউবটি তার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কাছে ধরা হয়৷''

থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে জমা হয় আয়োডিন-১৩১

মেশিনের সামনে বসে গলা খুব কাছে আনতে হবে, যাতে করে টিউবটি সরাসরি গ্ল্যান্ডের মুখোমুখি হতে পারে৷ দেড় মিনিট এভাবে বসে থাকতে হবে৷ এর কিছুক্ষণ পরই ফলাফল বেরিয়ে আসবে৷ ছোট একটি মনিটরে ফলাফল দেখা যাবে৷ তবে শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকই তা বুঝিয়ে বলতে পারবেন৷ কির্শনার আরো জানান,‘‘কার দেহে তেজস্ক্রিয়তার চিহ্ন নেই, তা আমরা সহজেই বলতে পারি৷ তেজস্ক্রিয়তার প্রথম লক্ষণ হল আয়োডিন-১৩১৷ এর অস্তিত্বের চিহ্ন সঙ্গে সঙ্গে পর্দায় দেখা যাবে৷ মনিটরের পর্দায় এর চিহ্ন না পাওয়ার অর্থ হল, মানুষটি সুস্থ৷''

Japan Erdbeben Maßnahmen
হামবুর্গ শহর থেকে খাবার বিশুদ্ধ পানি পাঠানো হচ্ছে জাপানেছবি: dapd

আয়োডিন-১৩১ হচ্ছে তেজস্ক্রিয়তার অন্যতম একটি উপাদান৷ যে কোন পরমাণু বিস্ফোরণে এই উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে সবচেয়ে বেশি৷ এই উপাদানটি মানবদেহে প্রবেশ করে জমা হতে থাকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে৷ গ্ল্যান্ডে আয়োডিন-১৩১ পাওয়ার অর্থ হল, মানুষটির দেহে তেজস্ক্রিয়তার অস্তিত্ব রয়েছে৷ জাপান ফেরত যাদের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তাদের কারো গ্ল্যান্ডেই আয়োডিন-১৩১ পাওয়া যায়নি৷ যদি পাওয়া যেত, তাহলে কী করা হত? উভে কির্শনার বললেন পরবর্তী পদক্ষেপের কথা, ‘‘আমরা এই পরীক্ষার পর বলতে সক্ষম হবো কারো শরীরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কতটুকু৷ তখন আমাদের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বিশেষজ্ঞরা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন৷ কী করতে হবে বা কী করা উচিত, তা তারাই জানাবেন৷ আর কারো শরীরে যদি খুব বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়, তাহলে তার পুরো শরীর পরীক্ষা করা জরুরি৷ তখন তাকে পাঠানো হবে বিশেষ একটি হাসপাতালে৷''

জার্মানি সাহায্য পাঠাচ্ছে জাপানে

জাপানের ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয় এবং তার প্রভাব হামবুর্গ শহর পর্যন্ত পৌঁছাবে না বলে হামবুর্গ শহর কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস৷ কিন্তু এরপরও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ বিনামূল্যে হাসপাতালে দেহ পরীক্ষার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে আয়োডিন ট্যাবলেট বিতরণ করছে৷ বিশেষ করে যেসব নাবিক শীঘ্র জাপানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে, তাদের দেওয়া হচ্ছে এই ওষুধ৷ হামবুর্গ শহর থেকে খাবার বিশুদ্ধ পানি, কম্বল এবং মোবাইল টয়লেটও পাঠানো হচ্ছে জাপানে৷

জাপানও বসে নেই৷ মানুষদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ বাতাসের সাহায্যে তেজস্ক্রিয়তা এগিয়ে যাচ্ছে রাজধানী টোকিওর দিকে৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওটো কান সাধারণ মানুষদের অনুরোধ করেছেন, টোকিওর উত্তরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত কেউ যেন বাইরে না বের হয়৷ তারা যেন বাড়িতেই থাকে৷

ব্রিটেনের ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা আয়ান হোর-লেসি জানালেন জাপান সরকারের পক্ষ থেকে কোন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ হোর-লেসি জানালেন,‘‘প্রথমেই যা করা হয়েছে, তা হল নিরাপদ দূরত্বে মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ এই বৃত্তের মধ্যে যেসব মানুষ রয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে৷ তাদের আয়োডিন ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে৷ আমি জানি না, ঠিক কত মানুষের হাতে এই ওষুধ পৌঁছেছে৷ তবে যাদের দেহে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে, তারা অন্তত একটি ক্ষতিকারক উপাদান থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে৷''

আয়োডিন ট্যাবলেটে পটাসিয়াম আয়োডাইডের উপাদান রয়েছে৷ এই ট্যাবলেট তেজস্ক্রিয়তা এবং ক্যান্সারের হাত থেকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে রক্ষা করবে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন